ধোঁয়াশায় বিপদে দিল্লী!!
ভয়ঙ্কর বায়ুদূষণের কবলে পড়ে দিল্লীর এখন জেরবার দশা।এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছে না দিল্লী।বরং দিল্লীর পরিস্থিতি যত দিন যাচ্ছে ততই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এককথায় ত্রাহি ত্রাহি রব অবস্থা।পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে সোমবার শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ম্যাচ হবে কি না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছিল।তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হয়েছে।তবে ম্যাচের আগে দূষণের জন্য প্র্যাকটিস বন্ধ রাখতে হয়েছিল।দেশের রাজধানী অঞ্চল দিল্লীসহ সংলগ্ন হরিয়ানা,উত্তরপ্রদেশ এই দূষণের শিকার।গত কয় বছর ধরেই এটি একটি সমস্যা। বিশেষ করে বর্ষার পরবর্তীতে শীত শুরুর সময়টাতে এই ভয়ঙ্কর দূষণের কবলে পড়ে দিল্লী।এর কারণ একদিকে দিল্লীর যানবাহন, অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশে ফসলের গোড়া পোড়ানো।এর জেরে ধোঁয়া চলে আসে দিল্লীতে।ফলে দিল্লীতে দূষণের মাত্রা ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে যায়।এর সাথে যোগ হয় ধুলোবালি কণা।ফলে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয় দিল্লীজুড়ে এবং এই দূষণের জেরে দিল্লীর স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়।যেন থমকে দাঁড়ায় দিল্লী।স্কুল, কলেজ বন্ধ দিতে হয় সরকারকে।ধোঁয়াশার জেরে গাড়িঘোড়া চলতে অসুবিধা হয়।দৃশ্যমানতা কমে যায়।সূর্য নেই। পরিবেশবিদরা এ নিয়ে দিনদিনই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।কিন্তু এতে আখেরে লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। পাঞ্জাব দূষছে হরিয়ানাকে, হরিয়ানা দুষছে পাঞ্জাবকে। দিল্লী দোষারোপ করছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশকে।প্রতি বছরই এই সময়টাতে দিল্লীতে দূষণের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। যার ফল ভোগ করতে হয় দিল্লীবাসীকে।দিল্লীর আপ সরকার প্রশ্ন তুলেন পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির ভূমিকা নিয়ে। আপ সরকারের অভিযোগ, পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা সরকার কোন নিয়ম মানছে না।কেন্দ্র পর্যন্ত গড়িয়েছে বিষয়টি।দিল্লীর তরফে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।দ্বিতীয়ত দিল্লীতে কয়েক লক্ষ গাড়ি চলাচল করে প্রতিদিন।শুধু দিল্লীই নয়, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রচুর গাড়ি এবং কয়েক লক্ষ লোক প্রতিদিন দিল্লীতে প্রবেশ করে কাজকর্মের জন্য।এতে দিল্লীর উপর বেজায় চাপ বাড়ছে। দিল্লী বিশ্বের দূষণতম পাঁচটি শহরের মধ্যে একটি।সাম্প্রতিক ধোঁয়াশার কারণেও দিল্লীর স্বাভাবিক পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটছে।তবে প্রতি বছর এই পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হচ্ছে তা ভেবে দেখা দরকার কেন্দ্র এবং দিল্লী সরকারকে।প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির সাথে সমন্বয় কমিটি গড়ে তোলা দরকার এবং এ নিয়ে আলাপ আলোচনা চালানো দরকার।দিল্লীতে এই ভয়ঙ্কর দূষণের কবল থেকে সাময়িক মুক্তির জন্য মানুষকে প্রাইভেট গাড়ি কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। পরিবর্তে গণপরিবহণ ব্যবস্থা যেমন মেট্রো নির্ভর হতে হবে মানুষকে।প্রতি বছরই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দিল্লী সরকার স্কুল, কলেজ ছুটি দিয়ে দেয়, তেমনি জোড়, বিজোড় নম্বরের গাড়ি চালানোর নির্দেশিকা জারি করে ইত্যাদি ইত্যাদি।এতে সাময়িক হয়তো সামান্য এর থেকে স্বস্তি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে দূষণের প্রকোপ কমতে থাকে। যদিও শীতের সময় আরেক সমস্যা এসে হাজির হয়,তা হলো কুয়াশা।কুয়াশার জেরেও প্রতি বছর দিল্লীতে প্রচুর দুর্ঘটনা হয়।রেল, বিমান, সড়ক পরিবহণে বিঘ্ন ঘটে।দিল্লীর এই দূষণ চিন্তা বাড়াচ্ছে পরিবেশবিদদেরও। কেননা প্রতি বছর এই সময়ে এই ধোঁয়াশার কারণে প্রচুর পর্যটকও এতে অসুবিধা বোধ করেন।দিল্লী দেশের রাজধানী অঞ্চল।এখানে কেন্দ্রীয় সমস্ত মন্ত্রীরা থাকেন।সাংসদরা থাকেন।বিভিন্ন দূতাবাসে বিদেশি কূটনীতিকরা থাকেন। দিল্লী দেশের রাজধানী হওয়ায় এই শহরই দেশের প্রধান চালিকাশক্তি।অর্থাৎ এখান থেকেই দেশের শাসনভার নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং সর্বাগ্রে দিল্লীকে রক্ষা করা দরকার।দিল্লীর এই ভয়াবহ দূষণ মোকাবিলার জন্য কেন্দ্র এবং দিল্লী সরকারকে অচিরেই একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির সাথেও কথাবার্তা বলা দরকার। প্রতিবছরই দিল্লীর দূষণ এভাবে চলে,আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবাই তা ভুলে যায়। সুতরাং এর দীর্ঘমেয়াদি ভাবনাচিন্তা দরকার।কেন্দ্র এবং দিল্লী সরকারকে মিলেমিশে এরজন্য সঠিক উদ্যোগ নেওয়া আশু প্রয়োজন।