দরদ!!

 দরদ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিধানসভা ভোটের প্রচারের মধ্যেই ঝাড়খণ্ডে বীরসা মুণ্ডার জন্মস্থান উলিহাটু গ্রামে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ, বুধবার বীরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকীতে সেখান থেকেই ‘বিকশিত ভারত সঙ্কল্প যাত্রা’-র সূচনা করবেন তিনি।

দুই মাসের এই প্রচার কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছতে আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে তিন হাজার প্রচার রথ পৌঁছবে।প্রচারের মূলমন্ত্র হবে “হর ঘর মোদি’।একই সঙ্গে আজ থেকেই বিশেষভাবে দুর্বল জনজাতি সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

বীরসার জন্মদিবসকে আগেই মোদি সরকার “জনজাতীয় গৌরব দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।এ-হেন উদ্যোগে যদি প্রকৃতই আদিবাসীদের জীবনের মানোন্নয়ন ঘটে, তাদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়,এর চেয়ে সুসংবাদ কিছু হয় না।আদিবাসীদের স্বাধীন ভারতের সর্বাপেক্ষা বঞ্চিত শ্রেণী বললে অত্যুক্তি হয় না। তাদের স্বভূমি থেকে উৎখাত করার,’উন্নয়ন’-এর বুলডোজার দিয়ে ক্রমাগত তাদের উচ্ছেদ করে চলার ইতিহাস কোনও লুকোছাপার বিষয় নয়।উন্নয়ন-উচ্ছেদের প্রকোপে দেশের (জনসুমারির হিসাবে)দশ কোটি আদিবাসীর এক বিপুল অংশ আর্থিক স্বক্ষমতায়, পুষ্টিতে, স্বাস্থ্যে, শিক্ষায়, জীবনের আরও নানা ক্ষেত্রে চলমান বঞ্চনার শিকার।রাষ্ট্রের নিরাবরণ মদতে অতিকায় পুঁজির দিগ্বিজয়ী অভিযান যত প্রবল হয়ে উঠেছে,ততই রচিত হয়েছে নতুন নতুন উৎখাতকাহন।ভারতীয় অর্থনীতি ও রাজনীতি এখন যে মাৎস্যন্যায়ের পথে প্রলয়বেগে ধাবমান, আদিবাসীদের ক্রমশ বেড়ে চলা দুর্দশা এরই একটি অঙ্গ। কিন্তু শুধুমাত্র দারিদ্র এবং আর্থিক দুরবস্থা দিয়ে এ দেশের আদিবাসী সংকটের সম্পূর্ণ বৃত্তান্তকে ধরা যাবে না।সেই বৃত্তান্তে নিহিত আছে এক সমৃদ্ধ জীবনধারার প্রাণরস শুকিয়ে যাওয়ার সংকট, একরর ঐশ্বর্যবান জীবনাদর্শের শিকড়ে প্রচণ্ড আঘাত পড়ার সংকট।এই সংকটের পেছনে আছে এক মৌলিক সংঘাত।আদিবাসী মানুষ প্রকৃতিকে,বনভূমিকে, নদী ও পাহাড়কে যেভাবে দেখে এসেছেন,যেভাবে নিজেদের সেই প্রতিবেশের অঙ্গ বলে জেনে এসেছেন,তা এই জীবনচর্যা ও তার অন্তর্নিহিত আদর্শেরই অনুশীলন।স্মরণে রাখা দরকার, আদিবাসী অধিকার হরণেই নিহিত আছে বিশ্ব উষ্ণায়ন,বৃষ্টিপাতের শৃঙ্খলা কিংবা ভূমিক্ষয়ের মতো সর্বজনীন বিপদ।আদিবাসী মানুষকে সর্ব অর্থে প্রান্তিক করে দেওয়ার অভিশাপ আমাদের জন-বিচ্ছিন্নতার একটি দিক।এই বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটিয়ে যথার্থ সংযোগের সেতু যদি বাঁধতে পারতাম, তাহলে হয়তো রাইসিনার পাহাড়ে আদিবাসী ভারতের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হতো না।এ দেশে আদিবাসীর অবস্থান যদি প্রান্তিক না হতো,তা হলে আলাদা করে রাষ্ট্রপ্রধানের আদিবাসী পরিচয়কে দেশ ও দুনিয়ার সামনে তুলে ধরারও হয়তো দরকার হতো না। প্রয়োজন পড়তো না আলাদা করে ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ পালনের।বৃহৎ পুঁজির আগ্রাসী অভিযানের বিরুদ্ধে আগে আদিবাসীরা যেটুকু রক্ষাকবচ পেয়েছিলেন, বর্তমান জমানায় তাও অপহৃত। ইউপিএ জমানায় ওড়িশায় নিয়ামগিরি পাহাড়ে আদিবাসীদের জমি দখল করে বেদান্ত শিল্পগোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু হলে বিরোধিতা করেছিলেন খোদ রাহুল গান্ধী। পরে, মনমোহনের আমলেই আদিবাসীদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কার্যকর হয়েছিল ‘অরণ্যের অধিকার আইন-২০০৬’। তাতে বলা হয়েছিল, অরণ্যবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার থাকবে জঙ্গলে। পরিকাঠামো তৈরি বা শিল্পের জন্য জঙ্গল কাটার প্রয়োজন হলে জঙ্গলের উপরে নির্ভরশীল আদিবাসী বা তপশিলি জনজাতির মানুষের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিলো ওই আইনে।সেই সঙ্গে বেসরকারী প্রকল্পের প্রয়োজনে বনভূমি কেটে ফেলতে হলে স্থানীয় আদিবাসী মানুষের অনুমোদন নেওয়ার আইনি দায় ছিলো।কিন্তু মোদি সরকারের আমলেই, গত বছর ডিসেম্বরে সংসদে পাস হওয়া বিলে সেই শর্ত শিথিল করে স্থানীয় আদিবাসী মানুষের অনুমোদন নেওয়ার দায় থেকে উদ্যোগীদের কার্যত অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন সরকারী অনুমতি পেলেই অরণ্য নির্মূল করতে কোনও বাধা নেই। বিনিময়ে শুধু মূল্য ধরে দিলেই পথ নিষ্কন্টক।পরিশেষে তবুও বলার,কোনওরকম নেতিবাচকতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে সভ্য সমাজ আশা নিয়েই বাঁচে।স্বাধীনতার সাড়ে সাত দশক পেরিয়ে এসে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আজ নরেন্দ্র মোদি বীরসা মুণ্ডার জন্মস্থানে যাচ্ছেন।এভাবেই আদিবাসীদের প্রতি ক্ষমতাতন্ত্রের আরও, আরও মনোযোগী হয়ে থাকা দরকার।তবে অবশ্যই তা নির্বাচনে জয়লাভের উদ্দেশ্যে নয়, আদিবাসীদের স্বার্থে, তাদের প্রতি প্রকৃত দরদে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.