তিপ্রাল্যাণ্ডের নামে ইচ্ছা পুরণ করতে চাইছে কিছু লোক : মুখ্যমন্ত্রী।

 তিপ্রাল্যাণ্ডের নামে ইচ্ছা পুরণ করতে চাইছে কিছু লোক : মুখ্যমন্ত্রী।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি:- প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত দিশায় জনজাতি কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রী মোদিও জনজাতিদের বিকাশে খুবই আন্তরিক। রাজ্য সরকারও একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে জনজাতিদের প্রতি। কাজের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছে বিজেপি জোট সরকার।শুক্রবার আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রধান সমাজপতিদের নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় এমনই বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। তিনি বলেন, এতোদিন উন্নয়ন থেকে দুরে সরিয়ে রেখে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নিয়ে জনজাতি ভাই-বোনদের শুধুমাত্র ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করেছে অন্য দলগুলো। এই প্রবণতায় ইতি টেনেছে বর্তমান সরকার। জনজাতিদের সম্মান নিশ্চিত করে তাদের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে কাজ চলছে। যার সুফল পাচ্ছেন রাজ্যে বসবাসকারী উনিশটি জনজাতি গোষ্ঠী।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিশায় এডিসি এলাকায় সামগ্রিক উন্নয়ন এবং জনজাতি কল্যাণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বর্তমান রাজ্য সরকার।এডিসিতে জনজাতিদের সব অংশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য পঞ্চাশটি আসনের প্রস্তাব দিল্লিতে পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদির দায়িত্ব গ্রহণের পর জনজাতি কল্যাণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।তার চিন্তাভাবনা সমাজের অন্তিম ব্যক্তির উন্নয়ন। কারণ তাদের ছাড়া সমাজ, রাজ্য এবং দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।সেই দিশায় সারা দেশে কাজ চলছে।প্রধানমন্ত্রীর জন্যই রাষ্ট্রপতি হিসাবে জনজাতি অংশের দ্রৌপদী মুমুকে আসীন করা সম্ভব হয়।যা জনজাতি কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার অন্যতম প্রকৃষ্ট উদাহরণ। রাজ্য মন্ত্রিসভাতেও জনজাতি অংশের মানুষ প্রতিনিধিত্ব করছেন।কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে যাকে স্থান দেওয়ার সেখানে দেওয়ার মানসিকতা রাখে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার।মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা আরও বলেন, কিছুদিনের জন্য রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে দায়িত্বে থাকার সময়ে রাজ্যের ডার্লং জনগোষ্ঠীর মানুষকে এসটি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সংসদে বক্তব্য রাখার সৌভাগ্য হয়। এজন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ত্রিপুরা রাজ্যে উনিশটি জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের মধ্যে আবার কিছু উপগোষ্ঠী রয়েছে। এডিসিতে বর্তমানে আটাশটি আসন রয়েছে। কিন্তু জনজাতি সম্প্রদায় থেকে যাতে সব গোষ্ঠীর মানুষ প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায় এজন্য রাজ্য সরকার পঞ্চাশটি আসনের জন্য ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত নিয়ে দিল্লীর কাছে পাঠিয়েছে।কারণ এই সরকার জনজাতিদের সার্বিক কল্যাণে বিশ্বাস করে। সেই দিশায় কাজ করছে সরকার। এতো বছর ধরে ত্রিপুরার রাজ পরিবারকে সম্মান জানাতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কিন্তু এই সরকার রাজ পরিবারকে যোগ্য সম্মান দিতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। আগরতলা বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দর করা হয়েছে। যা খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের হাতে উদ্বোধন করেছেন।কর্মশালায় আলোচনা করতে গিয়ে প্রফেসর ডা. মানিক সাহা জানান, এই সরকার প্রকৃত অর্থে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাভাবনাকে সামনে রেখে রাজ্যের আপামর জনসাধারণের জন্য কাজ করতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে জনজাতি সমাজপতিদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের জনকল্যাণমুখী চিন্তাভাবনা সমাজের একেবারে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে তাদের। এডিসির সার্বিক উন্নয়নেও এই সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে। হাসপাতালের পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য এডিসিকে ত্রিশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারের সহযোগী আরও ৩৯টি দপ্তরের মাধ্যমে এডিসির উন্নয়নে পাঁচ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সরকার সত্যিকার অর্থে সমস্যা সমাধান করতে চায়। অথচ আগে যারা সরকারে ছিল তারা সমস্যা সৃষ্টি করে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চাইতো।এদিনের অনুষ্ঠানে জনজাতিদের ঐতিহ্যবাহী পাগড়ি পরে আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার জনজাতিদের রিসা এখন দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে এই রিসা পাঠানোর জন্য বাইরে থেকে ফোন কল আসে। এবং রিসা পাঠিয়ে দিতে হয়। জনজাতিদের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ বেত শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে রাজ্য সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। নতুন সংসদ ভবনেও ত্রিপুরার বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। যা আমাদের প্রত্যেকের গর্বের বিষয়।

May be an image of 2 people and dais



মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা কর্মশালায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির কারণে উত্তরপূর্বাঞ্চল সহ ত্রিপুরা দ্রুত উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। ত্রিপুরায় হিরা মডেল কার্যকর হচ্ছে। ছয়টি জাতীয় সড়কের কাজ প্রায় শেষের পথে। আরও চারটি জাতীয় সড়ক গড়ে তোলা হবে। এখন ত্রিপুরা থেকে বারোটি এক্সপ্রেস ট্রেন যাতায়াত করে। রাজধানী এক্সপ্রেস থেকে শুরু করে অন্য লাক্সারি ট্রেন চলাচল করে। যা কোনওদিন ভাবা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে সাক্রমের মৈত্রী সেতু খুলে যেতে পারে। যা হবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রবেশ দুয়ার। সেখানে স্পেশাল ইকনোমিক জোন চালু হওয়ার পথে। এছাড়া এবছর থেকেই আগরতলা-বাংলাদেশ ট্রেন সংযোগ চালু হতে পারে। যা হলে কলকাতা পৌঁছাতে মাত্র আট ঘন্টার মতো সময় লাগবে। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় বাঁশ বেত, রাবার, আগর, গ্যাস ভিত্তিক শিল্পের ক্ষেত্রে এগিয়ে চলছে। সেভাবে জাতীয় সড়কও উন্নত হচ্ছে। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে কোনও রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এখন নিত্যদিন বিনিয়োগকারীরা দেখা করতে আসছেন শিল্প গড়ার লক্ষ্য নিয়ে। এর পাশাপাশি জনজাতিদের উন্নয়ন ছাড়া ত্রিপুরার উন্নয়ন কোনও সময় সম্ভব হবে না। কিন্তু এখনও কিছু ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানসিকতার কারণে আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে। তিপ্রাল্যাণ্ডের আওয়াজ তুলে এখনও কিছু লোক নিজেদের ইচ্ছাকে পূর্ণ করতে চাইছে। এতোকিছু সত্ত্বেও আমরা সবাই এক। সেই মানসিকতা নিয়েই এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সবাই এগিয়ে আসার আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।এ দিন এই কর্মশালায় বিশিষ্ট অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বিধায়ক মাইলাফ্লু মগ, জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব এল টি ডার্লং, অতিরিক্ত সচিব এস প্রভু সহ প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকগণ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.