জি ২০ ও পদ্মনীতি

 জি ২০ ও পদ্মনীতি
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গত ২৩ আগষ্ট বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছুঁয়েছে ভারত। ভারতের এই সাফল্যকে ঘিরে গোটা বিশ্ব এখনও হতবাক। চাঁদ ছোঁয়ার সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতে গত ২ সেপ্টেম্বর ভারত পাড়ি দিয়েছে সৌর অভিযানে। সূর্যের তথ্য অনুসন্ধানে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো উৎক্ষেপণ করেছে সৌরযান ‘আদিত্য এল -১’।গোটা বিশ্ব দেখেছে ভারতের এই সাফল্যের অভিযান। চাঁদ ও সূর্য অভিযানের রেশ কাটতে না কাটতে এবার ভারতের রাজধানী দিল্লীতে আগামী ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর জি ২০ সম্মেলন উপলক্ষে বসছে চাঁদের হাট!জি ২০, অর্থাৎ গ্রুপ অফ টুয়েন্টি।এটি হল একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ফোরাম। ১৯৯৯ সালে গঠিত হয়েছিল এই আন্তর্জাতিক ফোরাম। বিশ্বের ১৯টি শক্তিধর দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে জি ২০ জোট।এই জি ২০ জোট বৈশ্বিক জিডিপির ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি, বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশও নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যাও দুই তৃতীয়াংশ বাস করে এই জি ২০ জোটভুক্ত দেশগুলিতে। এই দেশগুলি হলো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চিন, ফ্রান্স, ভারত, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, আমেরিকা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
গত বছর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জি ২০ সম্মেলন।বালি সম্মেলনেই পরবর্তী এক বছরের জন্য জি ২০ জোটের সভাপতিত্ব করার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।গত জানুয়ারী মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতের প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে মোট ২০০টি সভা আয়োজন করা হয়।আগামী ৯ – ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জি ২০ এর শীর্ষ সম্মেলন।এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন জি ২০ ভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্র প্রধানরা।এছাড়াও আমন্ত্রিত আরও ৮টি দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন।
জি ২০ জোটভুক্ত দেশের সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব নিয়েই ভারত স্লোগান তুলেছিল, ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। খবরে প্রকাশ, এই স্লোগানের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার দলের স্লোগান ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ – এর কথাও এবার আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরতে চাইছেন।২০১৪ সালে দিল্লীর কুর্সি দখলের পর থেকেই সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ স্লোগানকে হাতিয়ার করে এগোতে দেখা যায় নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোট, এমনকী দেশের কোনও রাজ্যে ভোট এলেই বিজেপির প্রচারে বারবার উঠে এসেছে ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’- এর কথা। পরবর্তী সময় অবশ্য এই স্লোগানের সাথে যুক্ত হয়েছে আরও চারটি শব্দ, ‘সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’। এবার আন্তর্জাতিক স্তরেও সেই স্লোগানকে তুলে ধরতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। জি ২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের ‘গৌরবগাথা’ নিয়ে বলতে গিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ‘সবকা সাথ সবকা বিশ্বাস’ নীতিতে ভর করে যেমন দেশের উন্নতিসাধন হয়েছে, এই মডেল গোটা বিশ্বকেও পথ দেখাতে পারে’। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘ভারতের জি ২০-তে সভাপতিত্বের দায়িত্ব লাভ তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে তুলবে’। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত উন্নত দেশ হয়ে উঠবে। দেশে দারিদ্র্য, দুর্নীতি, জাতিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার অস্তিত্ব থাকবে না।’ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য ভারত যে সময়ে সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেয়েছে, তা অত্যন্ত কঠিন সময়। আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি এখন টানাপোড়েনে সমস্যাদীর্ণ। সময়টা অতিমারি – উত্তর অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। এই কারণেই ভারতের এই পদপ্রাপ্তিকে বিশ্বের তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক স্তরেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকায় উঠে আসতে পারবে এবং বড় ধরনের লগ্নি টানতে পারবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল। এতে ‘সবকা সাথ সবকা বিশ্বাস’ মডেল আন্তর্জাতিক স্তরেও কার্যকর -হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.