ভারত বনাম ইন্ডিয়া

 ভারত বনাম ইন্ডিয়া
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

এক দেশ,এক নির্বাচন নীতি কার্যকর করা নিয়ে বিতর্ক চলছেই।এরই মধ্যে নয়া বিতর্ক হাজির হয়েছে।এবার দেশের নাম ভারত না ‘ইন্ডিয়া’, এ নিয়ে মঙ্গলবার থেকে দেশ জুড়ে বিতর্ক একেবারে তুঙ্গে। বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে রাষ্ট্রপতি ভবনের পক্ষ থেকে জি ২০ গোষ্ঠীর রাষ্ট্রপ্রধান ও অতিথিদের পাঠানো নৈশভোজের আমন্ত্রণ নিয়ে। আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’। এ নিয়ে শাসক-বিরোধী তর্জা শুরু হয় দেশজুড়ে।এই বিতর্ক আরও জোর পায় মঙ্গলবার রাতে। বিজেপির রাষ্ট্রীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র তার সামাজিক মাধ্যমে আরেকটি চিঠি পোস্ট করেন। সেখানে লেখা ‘দ্য প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’। আজ বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০তম এএসইএএন ভারত শীর্ষ সম্মেলন এবং ১৮তম ইএএস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছেন মোদি। সাত সেপ্টেম্বর এই সম্মেলন হবে। মঙ্গলবার রাতে সেই সফরের আনুষ্ঠানিক চিঠি প্রকাশ করেন সম্বিত পাত্র। সেই চিঠিতে ‘প্রাইম মিনিস্টার ইন্ডিয়ার’ পরিবর্তে লেখা হয়েছে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’। সম্বিত পাত্রর এই পোস্টের পরই কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি একজোটে সরব হয়। তাদের অভিযোগ, এবার দেশের নামটাই বদল করে দিচ্ছে মোদি সরকার। অনেকে দাবি করেছেন, দেশের নাম বদলের জন্যই সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। কংগ্রেস দাবি করে, মোদি সরকার বিরোধীদের জোট ইন্ডিয়া’-কে ভয় পেয়েছে বলেই, দেশের নামটাই এবার বদল করে দিতে চাইছেন মোদি।এ নিয়ে যখন বিতর্কে তোলপাড় দেশের রাজনীতি, তখন মুখ খোলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। বুধবার একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে, যে ইন্ডিয়া’, তা ‘ভারত।’আমি সবাইকে এটা পড়তে অনুরোধ করছি।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ভারত’ শব্দটি উচ্চারণ করলে এর সঙ্গে যে ধারণা এবং ছবি মনে উঠে আসে, সেই একই প্রজ্ঞা নিহিত হয়েছে আমাদের সংবিধানে।’ ভারত বনাম ইন্ডিয়া বিতর্কে অবশ্য এখনও কোনও মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী মোদি।এখন প্রশ্ন হচ্ছে দেশের নাম নিয়ে কী বলছে সংবিধান?দেশের দেশের সর্বোচ্চ আদালতেরই বা কী মত? সংবিধানে দেশের নাম ইন্ডিয়া’ এবং ‘ভারত’ দুইয়েরই উল্লেখ আছে।অর্থাৎ যাহা ‘ভারত’ তাহাই ইন্ডিয়া’। সংবিধানের ১নং অনুচ্ছেদে ইন্ডিয়া (INDIA) এবং ভারত (BHARAT) দুই নামেই সাংবিধানিক সিলমোহর রয়েছে। প্রয়োজন এবং সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে দুই নামই। শুধুমাত্র একটি নাম ব্যবহার করতে হলে সর্বপ্রথম সংবিধানে সংশোধন ঘটাতে হবে।দেশের নাম নিয়ে বিতর্ক বেশ কয়েক বছর আগে সুপ্রিম কোর্টেও গড়িয়েছিল। ২০১৬ সালে দেশের নাম নিয়ে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে বলেছে, ভারত না ইন্ডিয়া ? ভারত বলতে চাইলে ভারত বলুন। কেউ যদি ইন্ডিয়া ব্যবহার করতে চান, তারা ইন্ডিয়া ব্যবহার করতে পারেন। সংবিধানে ভারত এবং ইন্ডিয়া দুই নামই উল্লেখ রয়েছে।’এখন তাহলে বিতর্কটা কোথায় এবং কেন তৈরি হলো? উত্তরটা খুব সহজ – রাজনীতি। আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অতি সম্প্রতি বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি তাদের জোটের নয়া নামকরণ করেছে INDIA (ইন্ডিয়া)। যা দেশের নামের অনুকরণেই। যে জোটের আগে নাম ছিল UPA (উপা), তারাই এখন ‘ইন্ডিয়া’ নামে জোট বেঁধেছে মোদি ও বিজেপির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অবশ্য শুরু থেকেই বিরোধী জোটকে আক্রমণ করে আসছে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীদের এই জোটকে সরাসরি মুজাহিদিন এবং পিএফআই-এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে তুলনা টেনেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাই শুধুমাত্র নামের জোরেই যাতে বিরোধীরা লোকসভা নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা না পেয়ে যায়, এর জন্যই দেশের নাম পাল্টানোর এই উদ্যোগ বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে?নাকি সংবিধান থেকে একটি নাম বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে? তা অবশ্য সময়ই বলবে। তবে এই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, দেশের বর্তমান সরকারের মূল নীতি যেখানে ‘এক দেশ, এক বিধান, এক নিশান।’‘এক দেশ এক আইন, এক দেশ, এক নির্বাচন।’ এই পথেই এগোচ্ছে, তখন ‘এক দেশ এক নাম’ হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে একটা বিষয় মনে রাখতেই হবে, জন্মদাত্রীকে কেউ মা, কেউ মাম্মি, কেউ আম্মা আরও নানা নামেই ডাকে। তাই বলে জন্মদাত্রী মায়ের পরিচয় বদল হয়ে যায় না।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.