পূর্তের দুই অফিসারের সৌজন্যে, রেলস্টেশন রাস্তার নির্মাণকাজ থমকে আছে, উদাসীন সরকার।

 পূর্তের দুই অফিসারের সৌজন্যে, রেলস্টেশন রাস্তার নির্মাণকাজ থমকে আছে, উদাসীন সরকার।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- রাজ্য পূর্ত দপ্তর (আর অ্যান্ড বি) ডিভিশন ৫-এর অন্তর্গত সেন্ট্রাল সাব-ডিভিশন -৬ এর দুই আধিকারিকের দৌলতে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাধারঘাট সিদ্ধি আশ্রম থেকে আগরতলা রেলস্টেশন পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ফোর লেন রাস্তার নির্মাণকাজ। ওই দুই প্রভাবশালী আধিকারিকদের একজন হলেন এসডিও সীমিতাভ চক্রবর্তী, অন্যজন জুনিয়র ইঞ্জিনীয়ার জয়ন্ত সেন। পূর্ত দপ্তরের ওই দুই কমরেড বাম আমলেও প্রভাবশালী, এখন রাম আমলেও তারা আরও প্রভাবশালী। অভিযোগ, তাদের মর্জিমাফিক কাজের জন্য শুধু বাধারঘাট রেলস্টেশনে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির নির্মাণকাজই নয়, আরও একাধিক নির্মাণকাজ আটকে গেছে। তাদের মর্জিমাফিক ও অনৈতিক কাজের জন্য চরম অতিষ্ঠ ঠিকাদাররা। শুধু তাই নয়, তাদের যন্ত্রণায় একাধিক ঠিকাদার অতিষ্ঠ হয়ে বহু নির্মাণকাজের টেন্ডার পেয়েও তা সারেন্ডার করে দিয়েছেন । দপ্তর বার বার টেন্ডার আহ্বান করলেও কোনও ঠিকাদারই টেন্ডার জমা দিচ্ছেন না। এখানেই শেষ নয়, ওই দুই আধিকারিকের খেয়ালখুশিমতো কাজের জন্য ঠিকাদাররা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অন্য রাজ্য থেকে আসা প্রশিক্ষিত শ্রমিকরাও সঠিকভাবে কাজের মজুরি পাচ্ছেন না তাদের কারণে। অভিযোগ, তারা যখন থাকবেন তখনই কাজ করতে হবে। নতুবা কাজ করা যাবে না। তারা নিজেদের সময়মতো যখন খুশি, যখন ইচ্ছা আসবেন, তখনই কাজ হবে। শনি ও রবিবার এবং অন্যান্য সরকারী ছুটির দিন কাজ বন্ধ থাকে। এমনকী সকাল এগারটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত কাজ হবে। এর বাইরে কাজ করা যাবে না। এতে কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। ঠিকাদার এবং শ্রমিক উভয়ই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বারবার বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে সিদ্ধি আশ্রম থেকে বাধারঘাট রেল স্টেশন পর্যন্ত রাস্তাটি। বলা যায়, এটি একটি ভিআইপি রোড। রাত-দিন চব্বিশ ঘন্টা এই রাস্তায় ছোট বড় যানবাহন থেকে শুরু করে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এই সড়কে যাতায়াত করেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বছরখানেক ধরে বেহাল ও ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিদিন একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ সরকারের কোনও হেলদোল নেই। নিত্যযাত্রী এবং ওই এলাকার জনগণ প্রতিদিন রাজ্য সরকার ও এই রাস্তা নির্মাণে বরাত প্রাপ্ত ঠিকাদারকে গালিগালাজ করছেন। নিত্য দুর্ভোগের শিকার জনগণের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। প্রতিদিন সরকার ও দপ্তরের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হচ্ছে। অথচ বিস্ময়করভাবে সরকার উদাসীন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজ্য পূর্ত দপ্তর ২০২২ সালের জুন মাসে সিদ্ধি আশ্রম থেকে বাধারঘাট রেলস্টেশন পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ফোর লেন রাস্তার নির্মাণকাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। ওই বছরের অক্টোবর মাসে পূর্ত দপ্তর রাজ্যের জনৈক বিশিষ্ট ঠিকাদারকে নির্মাণকাজের বরাত দেয়। