অকাল উপনির্বাচন কথন

 অকাল উপনির্বাচন কথন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

এই মুহূর্তে সোনামুড়া মহকুমার ২ বিধানসভা কেন্দ্র ধনপুর এবং বক্সনগর কেন্দ্রে অকাল ভোট উৎসব ঘিরে রাজ্য রাজনীতি সরগরম।২ কেন্দ্রেই ভোট আগামী ৫ সেপ্টেম্বর।এই অকাল ভোট হচ্ছে এই কারণে—ধনপুর কেন্দ্রের জয়ী হওয়া বিজেপি প্রার্থী ইস্তফা দিয়েছিলেন, আর বক্সনগর কেন্দ্রে বিজয়ী হওয়া সিপিএম প্রার্থীর অকস্মাৎ মৃত্যু হয়েছিল বলে ওই দুই কেন্দ্রেই উপনির্বাচন হচ্ছে, যার সরব প্রচার রবিবার শেষ হয়েছে।এর মধ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে ধনপুরে জয়ী হয়েছিলো বিজেপি এবং বক্সনগরে জয়ী হয়েছিলো সিপিএম।বক্সনগর কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরেই বামেদের দখলে।ধনপুর কেন্দ্রেও ২০২৩-এর আগে পর্যন্ত ছিল তাই। ২০২৩ সালে ধনপুরে পদ্মফুল প্রস্ফুটিত হয়েছিলো বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিকের হাত ধরে।ধনপুর কেন্দ্রটি মিশ্রবসতিপূর্ণ। সাধারণ ভোটার, উপজাতি ভোটারচ কিছু সংখ্যালঘু ভোটারও রয়েছে।অন্যদিকে বক্সনগর কেন্দ্রটি বরাবরই মুসলিম অধ্যুষিত। মুসলিম ভোটারেরই সংখ্যাধিক্য এই কেন্দ্রে। দীর্ঘ বাম জমানায় এই কেন্দ্রগুলিতে বামেরাই দাপট দেখিয়ে এসেছে। বিরোধীরা দাঁতই ফোটাতে পারেনি ওই কেন্দ্রগুলিতে।২০১৮ সালে বিজেপির প্রবল হাওয়াতেও এই কেন্দ্রগুলিতে বামেরা জয়ী হয়েছিলো। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত বিধানসভা ভোটে বক্সনগরে বামেরা জয়ী হলেও ধনপুরে দীর্ঘ পাঁচ দশকের রেকর্ড ভেঙে জয়লাভ করে বিজেপি।এরই মধ্যে অকাল ভোট হচ্ছে। এবার দুই কেন্দ্রে কী হবে? লাখ – টাকার এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় রাজনৈতিক মহল। রাজ্যের মানুষও উদ্গ্রীব-কী হবে দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল।
শাসক বিজেপি এই দুই কেন্দ্রে যেভাবে তাদের প্রচারের কৌশল নিয়েছিল তাতে বলাই যায় তারা বিরোধীদের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল।২ কেন্দ্রে বিরোধী দলগুলির মধ্যে একমাত্র সিপিএমই প্রার্থী দেয়।উল্টোদিকে শাসক বিজেপি।প্রথমে ধরে নেওয়া হয়েছিলো যে বিরোধী বাম কংগ্রেস তিপ্রা মথার মধ্যে হয়তো আসন সমঝোতা হবে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। যদিও শেষবেলায় দুই সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে নেমেছে কংগ্রেস।কিন্তু তিপ্রা মথার সেই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের কৌশল শেষবেলায়ও অব্যাহত রয়েছে। তিপ্ৰা মথা গত বিধানসভা নির্বাচনে ধনপুরে ফ্যাক্টর হয়েছিলো। অর্থাৎ সেই কেন্দ্রে জয় পরাজয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপজাতিদের ভোটের একটা অবদান রয়েছে।দীর্ঘদিন বামেদের অধীনে ছিল এই উপজাতি ভোটার।পরবর্তীতে তিপ্ৰা মথা এতে ভাগ বসায়। ফলে গত বিধানসভা নির্বাচনে ধনপুরে উপজাতি ভোট ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তাই ধনপুরে সিপিএম মনে মনে ধরে নিয়েছিল মথা যদি তাদের সমর্থন জানায় তা হলে হয়তো ধনপুরে বিজেপিকে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা যাবে। তেমনি বক্সনগরে মথা কংগ্রেসের সমর্থন পেলে বামেরা ফের কেন্দ্রটি পুনদখল করবে এমন একটা ধারণা ছিল। কিন্তু মথা বরাবরের মতোই এই উপনির্বাচনে সুবিধাবাদী অবস্থান নিলো।শাসক বিজেপিকে চটাতে চায়নি মথা। একই ভাবে সিপিএমকে সমর্থনের কথা বলেনি। সম্প্রতি তিপ্ৰা মথা দল জানিয়েছে ধনপুরে এবং বক্সনগরে তারা কোন দলকেই সমর্থন করবে না। তাদের এই ঘোষণায় বিজেপি শিবির হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে।কেননা বিজেপি শেষপর্যন্ত চিন্তায় ছিল ২ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মথা কী ভূমিকা নেয় এ নিয়ে। বিজেপি এর সুবিধা নেবে কিনা তা সময়ই বলবে। শাসক বিজেপির চিন্তার কারণ ছিল তিপ্রা মথাই। সেজন্যই মুখ্যমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, গোটা মন্ত্রিসভা, টিম বিজেপি দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনকে ঘিরে একেবারে ঘাঁটি গেড়েছিল ধনপুর এবং বক্সনগরএ। বিজেপির প্রেস্টিজ ফাইট হচ্ছে বক্সনগর এবং ধনপুর। ২টি কেন্দ্রে জিততেই হবে এ রকম পণই নিয়েছে শাসক। কোন কারণে অঘটন ঘটলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরাগভাজন হতে পারে রাজ্য নেতৃত্বকে। তাই আগ্রাসী মেজাজে ২ কেন্দ্রেই শাসকের প্রচার চোখে পড়েছে। ৪৮ ঘন্টাও নেই উপনির্বাচন ভোটের। সিপিএমও নিজের মতো ভোট প্রচার করছে। তবে সিপিএম উপনির্বাচনে কোনও দাগ রাখতে পারে কিনা এর দিকেই এখন সব নজর রাজনৈতিক মহলের।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.