পদ্ম ইন্ধনে ধর্মঘট!

 পদ্ম ইন্ধনে ধর্মঘট!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনে ধর্মঘট হচ্ছে একটি অবলম্বন।সমাজবিদরা বলেন ধর্মঘট অনেকটা নেশার মতো। মাঝে মাঝে ওই নেশা বুদবুদের মতো ভেসে উঠে। একদিনের জন্য সকলের স্বাভাবিক জীবন অচল করে দেওয়ার স্বাদ বা বাসনা জাগে কিছু মানুষের মনে।এই বাসনা থেকে তারা ভিতরে ভিতরে শিহরিত হয়।এই শিহরণ অনেকটা নেশার মতো।এই শিহরণ আরও বেশি এই জন্য যে,এর ক্ষতিকারক প্রভাব ধর্মঘট আহ্বানকারীদের উপর পড়ে না।তাদের কোনও মূল্য দিতে হয় না।এর প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের উপর।
ধর্মঘটের দিন কত লোক কাজ করতে পারলো না।কত গরিব মানুষ, দিনমজুর একদিন রুজি করতে পারলো না। কত মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হলো। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সকল স্তরে কত টাকার ক্ষতি হলো।এই সব নেতিবাচক এবং অপরের ক্ষতির উপর ভর করেই ধর্মঘটের সাফল্য স্থির করা হয়।এতে ধর্মঘট আহ্বানকারীরা নিজেরা আত্মপ্রসাদ লাভ করে। নিজেরাই নিজেদের সাফল্য নিয়ে একে অপরের পিঠ চাপড়ায়।জনগণকে চরম ভোগান্তি ও সমস্যার মধ্যে ফেলে নিজেরা স্বস্তি লাভ করে। নিজেদের বিশাল বড় কেউকেটা ভাবেন।শনিবার ফের একবার রাজ্যের এডিসি এলাকায় বারো ঘণ্টার বন্ধ পালিত হয় তিপ্ৰা মথা নামক জনজাতিভিত্তিক আঞ্চলিক দলের আহ্বানে। এই বন্ধকে কেন্দ্র করে গোটা এডিসি এলাকা স্তব্ধ হয়ে পড়ে। যার কম বেশি প্রভাব পড়েছে রাজধানী আগরতলা সহ রাজ্যের মহকুমা শহরগুলিতে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, গোটা রাজ্যে এডিসি এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া জাতীয় সড়কগুলি এ দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় আটকে দেওয়া হয়েছে।স্তব্ধ ছিল রেল পরিষেবা।মনু স্টেশনে হামসফর এক্সপ্রেস এবং আগরতলা-ধর্মনগর রেল মনু স্টেশনে আটকে দেওয়া হয়েছে। এরপর সারাদিনই আর কোনও রেল চলাচল করেনি।রাজ্যের আট জেলাতেই যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল। আসাম- আগরতলা জাতীয় সড়কে এ দিন কোনও গাড়ি চলাচল করেনি। রাজধানী-আগরতলা থেকে কোনও যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করেনি। মহকুমাগুলি থেকেও কোনও গাড়ি রাজধানীতে আসেনি। এডিসি এলাকায় সমস্ত দোকানপাট, বাজার, অফিস, কাছারি সব ছিল বন্ধ। বড়মুড়া পাহাড়ের সাধুপাড়ায় তিপ্রা মথার পিকেটিং ও জমায়েত স্থল থেকে তাজা বোমা উদ্ধার এবং আরেকটি বোমা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিনভর চরম উত্তেজনা বিরাজ করেছে গোটা বড়মুড়া পাহাড়জুড়ে।এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই বন্ধ?

গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড অর্থাৎ ত্রিপুরাকে ভাগ করে পৃথক রাজ্য চাই, এই দাবি আদায়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতেই তিপ্রা মথা দল বারো ঘণ্টা এডিসি এলাকায় বন্ধ আহ্বান করেছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে, এ দিনের বন্ধ পুরোপুরি সফল বলা যায়। আরও স্পষ্ট করে বললে, বারো ঘণ্টা বন্ধ সফল করতে পেরেছে তিপ্রা মথা। রাজ্য রাজনৈতিক মহলের একটি বড় অংশের দাবি, মথার এই বন্ধকে বকলমে সফল করেছে শাসক দল। মোদ্দাকথা, পদ্মশিবির এবং রাজ্য সরকারের প্রচ্ছন্ন মদতে পুজোর আগে রাজ্যের আপামর জনগণকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কারণ, বন্ধকে বিরোধিতা করে শাসক দল এবং সরকারের তেমন কোনও বিবৃতি বা তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। শুধু রাজ্য সরকারের সাধারণ প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্য ভাগের দাবিতে বন্ধকে রাজ্যের শাসক দল এবং সরকার কি তাহলে সমর্থন করছে? সময়েই এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। তবে বন্ধে আর কিছু হোক বা না হোক, সাধারণ মানুষের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। যে ক্ষতি কোনওভাবেই পূরণ করা যায় না। তবে, রাজ্য রাজনৈতিক মহলের অপর একটি অংশের দাবি, দল বাঁচাতেই পদ্ম ইন্ধনে প্রদ্যোত কিশোর বনধের রাজনীতিতে হেঁটেছে। কেননা, মথা দুর্বল হলে ক্ষতি হবে বর্তমান শাসক দিনের। এটা জলের মতো পরিষ্কার। যেমনটা রাজ্যে কংগ্রেস দুর্বল করাতে বামেদের রাজত্ব হাতছাড়া হয়েছে। কংগ্রেসের ক্ষয়রোগ দেখে তখন সবথেকে বেশি কষ্ট পেয়েছে বামেরা। এটাই রাজ্য রাজনীতির সমীকরণ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.