আনন্দোৎসব!!

 আনন্দোৎসব!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-পৃথিবীর সব আকাশ থেকে আকাশে বেজে উঠছে উৎসবের বাজনা,কবিতায় লিখেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।পুজো মানেই নস্টালজিয়ায় ডুব।ইদানীং দুর্গাপুজো নিয়ে অনেকেই আপত্তি তোলেন যে,বাঙালি পুজোর সময় নিরামিষ খায় না,যথেষ্ট পরিমাণে ব্রাহ্মণ্যবাদী আচার পালন করে না ইত্যাদি।তার সঙ্গে হয়তো আরও একটি অভিযোগ জুড়বে। দেবীপক্ষের সূচনা হওয়ার আগেই ধর্মমতে পুজোর উদ্বোধন করা চলে কি না,তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে উত্তেজিত তর্কও জুড়েছে।তর্কটি অবান্তর কারণ ষষ্ঠীর দিন বোধনের মাধ্যমে দেবীমূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার যে বিধি, অন্য কোনও পুজোর সূচনা সেভাবে না।

দুর্গাপুজো এখানেও নিজ আচারে স্বকীয়তায় ভাস্কর।বছরের নানা সময় কত দেবদেবীর পুজো হয়।কিন্তু দুর্গাপুজোকেই শুধু ‘পুজো’ বলা হয়।পুজো মানে সর্বধর্মসমন্বয়।দুর্গাপুজো, প্রকৃত প্রস্তাবে, উৎসব।তাকে বিশ্বের বৃহত্তম গণ-উৎসব বললেও অত্যুক্তি হয় না।সেই উৎসবে ধর্ম আছে নিশ্চয়ই, কিন্তু প্রকৃত বাঙালিমাত্রই সাক্ষী দেবেন যে,তার কেন্দ্রস্থলে রয়েছে সারা বছর ধরে আনন্দের অপেক্ষার অবসান।বহু মানুষ সকাল থেকে উপোস করে মহাষ্টমীর অঞ্জলি দেন,কিন্তু সেই আচারেরও সিংহভাগ জুড়ে থাকে প্রজন্ম তেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত এক অভ্যাস।এখানেই দুর্গাপুজোর বিশেষত্ব।এই পুজোয় নিষ্ঠা আছে, ধর্মীয় বিধিসম্মত প্ৰথা আছে, কিন্তু তার বাড়াবাড়ি নেই, আতিশয্য নেই। উদারপন্থার এমন মহতী উৎসব ভূ-ভারতে আর কোথাও নেই।হিন্দু ধর্মের দুর্গাপুজো,অথচ বহু জায়গায় সমদৃষ্টিতে মাতোয়ারা হয়ে উঠে অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের মালদহের কোতোয়ালি থানা এলাকায় ১২৬২ বঙ্গাব্দে চালু হওয়া সেনবাড়ির ঐতিহ্যময় দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীতে প্রতি বছর নিয়ম মেনে পুষ্পাঞ্জলি দেয় প্রাক্তন রেলমন্ত্রী গণিখান চৌধুরীর পরিবার।ওই পরিবারের বর্তমানে দুই সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী,মৌসম বেনজির নূর, বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরী অঞ্জলি দেওয়ার পাশাপাশি সকলের সঙ্গে পাত পেড়ে বসে মায়ের ভোগ খান।এমন দৃষ্টান্ত অজস্র।ক্ষেত থেকে রহমান, মকবুলদের হাত ঘুরেই ফুল জড়ো হয় মাতৃমূর্তির রাতুল চরণে।দুর্গোৎসব মানে মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলনের হাট।সেই মিলন কেবল বাইরের নয়, অন্তরেরও।তা কেবল নিছক উৎসবের নয়, একই সঙ্গে কর্তব্যের। সেই পুজোর মঞ্চকে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহৃত হতে দেখে মন্দ লাগে, এতে উৎসবের মাহাত্ম্য ক্ষুণ্ণ হয় বইকি। সরকারী ব্যবস্থাপনায় মন্ত্রীদের পুজো উদ্বোধনের চল আগে ছিল না, এই প্রথাও পুজোর নির্মল আনন্দের সঙ্গে কোথাও গিয়ে বেমানান ঠেকে। আগে পুজোর সময় মানুষের আরও একটি আকর্ষণ ছিল নতুন যাত্রাপালার খবর। কিন্তু কালক্রমে তার বদলে নেতানেত্রীদের সৌজন্যে যেভাবে রাজনৈতিক পালা মঞ্চস্থ হচ্ছে পুজোর মণ্ডপ ঘিরে, তা কি আদৌ অভিপ্রেত?কী দেখব এবং কী দেখব না, সেটা অবধারিতভাবেই আমাদের ভাবনায় ছায়া ফেলে। যতদিন যাচ্ছে অনেকের দেখার পরিধি ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। সমাজে যাদের প্রতিপত্তি আছে, বিভিন্ন বিষয়ে ‘ভয়েস’ আছে, সেই বর্গটির দৈনন্দিন জীবন ক্রমশই শ্রমজীবী মানুষের বিরাট বিস্তীর্ণ জগৎ থেকে আরও বেশি করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আমাদের এই বিচ্ছিন্নতার সুযোগে ক্ষমতার অধীশ্বরেরা আমাদের দৃষ্টি ও বোধকে অনায়াসে নিজেদের মতো করে গড়েপিটে নিচ্ছেন। আমরা তাদের চোখ দিয়ে দেশকে চিনছি, দেশের উন্নয়নকে চিনছি, বিশ্বাস করছি যে এটাই বাস্তববাদের নির্দেশ।প্রদীপের নীচে অন্ধকার আরও জমাট বাঁধছে, পিলসুজের গা বেয়ে আরও তেল গড়াচ্ছে, যা আমাদের সমধিক গুরুত্বে দেখা উচিত। কিন্তু যেহেতু দেখছি না, তাই প্রশ্নও তুলছি না। প্রশ্ন তুলছি না বলেই স্থিতাবস্থার ফাঁস আরও জমাট হচ্ছে।”শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ বলছেন, শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃততস্য পুত্রা, আ যে ধামানি দিব্যানি তন্তু। বাংলায় এর অর্থ হতে পারে, শোনো বিশ্বজন, শোনো অমৃতের পুত্র যত দেবগণ দিব্যধামবাসী, তিনিই পথপ্রদর্শক যিনি আঁধারেও জ্যোতির্ময়। মা দুর্গার অপর নাম তাই জ্যোতির্ময়ী।রূপভেদে তিনিই ছিন্নমস্তা, ত্রিপুরেশ্বরী, ভৈরবী, সর্বমন্ত্রময়ী। তিনিই পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ। তাই তাঁর মর্ত্যে আগমন এতো নির্মল, এতো আনন্দের।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.