মুক্তহস্তে পুলিশ
পুলিশকে মুক্তহস্ত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুক্তহস্ত অর্থাৎ ফ্রি হ্যান্ড। মানে অপরাধ দমনে পুলিশ তার আইন অনুযায়ী কাজ করবে। তাকে কোনও চাপের কাছে মাথা নত করতে হবে না। মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ করে মাফিয়া দমনে রাজ্য পুলিশকে এই বার্তা দিয়েছেন পুলিশের এক পর্যালোচনা সভায়। পর্যালোচনা সভাশেষে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন যে, পুলিশকে কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে মাফিয়া, ড্রাগ কারবারি, সিন্ডিকেট, কাটমানি, তোলাবাজ এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী নিজে পুলিশমন্ত্রী। অর্থাৎ পুলিশ তার অধীনে। সুতরাং পুলিশকে তিনি নির্দেশ দেবেন এতে অস্বাভাবিকতা কিছু নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে মুখ্যমন্ত্রী মাফিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন কেন ? আর কেনই বা এই যুদ্ধে তিনি তার পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিলেন। নিশ্চয় কারণ রয়েছে।মাফিয়া শব্দটি এ রাজ্যে আমদানি হয়েছে খুব বেশি হলে দুইদশক হবে। বিশেষ করে বাম আমলের শেষ দশ বছর ধরে এই মাফিয়া শব্দটির রাজ্যে আমদানি ঘটেছিল। বিশেষ করে জমি মাফিয়া, নিগোসিয়েশন মাফিয়া, ফেন্সি মাফিয়া, ড্রাগ মাফিয়া ইত্যাদি শব্দগুলিই জনমুখে বেশি করে ধ্বনিত হচ্ছিল। বাম আমল এখন ইতিহাস। ২০১৮ সালের পর রাজ্যে বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায়। মানুষের অভিজ্ঞতা কি ? মাফিয়াগিরি কী কমেছে? এক কথায় উত্তর না। বরং বড়েছে এবং উত্তরোত্তর তা বেড়েই চলেছে। মাফিয়াদের কাজ কি ?ভয় দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে তোলা আদায়। যেমন কোনও লাকায় জমি কিনতে গেলে মাফিয়াদের প্রণামি দিতে হবে। যিনি মি বিক্রি করবেন তাকে প্রণামি দিতে হবে। যিনি জমি কিনবেন কেও প্রণামি দিতে হবে। কাকে দিতে হবে। এলাকার মাফিয়াকে,মানে দাদাকে।এই দাদা বেশিরভাগই স্বঘোষিত।তবে দাদা তো একা ই কাজ করবেন না। তাকে কিছু শিষ্যসামন্ত নিয়ে চলতে হয়। দেরও ওই স্বঘোষিত দাদাও কিছু দিয়ে থাকেন। এভাবেই গজিয়ে উঠে মাফিয়া চক্র। পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, এলাকায় এলাকায়। উদ্দেশ্য একটাই অর্থ আদায়। সাধারণ মানুষ ভয়ে এদের বিরুদ্ধে মুখ খোলতে সাহস পান না। কেন? এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার সব আমলেই এদের উপর রাজনৈতিক প্রভুদের হাত থাকে। সে জন্যই সব আমলেই মাফিয়ারাজ, তোলাবাজদের বাড়বাড়ন্ত। আর রইল যারা ব্যবস্থা নেবেন অর্থাৎ পুলিশ। তারা কি করবেন। তারা তো রাজনৈতিক প্রভুদের দিকে শুধু চেয়ে থাকেন। সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া তো দূর, মাফিয়ারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়, এলাকায়।সুতরাং এই মাফিয়া তোলাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কে?দেরিতে হলেও মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে মাফিয়া, তোলাবাজ, সিন্ডিকেট রাজ, কাটমানি, ড্রাগ মাফিয়াদের বাড়বাড়ন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে গিয়েছে। তাদের কৃতকর্মের জন্য সরকারের, প্রশাসনের সর্বোপরি শাসকদলের মুখ পুড়ছে অনেকাংশে। সুতরাং কড়া হাতে তা দমন করতে হবে।
এ জন্যই তিনি পুলিশকে ডেকে বলেছেন যে মাফিয়াকে কড়া হাতে মোকাবিলা করতে হবে।এ জন্য তিনি পুলিশকে ফ্রি হ্যান্ড দিয়েছেন।অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে স্বাধীনভাবে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কাজ করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, মাফিয়া শব্দটি যেন আর শুনতে না হয় তাকে। মাফিয়া শব্দটি যেন রাজ্য থেকে উঠে যায়।সত্যি সত্যি মুখ্যমন্ত্রীর এই আপ্তবাক্য যদি পুলিশ প্রতিপালন করে তাহলে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখবে।কিন্তু পুলিশের পক্ষে তা পালন করা সত্যিই কঠিন কাজ। কেননা, পুলিশকে প্রতিনিয়তই নানা চাপের মুখে কাজ করতে হয়। কেননা, মাফিয়ারা যে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দাদার শরণাপন্ন হয়ে থাকেন তা সাধারণ মানুষমাত্রই জানেন। সুতরাং পুলিশকে মাফিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে কোনও চাপ আসবে না তো? মুখ্যমন্ত্রী তো বলে দিয়েছেন ঠিক আছে।কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ ফের কোনও চাপের কাছে মাথা নোয়াবে না তো। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতো পুলিশ যদি সত্যি সত্যি রাজ্যে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাহলে তা নি:সন্দেহে পুলিশের সাফল্যের টুপিতে পালক যোগ করবে। এবার দেখার ঠিকঠিকই পুলিশ ফ্রি হ্যান্ড পাচ্ছে কি না। নাকি সস্তায় প্রচার কুড়োনোর জন্যই মুখ্যমন্ত্রী এই বার্তা দিয়েছেন? সময়ই এর উত্তর দেবে। দেখার পুলিশের এই ফ্রি হ্যান্ড সাধারণ জনগণের কতটা কাজে আসে।