শাসকের মাথাব্যথা

 শাসকের মাথাব্যথা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতে, ছয় মাসের মধ্যে ফের নির্বাচনের দামামা বেজে উঠেছে। রাজ্যের দুইটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী পাঁচ সেপ্টেম্বর। গণনা হবে আগামী আট সেপ্টেম্বর। জাতীয় নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে এই অকাল ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতেই রাজ্যে রাজনৈতিক দলগুলির তৎপরতা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আপাতত প্রার্থী বাছাই করা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এই ক্ষেত্রে শাসক দলের মাথাব্যথা বেশি। এই নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। শুধু প্রার্থী বাছাই করা নিয়েই নয়, ক্ষমতায় থেকে দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জয় হাসিল করাটাও, আরও বেশি মাথাব্যথার কারণ। দল ক্ষমতায় থেকে উপভোটে জয়ী হতে না পারলে, সব দিকেই মুখ পুড়বে। তাছাড়া সামনে রয়েছে লোকসভা নির্বাচন।চিন্তাটা এই কারণেই বেশি।দুই কেন্দ্রের উপভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতির এখন পর্যন্ত যে হালচাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে উপভোটে রাজ্যে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের প্রতিফলন দেখা যেতে পারে। এই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আঞ্চলিক দল তিপ্ৰা মথাকে কৌশলী চালে ম্যানেজ করতে না পারলে, শাসক দল বিজেপির পক্ষে পুনরায় ধনপুর আসনে জয়ী হওয়া রীতিমতো কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এমনটাই অভিমত। সিপিএম সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের যে জনজাতি ভোট তিপ্ৰা মথায় চলে গিয়েছিল, উপভোটে সেই ভোট পুনরায় নিজেদের বাক্সে ফিরিয়ে আনতে ধনপুর কেন্দ্রে জনজাতি অংশের কাউকে প্রার্থী করতে পারে। তাই যদি হয়, তাহলে শাসকের চিন্তা এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই বাড়বে।
ধনপুর এবং বক্সনগর দুটোই বামদুর্গ বলে পরিচিত।ধনপুর কেন্দ্রে এবারই প্রথম সিপিআই(এম) প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজেপি প্রার্থী প্রতিমা ভৌমিক জয়ী হতে পেরেছেন। তাও জনজাতি ভোট ভাগ হওয়ার কারণে। তাছাড়া মানিক সরকার প্রার্থী ছিলেন না। মানিক সরকার ধনপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, ফলাফল অন্যরকম হলেও হতে পারতো। একই পরিস্থিতি বক্সনগরের ক্ষেত্রেও। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই বিধানসভা কেন্দ্রে ১৯৮৮ সালে একবারই কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। তিনি বিল্লাল মিয়া। সেই ইতিহাস এখন অতীত। এরপর থেকে বক্সনগরে আজ পর্যন্ত অন্য কোনও দল দাঁত ফোটাতে পারেনি। ২০১৮ প্রবল বামবিরোধী হাওয়াতেও বক্সনগর অটুট ছিল। শোনা যাচ্ছে, উপভোটে বক্সনগরে সিপিএম তাদের প্রয়াত বিধায়ক সামসুল হকের পুত্র বামপন্থী যুব সংগঠনের নেতা মিজান হোসেনকে প্রার্থী করতে পারে। ধনপুর ও বক্সনগরে মোট ভোটার যথাক্রমে ৫০ হাজার এবং ৪৩ হাজার থেকে সামান্য বেশি। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে ধনপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক পেয়েছিলেন ১৯,১৪৮ ভোট। বাম- গ্রেস প্রার্থী কৌশিক চন্দ পেয়েছিলেন ১৫,৬৪৮ ভোট। তিপ্ৰা মথা প্ৰাৰ্থী অমিত নোয়াতিয়া পেয়েছিলেন ৮,৬৭১ ভোট। ধনপুরে প্রায় ২৭ শতাংশ ভোটার জনজাতি অংশের। প্রতিমাদেবীর জয়ের ব্যবধান ছিল ৩,৫০০ ভোট। রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই জনজাতি ভোটই ধনপুরে মূল ফ্যাক্টর। সেই সাথে অঙ্কটাও পরিষ্কার।সিপিএম-কংগ্রেস-মথা সহমতের ভিত্তিতে লড়াই করলে, শাসক বিজেপির পক্ষে লড়াইটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে। আর মথা যদি শেষ মুহূর্তে তাদের সিদ্ধান্ত বদল করে, তাহলে বিজেপির পক্ষে লড়াই অনেক সহজ হয়ে যাবে। ফলে বল এখন মথার কোর্টে।ভোটের অঙ্কে এই জটিলতা অবশ্য বক্সনগর কেন্দ্রে নেই। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বামপ্রার্থী প্রয়াত সামসুল হক পেয়েছেন ১৯,৪০৪ ভোট। বিজেপি প্রার্থী তফাজ্জল হোসেন পেয়েছিলেন ১৪,৫৫৫ ভোট। মথা প্রার্থী আবু খয়ের মিয়া পেয়েছিলেন ৩০১০ ভোট। ফলে এখানেও হিসাব স্পষ্ট। পাল্লা ভারী বিরোধী শিবিরের। এই দুই কেন্দ্রে জয় হাসিল করলে বিধানসভায় শাসক দলের শক্তি বৃদ্ধি হয়ে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৩৪-এ। পরাজিত হলে আইপিএফটির একজন বিধায়ককে নিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৩২শে। ম্যাজিক সংখ্যা থেকে মাত্র এক সংখ্যা বেশি। এই সংখ্যা দিয়ে আগামী পাঁচ বছর সরকার পরিচালনা করাটা মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার কাছেও অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে সার্বিক বিচার বিশ্লেষণ করলে, দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচন শাসক দল বিজেপির পক্ষে কঠিন লড়াই হতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাজ্য বিজেপিতে এখন গোষ্ঠী বিবাদ যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তার প্রভাব ইভিএমে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে ঘরে- বাইরে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে শাসক শিবিরকে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.