স্বাধীনতার সংকল্প

 স্বাধীনতার সংকল্প
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

স্বাধীনতার ৭৬তম বর্ষপূর্তি, ৭৭তম জন্মদিন।৭৫ বর্ষপূর্তি আলস্বাধীনতার দি কামসমৃত মহোৎসব শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে স্বাধীনতার শতবর্ষে, অর্থাৎ ২০৪৭ সালে। ১৫ আগষ্ট শুধুমাত্র স্বাধীনতা উদযাপনের দিন নয়, সেই সঙ্গে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা সেই অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বকে স্মরণের দিন। স্বাধীনতার ৭৬ বর্ষপূর্তিতে এবার রাষ্ট্রের থিম হল ‘নেশন ফার্স্ট, অলয়েজ ফার্স্ট, অর্থাৎ ‘রাষ্ট্র প্রথম, সর্বদা প্রথম’।এই স্বাধীনতা দিবসে কেন্দ্রীয় সরকার একযোগে সারা দেশে হর ঘর তিরঙ্গা’ অভিযানের দ্বিতীয় সংস্করণ এবং ‘মেরি মাটি, মেরা দেশ’-এর প্রচার সামনে নিয়ে এসেছে।সংস্কার ভালো, কিন্তু সেখানে যুক্তি (রিজন) এবং ন্যায়ের (জাস্টিস) উপস্থিতি না থাকলে সেই সংস্কার কেবলই সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়। আগামী বছর দেশের সাধারণ নির্বাচনের মহাযুদ্ধ। তার পূর্বাহ্ণে এটাই শেষ স্বাধীনতা দিবস। তাই কাল লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন ভারত গড়ার কী সংকল্প ঘোষণা করেন, সেদিকে নি:সন্দেহে প্রত্যেক দেশবাসীর নজর থাকা উচিত।স্বাধীনতার ৭৭তম বর্ষে পৌঁছে স্বভাবতই রাষ্ট্রের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক। অন্যতম প্রত্যাশা, আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে শব্দগুলিকে আমরা ব্যবহার করেছি, সেগুলির যথাযথ প্রয়োগ। সংবিধানের প্রস্তাবনায় একেবারে গোড়ায় ভারতকে একটি সাধারণতন্ত্র বা রিপাবলিক বলা হয়েছে। সাধারণতন্ত্র বা প্রজাতন্ত্রের মূল ভাবনাটি হল, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হবে এবং মন্ত্রিমণ্ডলীসহ জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন। কিন্তু জনগণের কাছে জবাবদিহি না করে উল্টে জনসাধারণকে একটি নির্দিষ্ট এককে বাঁধতে চাওয়া হলে তা সংবিধানে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’ রক্ষার ভাবনারই পরিপন্থী।সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বিস্তৃত নাগরিক পরিসরে শব্দটির তাৎপর্য ও ব্যাপকতা সম্পর্কে আমরা সকলেই কম- বেশি অবহিত। কল্যাণকামী রাষ্ট্রে নাগরিকের যাবতীয় চাওয়া-পাওয়ার গোড়ার কথাই হল গণতন্ত্র। লিঙ্গ বৈষম্য থেকে সামাজিক দুরাচার, তা একমাত্র অবসান করতে পারে প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডল। কিন্তু ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সখেদে বলতে হচ্ছে, গণতন্ত্রের মূল ধারণাটিকে ক্রমশ সঙ্কুচিত করে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকেই মূল প্রতিপাদ্য করে তোলা হচ্ছে। বুঝিয়ে দিতে চাওয়া হচ্ছে নির্বাচিত শাসকদলই শেষ কথা। এমত নয়া গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডলে নাগরিকের ‘মন কি বাত’, তাদের অভাব, অভিযোগ, সমালোচনা মনোযোগ দিয়ে শোনার কর্তব্য থেকে রাষ্ট্র যদি ক্রমশ দূরে সরে যায় এবং পক্ষান্তরে নিজের কথা বেশি বলে এবং জনগণকে তা তা মানতে বাধ্য করায়, সেটি আর যাই হোক, একটি স্বাধীন কল্যাণকামী রাষ্ট্রের পরিচায়ক নয়। জনগণতন্ত্রের অর্থ কখনোই হতে পারে না, ‘বলো কম, শোনো বেশি’। এক্ষণে ‘সার্বভৌম’ শব্দটির গুরুত্বের কথাও আমাদের বিস্মৃত হলে চলবে না। সার্বভৌম শব্দের অর্থ দেশের জনগণ, অর্থাৎ সেই জনগণের নির্বাচিত সংসদই ঠিক করবে দেশের ভূত-ভবিষ্যৎ। সেই মতো রচিত হবে আইন, বিধি। কিন্তু সেই আইন মূলত ক্ষমতায়নের হিতার্থে প্রণীত হলে, তাতে কেবল বণিক শ্রেণীর কল্যাণ সাধিত হয়, সাধারণ্যের হয় না।একজন মানুষের নানা আলাদা সত্তাপরিচয় থাকে। কারও পক্ষে এক ও অদ্বিতীয় আত্মপরিচয় ঘোষণা করা স্বাভাবিক নয়, নিরাপদও নয়। এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে স্থান পেয়েছে নানা গোষ্ঠী, গড়ে তুলেছে এক বিচিত্র সভ্যতা, যার বীজমন্ত্র ১৯১০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থে ‘ভারত তীর্থ’ কবিতায় লিখে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। এ দেশেকে তীর্থভূমি জ্ঞানে গুরুদেব জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘দিবে আর নিবে, মিলায় মিলিবে, যাবে না ফিরে এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে’।ব্রিটিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে উত্তেজিত হয়ে দেশভক্ত বিপ্লবীরা মা শ্রীসারদা দেবীকে অনুরোধ করেছিলেন, তিনি যেন অন্তত একটিবার মুখ দিয়ে বলেন, ইংরেজ উচ্ছন্নে যাক’। যা শুনে জননী বলেছিলেন, ‘আমি বলি, সকলেরই কল্যাণ হোক।’ দেশভক্তির নামে, মাতৃসেবার নামে ভ্রাতৃবিরোধ নয়, দ্বেষ নয়, হিংসা নয়, বিশ্বজননী মা সারদার সর্বসম্প্রীতির সেই বাণীই হোক স্বাধীনতার ৭৭তম বর্ষে আমাদের সংকল্প।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.