চেনা শহরই বদলে যাবে অচিনপুরে।

 চেনা শহরই বদলে যাবে অচিনপুরে।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-আলোর চেয়েও অনেক দ্রুত গতিতে হয়তো বদলে যায় সময়। চোখের সামনেই কেমন খোলনলচে পাল্টে গেছে শহরের। বছর ঘুরেই পুজো আবার হাজির হয়েছে ফেলে আসা একরাশ স্মৃতি সামনে নিয়ে।মহামারির কালো মেঘ কাটার পর বিগত বছরেই ধীরে ধীরে ছন্দ ফিরে পায় রাজ্যের দুর্গোৎসব। আর এ বছর তা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠে সেই পুরোনো আমেজে আবারও মায়ের আরাধনায় ব্রতী হলো রাজধানীর শহরাঞ্চলের বিভিন্ন বনেদি ক্লাব। কী হয়েছে তাদের পুজোর থিম? কোন্ আদলে হচ্ছে প্যাণ্ডেল, বাজেট কত এবং কীইবা রয়েছে এবারের পুজোতে বিশেষ আকর্ষণ? পুজো প্রস্তুতি নিয়ে শহরের বিভিন্ন ক্লাবের উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জেনে নেওয়া হয় আসন্ন দুর্গোৎসব উপলক্ষে তাদের প্রস্তুতির কথা। দুর্গাপুজো আসলে
আমাদের সকলের কাছে এক এক রকমের অনুভূতি।এক একজন এক এক রকমভাবে দুর্গা পুজো পালন করেন, দুর্গাপুজোকে আলাদা আলাদা আঙ্গিকে ভাবেন, সম্পূর্ণ নিজস্ব চেতনায় উৎসবকে উদযাপন করেন। এই সব কিছু মিলিয়েই এই শহরের পুজো পরিক্রমা, আমাদের দুর্গাযাপন।রামঠাকুর সংঘ ঃ চিত্তরঞ্জন রোড এবং পুরাতন গাঙ্গাইল রোড ক্রসিংস্থিত রামঠাকুর সংঘ ক্লাবে এ বছর ত্রিপুরার বাঁশ বেত এবং পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা শিল্পের সমন্বয়ে গড়া কাল্পনিক মন্দিরের উপস্থাপন।পুজোর প্যান্ডেল গড়ছেন পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপ: নিবাসী ভৌমিক ডেকোরেটরের পরিমল ভৌমিক। মূলত ভোকাল ফর লোকালের মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে এবার মূর্তি গড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের স্থানীয় শিল্পী উত্তম চক্রবর্তী সহ অন্যদের এবং আলোকসজ্জায় রয়েছেন বনকুমারী- স্থিত রামঠাকুর ইলেকট্রনিক্সের দীপক দে। আনুমানিক ৩২ লক্ষ টাকার বাজেটে এবারের পুজোতে নবমীর দিনে প্রসাদ বিতরণ সহ হাতে নেওয়া হবে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মসূচি বলে জানান পূজা কমিটির সেক্রেটারি রবীন্দ্র সাহা।প্রান্তিক ক্লাব : রাজধানীর জেল আশ্রম রোডস্থিত প্রান্তিক ক্লাবের প্যান্ডেল মূলত তুলে ধরা হবে বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করা চন্দ্রযান-৩ উপাখ্যান।মণ্ডপের অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপট সাজানো হবে ইসরোর কন্ট্রোল সেন্টারের আদলে। ক্লাব সচিব দিব্যেন্দু দত্তের থিম পরিকল্পনায় মণ্ডপ সজ্জায় রয়েছেন রাজ্যের শিল্পী হরেকৃষ্ণ পাল এবং ভারতমাতার আদলে মূর্তি গড়ার দায়িত্বে আছেন স্থানীয় শিল্পী সুবল পাল।আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকার বাজেটে এ বছরের পুজোতে এর সাথে সাথে হাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড সহ নবমীতে অন্নভোগ বিতরণী অনুষ্ঠান। বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে ষষ্ঠীতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের ছেলে তথা ইসরোর বিজ্ঞানী সুব্রত চক্রবর্তী সহ বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী এবং রাজীব ভট্টাচার্য। একথা জানান ক্লাবের সচিব দিব্যেন্দু দত্ত।
লালবাহাদুর ক্লাব : বেনারসের মণিকর্ণিকা ঘাটের আদলে এ বছর পুজোতে নির্মিত হচ্ছে ক্লাবটির প্যান্ডেল।মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপ থেকে আগত শিল্পী সঞ্জয় দেবনাথ এবং প্রতিমা গড়বেন রাজ্যের শিল্পী প্রদীপ পাল। আনুমানিক ৩৮ লক্ষ টাকার বাজেটে এই পুজোতে বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে স্ক্রিনে থাকছে লাইট অ্যাণ্ড সাউন্ডে মা গঙ্গার উৎপত্তির দৃশ্য। নবমীতে অন্নপ্রসাদ বিতরণ ছাড়াও চতুর্থী অথবা পঞ্চমী থেকে শুরু ক্লাবের দুর্গোৎসবের দিনে থাকছে দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্রদান অনুষ্ঠান। একথা জানান ক্লাবের পুজো কমিটির সেক্রেটারি কমল দেববর্মা।
