দিল্লী নিয়ে দরবার

 দিল্লী নিয়ে দরবার
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দিল্লী সার্ভিসেস বিল আপাতত পাস করিয়ে নিল কেন্দ্র। এর ফলে দিল্লীর প্রশাসনিক ক্ষমতা অনেকটাই কেন্দ্রের হাতে চলে যাবে। এ নিয়ে জোর আপত্তি ছিল দিল্লীর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। গত প্রায় কয়েক মাস ধরে এ নিয়ে জোর রাজনৈতিক তরজা চলে। প্রথমে এটি সীমাবদ্ধ ছিল আম আদমি পার্টি এবং বিজেপির মধ্যে। কিন্তু বর্তমানে তা ২৬ জনের জোট ইন্ডিয়া বনাম এনডিএর মধ্যে হয়ে যায়। সম্প্রতি এই বিল নিয়ে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় চর্চা হয়। পরে ভোটাভুটিও হয় এবং এতে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি লোকসভা এবং রাজ্যসভায় ধ্বনিভোটে তা পাস করিয়ে নেয়। দিল্লী সার্ভিসেস বিলের আগে কেন্দ্র এ নিয়ে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে মে মাসে। এরপর থেকেই এ নিয়ে হৈচৈ শুরু করে আম আদমি পার্টি।কি এই দিল্লী সার্ভিসেস বিল। দিল্লীর প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ কেন্দ্রের কাছে নিয়ে নেওয়া। দিল্লীর বিভিন্ন আমলা, আধিকারিকদের পোস্টিং, কাজকর্ম এবার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার করাবে। বিরোধীদের বক্তব্য হচ্ছে, গত ২৫ বছর ধরে দিল্লীতে ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে রয়েছে বিজেপি। তাই জোর করে দিল্লীর কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে নিতে কেন্দ্র প্রথমে এই অর্ডিন্যান্স নিয়ে আসে এবং বর্তমানে অর্ডিন্যান্সকে বিল আকারে পাস করিয়ে নিয়ে দিল্লীর প্রশাসনিক ক্ষমতা কেজরিওয়ালের কাছ থেকে কেন্দ্রের কাছে নিয়ে নেওয়ার জন্যই বিজেপি এই কৌশল নিয়েছে।যদিও বর্তমানে এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঝুলছে। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের বিবেচনাধীন রয়েছে বিষয়টি। এর আগেই অবশ্য তড়িঘড়ি বিল পাস করিয়ে নেয় কেন্দ্র।এ নিয়ে রাজনীতিও বেশ জমে উঠেছে। প্রথমে এটি অরবিন্দ কেজরিওয়াল বনাম কেন্দ্রের লড়াই হলেও বর্তমানে এতে শামিল হয়েছে ২৬টি বিরোধী জোট। রাজ্যসভা এবং লোকসভায় এ বিলের উপর ভোটভুটিতে অংশ নেবার মধ্য দিয়ে বিরোধী জোটের মধ্যে ঐক্যের ভাব দেখা গেছে। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলটি উভয় সভাতেই পেশ করে বিরোধী ঐক্যকে ভাঙতে কোনও কসুর বাকি রাখেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, দিল্লী সার্ভিসেস বিলের দিকে কারও লক্ষ্য নেই।শুধু বিরোধী জোটের বাধ্যবাধকতার জন্যই এই বিলকে সমর্থন জানিয়েছে বিরোধীরা। বিরোধীদের বক্তব্য ছিল এই বিল উত্থাপন করে অমিত শাহ নেহরুবাদী হয়ে গিয়েছেন। যে আদবানি, বাজপেয়ী, মদনলাল খুরানা, সুষমা স্বরাজরা দিল্লীকে পূর্ণরাজ্যের মর্যাদার দাবি রেখেছিলেন সেই দাবির কী হল ? যদিও দিল্লী সার্ভিসেস বিলে শাসকদলের কাছে বলার বিশেষ কিছু ছিল না। এটা পুরোটাই ছিল রাজনৈতিক। দিল্লীর প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করাই ছিল শাসকের উদ্দেশ্য।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্যের মুখ্য প্রতিপাদ্য ছিল, সংসদে ভোটাভুটিতে হারার পর ফের আপ ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু রাজ্যসভায় যেভাবে একজোট হয়ে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট লড়াই করল তাতে বোঝা যাচ্ছে এবার আপের সাথে লড়াইয়ে সবাই পাশে রয়েছে।এটা শুধু আপের লড়াই নয়।শেষ সময়ে রাজ্যসভায় বিপদ বুঝে বিজেপি ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং বিজেডির দিকে ঝুঁকেছিল। ২ দলই শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে রাজ্যসভায় মর্থন দেয় এবং এর জেরেই শেষপর্যন্ত দিল্লী সার্ভিসেস বিলে জয় পায় বিজেপি। যদিও আপ নেতা রাঘব চাড্ডা বিজেডি এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে জানিয়ে রেখেছেন, ভবিষ্যতে আপনাদের ঘরে আগুন লাগলে আমাদের পাবেন আপনারা। আজ আপনারা আমাদের পাশে নেই ঠিক,কিন্তু আপনাদের ঘরে আগুন লাগতে পারে। সেই আগুন লাগাতে পারে বিজপি স্বয়ং। কারণ বিজেপিকে ভরসা নেই। বিশ্বাস নেই। পাল্টা এনডিএর অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করতে কোনও কসুর বাকি রাখেনি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটও। সুতরাং দিল্লী সার্ভিসেস বিল নিয়ে বিরোধী জোটের ঐক্যের চেহারা ফের প্রকট হলো এবং এতে কার কী লাভ হলো তা সময়ই বলবে।কেননা, দিল্লী সার্ভিসেস বিল নিয়ে বিজেপি শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশেই ফায়দা তোলার চেষ্টা করল এবং আপাতত সংখ্যাধিক্যের জেরে বিজেপি তাতে
সফল হলেও ভবিষ্যতের লক্ষ্যে অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রে যে এমনটা হবে ক বলতে পারে। কথায় আছে, কাচের ঘরে ঢিল ছুড়লে নিজেকেও কেল খেতে হয় অনেক সময়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.