প্রকাশ্য দিবালোকে মেলাঘরের ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মেলাঘর বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে দোকানের ভেতরেই ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হল ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দেবনাথকে (৪৮)। নিহত ব্যবসায়ী সেই সময়ে নিজ দোকানে বসে কম্পিউটারে কাজ করছিলেন। আততায়ী দশম শ্রেণীর এক ছাত্র। ছাত্রটি মেলাঘরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পাঠরত। হত্যাকান্ডের পর ছাত্রটি কিন্তু অবলীলায় দোকান থেকে বেরিয়ে বাইসাইকেলে করে চলে যায় মোটরস্ট্যাণ্ড এলাকায় । সেখানে জলের টেপ থেকে জল দিয়ে শরীরের নানা অংশে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করছিল। মেলাঘর বাজারে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এ যাবৎ কালের ইতিহাসে বিরলতম। দশম শ্রেণীতে পাঠরত হালকা গড়নের এক ছাত্রের পক্ষে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এক জন ব্যবসায়ীকে উপর্যুপরি ছুরি দিয়ে ছয়- সাতটি আঘাত করা নিয়েই সব মহলে জোর জল্পনা। পুলিশ এই ঘটনায় অভিযুক্তকে আটক করেছে। ক্ষুব্ধ মেলাঘর বাজারের ব্যবসায়ীরা থানার সামনে পথ অবরোধ আন্দোলনে শামিল হয়। পরে ধনপুরের বিধায়ক বিন্দু দেবনাথ এই সড়ক দিয়ে যাবার পথে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলেন ও আইনের পথেই যা হবার হবে এই আশ্বাস দিলে ব্যবসায়ীরা পথ অবরোধ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়।

সংবাদে জানা যায়, মেলাঘর বাজারের স্কুল চৌমুহনী এলাকায় এই ব্যবসায়ীর কম্পিউটার ও জেরক্সের দোকান রয়েছে। তার দোকান শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। সে জন্য সামনের অংশও কাঁচের দরজা থাকায় বাইরে থেকে হঠাৎ করে কিছু আঁচ করা কঠিন। ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দেবনাথ দুপুর প্রায় আড়াইটা নাগাদ নিজ দোকানে বসে কাজ করছিলেন। এমন সময়ে অভিযুক্ত ছাত্র তার দোকানে যায় কিছু কাগজ জেরক্স করবার জন্য। কিন্তু কোনও একটি বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বিতণ্ডা হয়। এরপরেই ঘটে বিপত্তি। ব্যবসায়ী চেয়ারে বসে কম্পিউটারে কাজ করার সময়ে অভিযুক্ত তার ব্যাগে থাকা ছুরি বের করে ব্যবসায়ীর মাথার পেছন দিকে আঘাত করে। পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ঘাড় থেকে কণ্ঠনালীর কাছে এবং দেহের পেছন দিকের স্পর্শকাতর কয়েকটি স্থানে পরপর আঘাত করে। ছুরি দিয়ে সাত আটটি আঘাতের কারণে সুস্বাস্থ্যেরে অধিকারী হয়েও হালকা পাতলা গড়নের স্কুল ছাত্রের সামনে সে কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। ঘরেই লুটিয়ে পড়ে।

এই ঘটনা সংঘটিত করে অভিযুক্ত অবলীলায় দোকান থেকে বেরিয়ে বাইসাইকেলে করে চলে যায় ঘটনাটি অপর এক ছাত্র দেখে পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী একজনকে বললে ছুটে আসে বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। ঘটনার বীভৎসতায় সকলেই তাজ্জব বনে যায়। কয়েকজন আহত ব্যবসায়ীকে নিয়ে আসে মেলাঘর হাসপাতালে, কয়েকজন বাইকে করে অভিযুক্তকে খোঁজতে বেরিয়ে পড়ে। মেলাঘর হাসপাতাল থেকে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জিবি হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। পথেই তিনি মারা যান। মেলাঘর থানার ওসি দেবাশিস সাহা মৃত্যুর সত্যতা স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে অভিযুক্তকে খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রটি মোটরস্ট্যাণ্ড এলাকায় জলের টেপ থেকে জল দিয়ে গায়ে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করছিল। তাকে ধরে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। হালকা পাতলা গড়নের খর্বাকৃতির দশম শ্রেণীর একটি ছাত্র এরকমভাবে নৃশংসভাবে একজন ব্যবসায়ীকে নিজস্ব দোকান ঘরে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার পরও তার মধ্যে কোনও প্রকার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। ভাবলেশহীনভাবে কেন ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে তা অকপট স্বীকারোক্তি করে।

উল্লেখ্য, মেলাঘর স্কুল চৌমুহনী এলাকায় নেশাসক্তদের আঁতুরঘর। সব সময়ে এখানে নেশাসামগ্রী প্রায় প্রকাশ্যেই কেনা বেচা চলে। সন্ধ্যার পর এই এলাকা নেশাসামগ্রী বিক্রেতা ও সেবনকারীদের জমজমাট ভিড় লক্ষ্য করা যায়। নেশার কড়াল ছায়া থেকেই এই স্কুল ছাত্র এরকম একটি নৃশংস ঘটনা সংঘটিত করেছে কিনা তা নিয়ে জল্পনা মেলাঘরে। মেলাঘরের ইতিহাসে এভাবে দিনের বেলায় নিজ দোকানে একজন ব্যবসায়ীকে হত্যা করার ঘটনা বিরলতম ঘটনা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.