কুঞ্জবন সেবক সংঘ : শহরের কুঞ্জবন এলাকার কুঞ্জবন সেবক সংঘে এ বছর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে গড়া দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল করা হচ্ছে রকমারি কাঠের পুতুলের ব্যবহার। আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকার বাজেট এবারের পুজোতে হাতে নেওয়া হচ্ছে দুঃস্থদের মাঝে বস্ত্রদান অনুষ্ঠান সহ এলাকার সাফাই কর্মীদের জন্য স্থাপন করা হবে এক বিশেষ ফান্ড। এছাড়া সমাজসেবামূলক কর্মসূচির পরিকল্পনা হাতে রয়েছে বলে জানান পুজো কমিটির সেক্রেটারি বিপ্লব চক্রবর্তী।
অগ্রগামী ক্লাব : রাজধানীর আখাউড়া রোডস্থিত এই বনেদি ক্লাবটির পুজোর থিম এবার ‘জাগ্রত হোক মম্ চিত্তে তৃতীয় দৃষ্টিকোণ।ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ এবং বেত শিল্পের সমন্বয়ে গড়া প্যান্ডেলে আলোকসজ্জার ছটায় ফুটিয়ে তোলা হবে তাদের এই থিম। মণ্ডপ, আলোকসজ্জা এবং প্রতিমা গড়ার দায়িত্বে রয়েছেন রাজধানীর অভয়নগর নিবাসী শিল্পী নীলমণি দেব। পুজোর বাজেট রয়েছে আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকা। নবমীর দিনে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রসাদ বিতরণ ছাড়াও হাতে নেওয়া হবে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মসূচি বলে জানান পুজো কমিটির সম্পাদক সুবিনয় কুড়ি। সভাপতি এবং কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন যথাক্রমে তাপস সাহা এবং সন্দীপ ঘোষ।
চলমান সংঘ : পরিবেশ বান্ধব চিন্তাধারাকে সামনে রেখে এবার প্যান্ডেলে থার্মোকল সহ বিভিন্ন নন বায়োডিগ্রেডেবল সামগ্রী বর্জন করার লক্ষ্য নিয়ে মায়ের আরাধনায় ব্রতী হয়েছেন চলমান সংঘ কর্তৃপক্ষ।সে লক্ষ্য মাথায় রেখে এ বছর প্যান্ডেলে ব্যবহার হচ্ছে গ্লাস ফাইবার, ফাইবারে পেইন্টিং বিশিষ্ট শিল্পকর্ম।মণ্ডপ সজ্জায় রয়েছেন কলকাতার আলোক বণিক এবং প্রতিমা গড়ার দায়িত্বে রয়েছেন কাথির শিল্পী গুরুপদ পাণ্ডা। সাড়ে আট লক্ষ টাকার বাজেট লক্ষ্যমাত্রা রেখে এ বছর পুজোয় হাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি বলে ক্লাব তরফে জানান নবারুণ সেনগুপ্ত।শিবনগর মডার্ন ক্লাব ও আমরা তরুণ দল : শিবনগর এলাকাস্থিত শিবনগর মডার্ন ক্লাব ও আমরা তরুণ দল ক্লাবের প্যান্ডেল গড়া হবে বৃন্দাবনের প্রেম মন্দির অনুকরণে। প্যান্ডেলের দায়িত্বে আছেন পশ্চিমবঙ্গের নারুগোপাল দাস এবং মূর্তি গড়বেন মৃৎশিল্পী সঞ্জিত দেবনাথ। আনুমানিক ৩৫ লক্ষ টাকার বাজেট নিয়ে এ পুজোতে আলোক সজ্জার দায়িত্বে থাকছেন রাজ্যের মৃণাল কান্তি গোস্বামী। ক্লাব তরফে জানানো হয় পুজোর অনুষ্ঠান মূলত এলাকার মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত হলেও নবমীতে রয়েছে প্রসাদ বিতরণ অনুষ্ঠান। এছাড়াও পুজো কমিটির সচিব হিসাবে থাকছেন শ্যাম দেব।ফ্লাওয়ার্স ক্লাব : শহরের মঠ চৌমুহনী এলাকাস্থিত ফ্লাওয়ার্স ক্লাবে এবারে পুজো মণ্ডপ গড়া হবে ভ্যাটিকান সিটির আদলে। আনুমানিক ৪৫ লক্ষ টাকার বাজেটে এবারের পুজোর মণ্ডপ সজ্জায় রয়েছেন পশ্চিম বঙ্গের শিল্পী কোমল সাধক। এছাড়াও মূর্তি গড়ার দায়িত্বে আছেন কুমোরটুলির শিল্পী নাড়ুগোপাল। সামাজিক দায়বদ্ধতাকে সামনে রেখে সপ্তমীর দিনে দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান ছাড়াও ক্লাব কর্তৃপক্ষের তরফে রাজধানীর সেরা দশটি ক্লাবকে পুরষ্কৃত করা হবে বলে জানান ক্লাব সেক্রেটারি গৌতম বণিক। এছাড়াও বিগত বছরে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্বারা প্রেরিত শংসাপত্র এ বছরে ক্লাব স্মরণিকায় প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি। ক্লাবের সভাপতি অমিত ধর ছাড়াও এবারের পুজো কমিটির সম্পাদক হিসাবে রয়েছেন রাজীব ধর এবং সভানেত্রী হিসাবে আছেন নিদ্ৰা সাহা বলে জানানো হয় ক্লাব তরফে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.