ব্র্যান্ড মোদি ও কোন্দল!!

 ব্র্যান্ড মোদি ও কোন্দল!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সব কিছু ঠুকঠাক থাকলে আগামী তিন চার মাসের মধ্যেই দেশে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে সদ্য সমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট ছিল দেশের রাজনৈতিক আঙিনায় সেমিফাইনালের মতো।

এই পাঁচ রাজ্যের ভোটে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি তিন রাজ্যে দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে ফের মসনদ দখল করেছে বিজেপি। এরমধ্যে রাজস্থান ও ছত্তিশগড় কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে আনা এবং মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখা বিজেপিকে আগামী লোকসভা ভোটে বাড়তি মাইলেজ দেবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কেননা, এই তিন বড় রাজ্যে বিজেপির দাপুটে জয়ে, বিজেপিবিরোধী ইন্ডিয়া জোটে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। লোকসভা ভোটের আগে ওই জোট কতটা ধাক্কা সামলে উঠতে পারবে সেটাই এখন সবথেকে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। অপরদিকে তিন রাজ্যে বিপুল জয়ে ফের একবার গোটা দেশজুড়ে মোদির নামে জয়ধ্বনি উঠেছে। তারই অঙ্গ হিসেবে বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মোদি প্রবেশ করতেই তাকে সাদর সম্ভাষণ জানানো হয়। বিজেপি সাংসদরা তাকে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানান। তার নামে জয়ধ্বনি উঠে। তুমুল হাততালি ও মোদি নামে জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয় সংসদ ভবনের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের সভাগৃহ। বর্তমানে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলছে। শীতকালীন অধিবেশনের মধ্যে এটাই ছিল বিজেপির প্রথম সংসদীয় বৈঠক।
বৈঠকে আলোচনার সূচি আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল বৈঠকে আলোচনার সূচি আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। তিন রাজ্যে বিজেপির দাপুটে জয়ের প্রধান কাণ্ডারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানাতেই সংসদীয় দলের বৈঠক আহ্বান করা হয়েছিল।

কিন্তু নেতার নাম যখন নরেন্দ্র মোদি, তখন সেই বৈঠক যে নিছক ‘অভিনন্দন’ পালাতেই শেষ হবে না, সেটা জানাই ছিল। অভিনন্দনে ভাসলেও, নিজের লক্ষ্য থেকে এক চুলও নড়েননি মোদি। এদিনের বৈঠকে আগামী লোকসভাকে কার্যত পাখির চোখ করে সুর বেঁধে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বৈঠকে দলীয় সাংসদদের প্রতি বার্তায় তিনি সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একজোট হয়ে লড়াই করার বার্তা দিয়েছেন। লোকসভা ভোটের কৌশল ঠিক করতে প্রধানমন্ত্রী তিন রাজ্যে বিজেপির বিপুল জয়ের উদাহরণ তুলে ধরেন। মোদি বলেছেন, ওই তিন রাজ্যে কর্মীরা একজোট হয়ে লড়েছেন। তারই ফল পেয়েছেন। তিনি এই জয়ের কৃতিত্ব পার্টির সকলকে দেন। সেই সাথে আগামীর রোডম্যাপ এবং রণকৌশলও তৈরি করে দিয়েছেন।এরপরই অনেকটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ভাষণ
দিতে গিয়ে দলের নেতাদের কাছ আবেগপূর্ণ এক আর্জি জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার বক্তব্য, ‘আমি শুধুই মোদি। আমাকে মোদিজি বলে মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে দেবেন না।’ তার আরও বক্তব্য, ‘এটা সার্বিক প্রচেষ্টার জয়। সকলেই পরিশ্রম করেছেন। এটা শুধু আমার একার জয় নয়, দলের জয়।’ রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মোদির এই বক্তব্যের পিছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। এক, নিজেকে সাধারণ কর্মী হিসেবে তুলে ধরে নেতাদেরও একই পথ অনুসরণ করার বার্তা দেওয়া। দুই, শুধুমাত্র মোদি নামের মধ্য দিয়েই নিজেকে ব্র্যান্ডিং করার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করা। কিন্তু মূল প্রশ্ন হচ্ছে, লোকসভা ভোটের আগে তিন রাজ্যে দাপুটে জয়ের পর গোটা পদ্মশিবির যেভাবে ফের একবার ‘ব্র্যান্ড মোদি’ এবং নিদে নিয়ে ‘মোদি ম্যাজিক’ বলে শোরগোল করে যাচ্ছে, তাতে কিন্তু দলের অন্দরে কোন্দল মেটাতে পারছে না। তিন রাজ্যে দাপুটে জয় পাওয়ার পর পাঁচদিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও, বিজেপি কিন্তু এখনও ওই তিন রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? তা ঠিক করতে পারেনি। দলীয় কোন্দল এবং চাপ এতোটাই ঊর্ধ্বমুখী যে শেষ পর্যন্ত বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে ওই তিন রাজ্যে পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করতে হয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলিও সমালোচনার সুর চড়িয়েছে। পর্যবেক্ষকরা তিন রাজ্যের নির্বাচিত বিধায়কদের সাথে বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা ঠিক করবেন। ব্র্যান্ড মোদিও দলের অন্দরে তৈরি হওয়া কোন্দল নিরসন করতে পারছে কই? কোন্দল নিরসনে মোদি ম্যাজিকও যে কাজে আসছে না, সেটা তো দেখাই যাচ্ছে। ফলে লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আরও সতর্ক হয়ে এগোতে হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.