জাতগণনা!!

 জাতগণনা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

শেষ পর্যন্ত নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়েই ফেললেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীনই,গান্ধী জয়ন্তীর দিন বিহারে জাতসমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করে দিল তার সরকার।রিপোর্টে প্রকাশ বর্তমান বিহারে অন্যান্য অনগ্রসর গোষ্ঠী(ওবিসি তথা দলিত)-র সংখ্যা ৬৩ শতাংশ। তার মধ্যে ৩৬ শতাংশ অতি অনগ্রসর(ইবিসি তথা মহা দলিত)এবং ২৭ শতাংশের সামান্য বেশি সাধারণ অনুগ্রসর গোষ্ঠীর।এছাড়া বিহারে প্রায় সাড়ে ১৯ শতাংশ তপশিলি জাতি এবং ১.৬৮ শতাংশ তপশিলি জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষের বাস বলে রিপোর্টে উল্লেখ। অসংরক্ষিত (জেনারেল) শ্রেণীর বাসিন্দা সাড়ে ১৫ শতাংশের সামান্য বেশি। কেন্দ্র এবং বিহার-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে সরকারী চাকরি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ওবিসিদের জন্য এখন ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু ওবিসিদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ পেরিয়ে যাওয়ায় এবার আরও বেশি সংরক্ষণের দাবি বিহার থেকে উঠবেই, যা অচিরে ছড়িয়ে পড়বে হিন্দি বলয়ের বাকি অংশে।এর ফলে কেন্দ্রের শাসকদল অস্বস্তিতে পড়বেই। কারণ, বল্গহীন ওবিসি ভজনা করতে গেলে বিজেপির ‘কোর ভোটব্যাঙ্ক’ বলে পরিচিত ক্ষত্রিয়, ভূমিহার, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ এবং বৈশ্যের মতো উচ্চবর্ণের (জেনারেল ক্যাটাগরি) হিন্দুরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবেই। অতএব নীতীশ যে খেলাটার সূচনা করলেন, ভোটমুখী হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানের নির্বাচন তো বটেই, আগামী লোকসভা ভোটেও তা এক্স ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে।মণ্ডল রাজনীতির বিরুদ্ধে বিজেপি-আরএসএস কমণ্ডলুর রাজনীতি শুরু করেছিল।কাশীরাম, মুলায়ম সিংহ যাদব, লালু প্রসাদদের দলিত, ওবিসি রাজনীতির মোকাবিলায় জাতপাত নির্বিশেষে গোটা হিন্দু সমাজকে এককাট্টা করে বিজেপি-আরএসএস রামমন্দির আন্দোলন শুরু করেছিল।১৯৮৯-এ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রধান অশোক সিঙ্ঘল বিহারের দলিত যুবক কামেশ্বর চৌপালকে রামমন্দিরের প্রথম শিলাস্থাপনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। মোদি পরবর্তীতে সেই কামেশ্বরকে রামমন্দির তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য করেন। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগামী বছর জানুয়ারী মাসে রামমন্দির উদ্বোধনের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সেই মন্দির চত্বরে মূলত দলিতদের পূজ্য এমন সাতটি দেব-দেবীর মন্দির তৈরি করে মোদি ভোটের আগে হিন্দুত্বের ছাতার তলায় দলিত, জনজাতি, ওবিসি সবাইকেই একত্রিত করতে চাইছেন।এখানে মুশকিল হল মোদি যখন মণ্ডল বনাম কমণ্ডলু রাজনীতির চূড়ান্ত ফয়সালা করে ফেলতে চাইছেন,তার পাশাপাশি মণ্ডল রাজনীতিও ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে। নীতীশ, লালু প্রসাদ-তেজস্বী, অখিলেশ যাদবরা অনেক দিন ধরেই জাতগণনার দাবি তুলেছেন।সেই কোরাসে গলা মিলিয়েছে কংগ্রেসও। রাহুল গান্ধী কর্ণাটক বিধানসভা ভোটের আগেই জিতনি আবাদি, উতনা হক-র দাবি তুলেছিলেন। বিশ্বকর্মা পুজোর পরে সংসদের বিশেষ অধিবেশনের আগে সনিয়া গান্ধীও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জাতগণনার দাবি তোলেন। অথচ মোদি সরকার জাতগণনার বিপক্ষে।তাহলে কী দাঁড়াল?বিজেপি যখন মোদির ওবিসি পরিচিতি-কে কাজে লাগিয়ে উচ্চবর্ণের সঙ্গে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী বা ওৰিসি ভোটও পাকাপাকিভাবে নিজের ঝোলায় পুরে ফেলতে চাইছে তখন বিরোধীদের লক্ষ্য, ওবিসি-দের জনসংখ্যা অনুযায়ী সংরক্ষণের দাবি তুলে তাতে বাধা দেওয়া। মণ্ডল কমিশন ওবিসি-দের জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ করেছিল। কারণ তপশিলি জাতি, জনজাতির জন্য মোট ২২.৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত।মোট সংরক্ষিত আসন ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারে না। অতএব মোট সংরক্ষিত আসন ৪৯.৫ শতাংশে বেঁধে রেখে ওবিসি-দের জন্য ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করেছিল মণ্ডল কমিশন।তার সঙ্গে ওবিসিদের জনসংখ্যার কোনও সম্পর্ক ছিল না। অথচ ভারতে ওবিসি সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণী। বাস্তবে তারা জনসংখ্যায় ঠিক কত, ৪২ নাকি ৫০ শতাংশ, জাতগণনা হলে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।২০২১-এ যে জনগণনা হওয়ার কথা ছিল, সম্ভবত জনগণনা হলে তার সঙ্গে জাতগণনার দাবি আরও জোরালো হবে আশঙ্কা করে কেন্দ্র তা স্থগিত রেখেছে। বস্তুত, জাতগণনা নিয়ে বিজেপিকে শাঁখের করাতের উপর বসাতে চাইছে বিরোধীরা।একাধারে চাইছে ওবিসিদের জনসংখ্যা অনুযায়ী সংরক্ষণ দিতে গিয়ে সরকার জনতার ক্ষোভের মুখে পড়ুক।অথবা ওবিসিদের সংরক্ষণ বাড়াতে গিয়ে পড়ুক উচ্চবর্ণের ক্ষোভের মুখে। রাজনীতিতে যার সময়জ্ঞান ভবিষ্যতে গবেষণার বিষয় হয়ে উঠতে পারে, সেই নরেন্দ্র মোদি কীভাবে এর মোকাবিলা করেন, ঔৎসুক্য তা নিয়েই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.