দুই ‘নায়ক’!!

 দুই ‘নায়ক’!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে তিনটি পুরস্কার সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিযোগিতার সেরা, ফাইনালের সেরা এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা।গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনকে যদি সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিযোগিতার আসর হিসাবে দেখতে হয়, এবং চারটি বড় রাজ্যের বিধানসভার ভোটকে যদি ‘বিশ্বকাপ’ বলে ধরে নেওয়া যায়, তবে পে- লয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট তর্কাতীত ভাবে একজনই নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে, বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশে নিজের নামের প্রচার চালানোর ঝুঁকির কৌশলে নেমে বিজেপির তুমুল বিজয় প্রথমত এবং প্রধানত প্রধানমন্ত্রীরই কৃতিত্ব। কিন্তু তার পরেও আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ‘পুরস্কার’ বাকি থাকে।চার রাজ্যের নির্বাচনে যারা নিজস্ব কৃতিত্বে ভাস্বর।

ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় এক এবং অদ্বিতীয় মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান।দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে প্রায় দ্বাদশ খেলোয়াড়ের তালিকায় চলে গিয়েও কী ভাবে জয়টিকা শোভিত হয়ে ফিরে আসা যায়,দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। মাস দুয়েক আগেও দৃশ্য প্রবল প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়ায় দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল মধ্যপ্রদেশের বিজেপি শিবির।এমনকী ওই রাজ্যের রাজনীতির সর্বাধিক জনপ্রিয় এই ব্যক্তিটি, জনমানসে যিনি ‘মামাজি’ নামে অধিক পরিচিত, ভোটের টিকিট পাবেন কিনা তা নিয়েও ছিল প্রবল অনিশ্চয়তা।মধ্যপ্রদেশের ভোটের প্রচারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তাকে কোনও গুরুত্বই দেননি, বরং পদে পদে হেনস্তাই করেছেন।দিল্লী থেকে আধ ডজন মন্ত্রী- সাংসদকে মধ্যপ্রদেশে পাঠিয়ে মামাজির ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলেছেন।শাসককুলের এমন দিশাহীন অবস্থা দেখে প্রতিপক্ষ কংগ্রেস নেতৃত্ব ধরেই নিয়েছিলেন গো-বলয়ের অন্যতম বৃহৎ এই রাজ্যটিতে পালাবদল নিশ্চিত।

এতৎসত্ত্বেও শেষ হাসিটা কিন্তু শিবরাজই হাসলেন।বুথ ফেরত একাধিক সমীক্ষা মধ্যপ্রদেশে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইশেষে গেরুয়া শিবিরকে কিছুটা বাড়তি নম্বর দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু সেটা যে সুনামির মতো আছড়ে পড়তে চলেছে, বিজেপির অতি বড় সমর্থকও সম্ভবত ভাবতে পারেননি।

দুই দশক আগে, ২০০৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় এবারে বিজেপির আসনপ্রাপ্তি সামান্য কম হলেও,ভোট প্রাপ্তির শতকরা হিসাবে এবার ওই রাজ্যে সেরা ফল করেছে বিজেপি।এমন অবিশ্বাস্য সাফল্যের পরে শিবরাজকে সরিয়ে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে কিনা কয়েক দিনে মধ্যে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।যদি তা হয়, রাজনীতির নিকৃষ্টতম অবিচার হিসাবে ইতিহাসে তা চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

শিবরাজ প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হলে ‘সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পাবেন দক্ষিণী রাজনীতির উদীয়মান তারকা, তেলেঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি। বিজেপি, তেলেগু দেশম পার্টি, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি সব ঘাটের জল খেয়ে কংগ্রেসে এসে দলকে অপ্রত্যাশিতভাবে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য এই পুরস্কার তারই প্রাপ্য। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ ভারত থেকে কার্যত সাফ হয়ে গেল বিজেপি,রেবন্ত এবং রাজশেখর রেড্ডির কন্যার হাত ধরে এবার অন্ধ্রপ্রদেশেও প্রবেশের পথ উন্মুক্ত হলো কংগ্রেসের সামনে।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি দেশের ক্ষমতাদণ্ড ধারণের অব্যবহিত পরেই অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে পৃথক রাজ্য হিসাবে তেলেঙ্গানা আত্মপ্রকাশ করলেও এই রাজ্য গঠনের নেপথ্য কারিগর সোনিয়া গান্ধী।কিন্তু সেই আবেগ কংগ্রেস কোনওদিন কাজে লাগাতে পারেনি কারণ দক্ষ নেতৃত্বের অভাব।২০১৪ সালের পর থেকে তেলেঙ্গানায় যে নেতাকে অপরাজেয় বলে মনে হয়েছিল,সেই কে চন্দ্রশেখর রাও বা কেসিআর-কে ধরাশায়ী করার কাজটি ছিল অতীব কঠিন। এক বছর আগেও এ রাজ্যে কংগ্রেসের পরিস্থিতি ভালো ছিল না। একটি উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীরা জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। সর্বোপরি ছিল কংগ্রেসের ট্রেডমার্ক গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।গত ডিসেম্বর মাসে, অর্থাৎ ভোটের এগার মাস আগে বয়সে অপেক্ষাকৃত নবীন, সুবক্তা, জনপ্রিয় এবং অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ভরপুর মালকাজগিরি কেন্দ্রের দলীয় সাংসদ রেবন্তকে সামনে নিয়ে আসে কংগ্রেস হাইকমাণ্ড। তাকে করা হয় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ যে ভুল করেছেন, রেবন্ত তার ঠিক উল্টোটা করেছেন। কমল নাথ প্রচারে আগাগোড়া পরনিন্দায় নিবিষ্ট থেকে নিজের দলের নেতৃত্বের বিরোধিতা করেছেন। ভেবেছেন, রাহুল গান্ধী প্রমুখের বক্তব্যের বিপরীতে গিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর হিন্দুত্বের লেজ ধরে বিজেপির প্রথম শ্রেণীর হিন্দুত্ববাদকে টেক্কা দেওয়া যাবে।

সেখানে রেবন্ত যুগপৎ প্রিয়াঙ্কা ও রাহুল গান্ধীকে সঙ্গে নিয়ে কালঘাম ছুটিয়েছেন।অত এব ‘ব্র্যান্ড মোদি’ বাদ দিলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনের বড় আসরে দ্বৈত ‘নায়ক’ তাই শিবরাজ এবং রেবন্ত।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.