মহাশূন্যে মৃত্যু হলে দেহের কী সদগতি হবে, জানাল নাসা।
মহাকাশে কিংবা মহাশূন্যে কোনও মহাকাশচারীর মৃত্যু হলে তার দেহের কী সদগতি হবে, সে ব্যাপারে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। নাসা জানিয়েছে, যদি স্পেস স্টেশনে কোনও মহাকাশচারীর মৃত্যু হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ স্পেস স্টেশনের বিশেষ ক্যাপসুলে চাপিয়ে মরদেহ দ্রুত পৃথিবীতে পাঠানো হবে। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন যেহেতু পৃথিবীর কক্ষপথে, তাই সেখান থেকে পৃথিবীতে দেহ নিয়ে আসার পদ্ধতি অতটা কঠিন নয়। তবে সমস্যা তৈরি হয় যদি মহাকাশচারীরা মহাশূন্যে থাকেন অথবা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ কাটিয়ে একেবারে বাইরে চলে যান। তবে চাঁদ বা মঙ্গলের মতো গ্রহ- উপগ্রহে মহাকাশচারীর মৃত্যু হলে তখন দেহ ফেরত পাঠানো খুব কঠিন।চাঁদ থেকে পৃথিবীতে মরদেহ ফেরাতে যত সময় লাগবে, মঙ্গল থেকে সময় লাগবে আরও বেশি। চাঁদ থেকে যদি কয়েক মাস লাগে, মঙ্গল থেকে ফিরতে কয়েক বছর লেগে যাবে। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর মতো অত দ্রুত ‘ লিভর মর্টিস’ হয় না চাঁদ বা মঙ্গলে। পৃথিবীতে মাধ্যাকর্ষণের টান প্রবল।তাই মৃত্যু হলে রক্ত শরীরের এক জায়গায় জমতে থাকে, একে বলে লিভর মর্টিস। এর পরে অ্যালগর মর্টিস বা শরীর ঠান্ডা হতে থাকে কারণ রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। শরীরের এনজাইম, প্রোটিনগুলি বেরিয়ে ভাঙতে থাকে। শক্ত হতে থাকে পেশি যাকে বলে লিভর মর্টিস। তখন ধীরে ধীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ শুরু হয়। এই ব্যাকটেরিয়ারা শরীরের কোষ-কলা খেতে শুরু করে, তখন পচন ধরতে থাকে, দুর্গন্ধ বের হয়। মৃতদেহ বেশিক্ষণ ফেলে রাখলে তাতে পচন ধরে ফুলতে শুরু করে। কিন্তু চাঁদ বা মঙ্গলের অভিকর্ষজ টান পৃথিবীর মতো নয়। তাই সেখানে গিয়ে যদি মৃত্যু হয় তাহলে লিভর মর্টিস প্রক্রিয়া অত দ্রুত শুরু হবে না। লিভর মর্টিসে রক্ত এক জায়গায় জমাট বাঁধবে না।ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ হবে না, ফলে পচন ধরবে না অত সহজে। নাসা বলছে, চাঁদ বা মঙ্গলে যাওয়ার পথে যদি কারও মৃত্যু হয় তাহলে এর জন্য স্পেশালাইজড বডি ব্যাগ আছে যেখানে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত। সেখানে দেহ রাখলে পচন ধরবে না। কিন্তু যদি চাঁদে পা রাখার পরে মৃত্যু হয় বা অন্য কোনও গ্রহ যার দূরত্ব পৃথিবী থেকে অনেক বেশি, সেখানে মৃত্যু হলে দেহ সংরক্ষণ করে পৃথিবীতে নিয়ে আসার উপায় নেই। মহাশূন্যেই সমাধি হবে সেই মরদেহের। এখনও পর্যন্ত মহাকাশ অভিযানে যেতে গিয়ে ২০ জন নভশ্চরের মৃত্যু হয়েছে।