বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারী ভোট বিএনপির প্রত্যাখ্যান, আশঙ্কা!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর ৭ জানুয়ারী।বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুর আউয়াল জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের এ তারিখ ঘোষণা করেন।বাংলাদেশের সব টেলিভিশন ও রেডিওতে এ ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।তবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরপরই বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচন হলে তা প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে।প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার ভাষণে জানান, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আগামী ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারী সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে।তিনি সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।এ সময় তিনি সংবিধান ও আইনের আলোকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারী।সংবিধান অনুযায়ী, তার আগে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ করতে হবে।সেই হিসাবে গত ১ নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে।২৯ জানুয়ারীর মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকত আছে।এদিকে বেশ কয়েকটি বিরোধী দল বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না ঘোষণা করে ঘোষিত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে যাবে না জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, নির্ঘন্ট জারি হলেও নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না’।বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের নির্ঘন্ট জারির পর এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানান রিজভী। রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনের ভাষা প্রধানমন্ত্রীর ভাষারই প্রতিফলন।নির্ঘন্ট জারির মাধ্যমে জাতির সঙ্গে তামাশা করেছেন তিনি। সরকার আবারও একদলীয় নির্বাচন করার নীলনকশা করছে। এই কমিশনের মূল উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগ সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আনা।এই কমিশন যদি নিরপেক্ষ হতো তাহলে জনমত উপেক্ষা করে নির্ঘন্ট জারি করতো না। নির্ঘন্ট জারি হলেই নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার সারা দেশে হরতাল আহ্বান করেছে।
যদিও বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘন্টার অবরোধ চলছে।এদিকে নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘোষিত নির্ঘন্টের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল করেছে।সন্ধ্যার পর ঢাকার রাজপথে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের নির্ঘন্টকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন সড়কে মিছিল বের করে। তারা নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়ে সবাইকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। অন্যদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মীরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে মিছিল করেছে।নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার আগে থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন অফিস, সচিবালয়সহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতার আশঙ্কায় বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী অবস্থান নিয়েছে।এত নিরাপত্তা গ্রহণ করা হলেও বিরোধী দলগুলো ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও- ভাঙচুর করে নির্বাচন ঠেকাতে চেষ্টা করবে মনে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।বিভিন্ন সংগঠন সন্ত্রাসী তৎপরতার আশঙ্কা প্রকাশ করে সবাইকে শাস্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।তবে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা সত্য প্রমাণ করে ইতিমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে।বিরোধী নেতা-কর্মীরা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে। নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা করার পর ব্যাপক সংঘাত হতে পারে আশঙ্কা করে সন্ধ্যার আগে থেকেই ঢাকার রাজপথে গণপরিবহণ ও ব্যক্তিগত যানবাহন অনেক কমে গেছে।এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে সংঘাত- সংঘর্ষের খবর আসছিল।