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক অনুদানে এই রাস্তা নির্মাণের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১৮ মাসে এই রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ইতিমধ্যে ১১ মাস অতিক্রান্ত। এই এগার মাসে কাজ হয়েছে মাত্র ৬৪ থেকে ৬৫ লক্ষ টাকার। ওই দুই আধিকারিকের সৌজন্যে এগার মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি একপ্রকার শূন্য। কচ্ছপ গতিকেও হার মানিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সড়কটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি থেকে শুরু করে দপ্তরের চীফ ইঞ্জিনীয়ার, এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ার এবং সুপারিনটেন্ডেন্ট ইঞ্জিনীয়াররা পর্যন্ত একাধিকবার চেষ্টা করেছেন। সুপারিনটেন্ডেন্ট ইঞ্জিনীয়ার মিটিং পর্যন্ত ডেকেছেন কাজটি ত্বরান্বিত করার জন্য। কিন্তু এসডিও সীমিতাভ চক্রবর্তী এতটাই ক্ষমতাবান যে, তিনি অসুস্থতার অজুহাত তুলে মিটিং-এ হাজিরই হননি। খবর নিয়ে জানা গেছে, বাম আমলের কমরেড সীমিতাভ চক্রবর্তী গত ২১বছর ধরে স্টেট ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের এগজিকিউটিভ কমিটির প্রভাবশালী সদস্য। এখনো তিনি অ্যাসোসিয়েশনের এগজিকিউটিভ কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হিসাবে ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছেন। বাম আমলেও তিনি কাজের চাইতে নেতাগিরি করে গেছেন। এখন রাম আমলেও তিনি আরও অধিক ক্ষমতাশালী হয়ে নেতাগিরি করে চলেছেন। জানা গেছে, বাম আমলে সীমিতাভ চক্রবর্তী তার মায়ের দৌলতে নেতাগিরি করে গেছেন। কেননা, সীমিতাভবাবুর মাতৃদেবী ছিলেন সিপিএমের নারী সমিতির বড় মাপের নারী নেত্রী। রাম আমলে রাতারাতি জামা পাল্টেছেন। শুধু তাই নয়, বর্তমানে তিনি বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যের নাম ব্যবহার করে ইঞ্জিনীয়ার অ্যাসোসিয়েশন থেকে শুরু করে রাজ্য প্রশাসনেও ছড়ি ঘুরিয়ে মাতব্বরি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীমিতাভ চক্রবর্তী বর্তমানে বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যের সহপাঠী।যোগেন্দ্র নগর স্কুলে তারা একসাথে পড়াশোনা করেছেন। সেই সুবাদে এখন তিনি রাজীববাবুর নাম ভাঙিয়ে নিজের আখের গোচ্ছাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে নিজের খেয়াল খুশিমতো কাজ করে গেলেও, কেউ তাঁর কেশও স্পর্শ করতে পারছে না। তিনি এতটাই ক্ষমতাবান। ফলে তিনি একপ্রকার ধরেই নিয়েছেন, কেউ তাঁর কিছুই করতে পারবে না। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর নির্মাণকাজ আটকে থাকলেও, তাঁর কিছু যায় আসে না। এক্ষেত্রে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছেন জুনিয়র ইঞ্জিনীয়ার জয়ন্ত সেন। এমনটাই অভিযোগ। এটা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একপ্রকার ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছে অনেকে। পূর্ত দপ্তরের মুখ্যমন্ত্রীর হাতে।তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রীও অসহায় ? এ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এই সড়কের নির্মাণকাজ কবে শেষ হবে? আদৌ শেষ হবে তো? প্রশ্ন উঠেছে ২১ বছর ধরে কী করে একজন ব্যক্তি এগজিকিউটিভ কমিটিতে থাকেন? দীর্ঘ বছর ধরে আগরতলাতেই চাকরি করে যাচ্ছেন কীভাবে?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.