ইডিকে ঝাঁকুনি!!

 ইডিকে ঝাঁকুনি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কেন্দীয় গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কে ব্যবহারের অভিযোগ এ দেশে নতুন ঘটনা নয়।কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন সময়ে তার বন্ধুদের বাঁচাতে আর শত্রুদের টাইট দিতে নানা কায়দায় নির্লজ্জভাবে দেশের স্বশাসিত তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার করেছে।এই অভিযোগ বারবার বিভিন্ন সময়ে শুনতে পাওয়া গেছে।

নরসিমা রাও,লালুপ্রসাদ যাদব,জয়ললিতা, মায়াবতী, মুলায়ম সিং যাদব, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সিবিআইকে অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে নানা সময়ে। আসলে কংগ্রেস দলই হোক কিংবা হাল আমলের বিজেপি –সব সরকারের শাসন আমলেই কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সংস্থা এবং আর্থিক ও অন্যান্য অপরাধ সংক্রান্ত তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। মূলত বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করতেই এই সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করা হতো এবং এখনও হচ্ছে। কংগ্রেস আমলে অনেকে মজা করে সিবিআইকে কংগ্রেস বাঁচাও ইনস্টিটিউশন বলেও গালি দিতেন। মনমোহন সিং-এর শেষ পাঁচ বছরে ইউপিএ-টু জমানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে বলা হতো কংগ্রেস ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন সময়ের হাত ধরে ক্ষমতার পালাবদলের পর

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেখা গেল,শুধু একা সিবিআই নয়।এবার কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সিবিআইয়ের পাশাপাশি ইনকাম ট্যাক্স (আইটি) এবং ইডি দুটোই বিরোধী দলকে শায়েস্তা করতে ময়দানে নেমেছে। সিবিআইয়ের কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এবং কয়লা কেলেঙ্কারির খসড়া রিপোর্টে অদল বদলের চেষ্টার ঘটনা দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সময়ে প্রকাশ্যে আসতেই তা জানতে পেরে রীতিমতো অসন্তোষ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট।২০১৩ সালে ৯ মে শীর্ষ আদালত তখন মন্তব্য করেছিলেন, তদন্তকারী সংস্থাকে অপরিসীম ক্ষমতা দেওয়া বিপজ্জনক ঘটনা। এতে তদন্তকারী সংস্থা পাগলা ঘোড়া হয়ে যায়। কিন্তু এখন সিবিআই তো খাঁচার বন্দি তোতা পাখি। তার অনেক মনিব। সুপ্রিমকোর্টের এই পর্যবেক্ষণের পর ন বছর কেটে গেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এতটুকুও বদলায় নি। বরং আরও বিপজ্জনক চেহারা নিয়েছে।কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে প্রভু ভক্তির অভিযোগ আরও উচ্চগ্রামে শোনা যাচ্ছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের আগে অর্থাৎ কংগ্রেস শাসন আমলে বিশেষ করে ইউপিএ মনমোহন সরকারের জমানায় ইডি, সিবিআইয়ের নজরদারিতে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের ৬০ ভাগই ছিলেন বিরোধী শিবিরের। আর বর্তমানে মোদি সরকারের এনডিএ জমানায় সেটাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ ভাগ। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে বিরোধীদের উপর আক্রমণ বেড়েছে এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে বেছে বেছেই প্রতিপক্ষ শক্তিকে ঘায়েল করতে মাঠ নামানো হচ্ছে।এর মানে হল বিতর্ক কমেনি,বরং প্রতিহিংসা আরও বেড়েছে।সর্বভারতীয় একটি পত্রিকার সমীক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল, নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বে যতি ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স তল্লাশি হয়েছে এর ৯৫ ভাগ বিরোধী নেতাদের বাড়িতে
হলেও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি বা কনভিকশনের হার একেবারেই নগণ্য।এর অর্থই হলো প্রতিপক্ষকে হয়রাণী।


বুধবার এমনই একটি আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ইডির করা দুই ব্যক্তির গ্রেপ্তারি খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিমকোর্ট দেশের অন্যতম আর্থিক দূর্নীতির তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে যে কড়া ভাষায় ঝাঁকুনি দিলেন তা নিঃসন্দেহে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও আগামির জন্য বড়সড় বার্তা। মাননীয় সর্বোচ্চ আদালত সাফ জানিয়েছেন, তদন্তকারী সংস্থার তদন্ত কখনোই প্রতিহিংসা পরায়ণ হতে পারে না। ইডি তাদের তদন্তে স্বচ্ছতা রেখে ন্যায্যভাবে কাজ করবে এটাই সবাই আশা করে। কিন্তু ইডির কাজ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাদের কাজে ব্যর্থ এবং তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।একটি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের তোলা ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নিঃসন্দেহে মারাত্মক ঘটনা। মনে রাখতে হবে, আজ থেকে কয়েক বছর আগে এক স্মারক বক্তৃতা সভায় সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এনভি রামান্না দেশের তদন্তকারী সংস্থাগুলোর অবনমন ও অপপ্রয়োগ সম্পর্কে কিছু কঠোর মন্তব্য করেছিলেন।তিনি বলেছিলেন, আমরা ভারতীয়রা স্বাধীনতাপ্রিয়। যখনই কোন চেষ্টা হয়েছে সেই স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার, সতর্ক ভারতীয়রা এতটুকুও দ্বিধা করেনি সেই একনায়কের ক্ষমতা কেড়ে নিতে। তাই পুলিশ ও তদন্তকারী সব সংস্থা সহ দেশের সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটা খুবই জরুরি, তারা যেন সবকিছুর আগে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে স্থান দেয়। কারণ আমাদের সমাজের বহুত্ব তার উজ্জ্বল বৈচিত্রের সঙ্গে একনায়কতন্ত্র খাপ খায় না। বুধবার মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট ইডির মামলায় শুধু একা ইডি নয়, দেশের তাবড় তদন্তকার সংস্থাগুলোকে যে বার্তা দিয়েছেন তা যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী। ভুলে গেলে চলবে না শাসক দল আসবে, চলেও যাবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান থাকবে। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থেই প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে হবে ।তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.