কংগ্রেস ও সিপিএমকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী!!

 কংগ্রেস ও সিপিএমকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার কল্যাণপুর সোনার তরী মুক্ত মঞ্চে বাজার কলোনি গণহত্যার ২৭তম বর্ষে শহিদ স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।সমাবেশে মুখ্য বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা।মঞ্চে সভাপতিত্ব করেন শহিদ পরিবারের সরস্বতী গোপ।যিনি ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর তার দুই ভাইকে হারিয়েছিলেন তথাকথিত এটিটিএফ সন্ত্রাসবাদীদের নৃশংস আক্রমণে।এছাড়া মঞ্চে ছিলেন বিজেপির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, কল্যাণপুরের বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী, বিধানসভার সরকারী মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়, কল্যাণপুর মণ্ডল সভাপতি জীবন দেবনাথ প্রমুখ। প্রথমেই স্বাগত ভাষণ দেন কল্যাণপুর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান সোমেন গোপ। সব বক্তারাই বাম জমানার সমালোচনার পাশাপাশি কংগ্রেস দলকেও তুলোধোনা করেন।প্রধান বক্তা হিসেবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বলেন,কমিউনিস্ট মানেই সন্ত্রাস।সারা বিশ্বেই তারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থা ধরে রাখতে চায়।এটা ইতিহাস স্বীকৃত।ওরা চেয়েছিলো ২৬টি প্রাণের বিনিময়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে।সারা ত্রিপুরায় বিগত বাম জমানায় কত জন মানুষ খুন হয়েছেন তার কোনও হিসাব নেই।তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে পেছনের দরজা দিয়ে এরা ক্ষমতায় এসে ৩৫টা বছর শাসনের নামে শোষণ করেছে।এতোদিন পর্যন্ত সাধারণ মানুষ আশায় আশায় ছিলেন যে কবে তারা এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।কারণ কংগ্রেসের দয়াতেই বাম সরকার এতো দিন টিকে ছিলো।সবাই জানতো দিল্লীতে দোস্তি আর রাজ্যে কুস্তির কথা।কিন্তু মানুষ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারতো না।কিন্তু এরপর রাজ্যের মানুষকে মুক্তি দেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।২০১৮ সালে রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় বিজেপি জোট সরকার।মানুষ তার কথা বলার অধিকার ফেরত পায়। ডা. মানিক সাহা বলেন, কংগ্রেসের কোনও লজ্জা নেই।তিনি বলেন, দুঃখ লাগে এই ভেবে যে কমিউনিস্টদের রক্তমাখা হাতকে কংগ্রেস আপন করতে একটি বার
ভাবলো না।দুঃখ হয় এই দেখে যে কংগ্রেস ভবন থেকে নির্বাচনের আগে সিপিআইএমের পতাকা বের হয় আর অন্যদিকে সিপিআইএম পার্টি অফিস থেকে কংগ্রেসের তেরঙা বের হয়।কংগ্রেস জানে তাদের পায়ের তলার মাটি আর নেই।
তিনি বলেন,বিধানসভায় তিনি কংগ্রেসের তিনজন বিধায়ককে প্রশ্ন করেছিলেন।
যে উপরে গিয়ে কী জবাব দেবেন ওরা।বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধও কি নেই?মাথা
হেঁট করে কংগ্রেস বিধায়করা শুনেছেন।কিন্তু কোনও জবাব নেই।পবিত্র বিধানসভাকেও এরা কলুষিত করেছে নানা নাটক করে।কোনও সময় গঙ্গা জল ছিটানোর মাধ্যমে।আবার কোনন সময় চতুষ্পদী এক প্রাণীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে।তিনি বলেন,ওই চতুষ্পদী প্রাণীর ল্যাজ যেমন কোনও দিন সোজা হয় না তেমনই এদের ল্যাজও সোজা হবার নয়।বামেরা মুখে বলে গণতন্ত্র বাতাস।কিন্তু এরা এই আপ্তবাক্যে বিশ্বাস করে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুখময় সেনগুপ্ত
দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বলেছিলেন সমীর বর্মণই রাজ্যে সিপিআইএমের গোড়াপত্তন করে গিয়েছিলেন।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন সময় বদলে গেছে।এখন মানুষের অধিকার, তার সুযোগ সুবিধার গ্যারান্টি দিচ্ছেন অভিভাবকতুল্য খোদ
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।রাজ্য সরকারও বিকাশের লক্ষ্যে সেই ভাবে
চলছে।বাম কংগ্রেসকে কোনও অবস্থাতেই মাপ করা যায় না বলে তার অভিমত।
এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরার যে কথা এখন বিজেপি বলছে তা অনেক দিন আগেই হতো।কিন্তু সমস্ত কলকারখানা বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর অপমৃত্যু ঘটিয়েছে বিগত সরকার।তিনি বলেন,তার কাছে খবর ছিলো ২০২৩-এর নির্বাচনের আগে বহু জায়গায় কবর খুঁড়ে রেখেছিলো বাম কংগ্রেসের অবৈধ জোট।এরা নাকি ক্যাবিনেটে কে কে থাকবেন তাও ঠিক করে নিয়েছিলেন।কিন্তু বিজেপি সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।তাই বিধানসভা নির্বাচন সহ প্রতিটি নির্বাচনে মানুষ বুলেট নয়, ব্যালটের মাধ্যমে যোগ্য জবাব দিয়ে দিয়েছেন।বুথ কেপচার ছাড়া যে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় তা রাজ্যের মানুষ প্রমাণ করেছে।তিনি স্পষ্ট বলেন
সন্ত্রাসকে যারা মদত দেবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী তার গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে বলেন প্রাক্তন বিধায়ক মাখন লাল চক্রবর্তী এবং রমাকান্ত পালের ক্ষমতার লড়াইয়ে ১৯৯৬ সালে খুন হতে হয়েছিল ২৬টি তাজা
প্রাণকে।চার বছরের বর্ষা গোস্বামী থেকে আশি বছরের বৃদ্ধ -সবাই বামেদের
পরিকল্পিত এই চক্রান্তের শিকার হয়েছিল।কল্যাণপুরে একটা সময় সন্ত্রাসের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছিল বিগত সরকার।কিন্তু এখন কল্যাণপুর সম্পূর্ণ বিকাশমুখী।তিনি বলেন, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে যারা খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন তাদের কোনও ভাবেই মাথা তুলতে দেওয়া হবে না।এটা শুধু জনতার রায় না,এটাই সার্বিক জনমত।সোমবার কল্যাণপুর কংগ্রেস ভবনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ সাহার আগমনকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, এদের লজ্জা থাকা দরকার।এতো দিন বাজার কলোনীর শহিদদের কোনও খবর না রেখে এখন উনি বলছেন ওই দিন কংগ্রেসিদের মৃত্যু হয়েছিল।তাই এই শহিদ স্মরণ তাদের অনুষ্ঠান।যার
দলীয়করণ নাকি করেছে বিজেপি।তিনি বিগত বাম সরকারকে তীব্র আক্রমণের পাশাপাশি কংগ্রেসকে একটি কোম্পানি বলেন।তিনি বলেন, এই কোম্পানির একজন এজেন্সি হলেন বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।তিনি বামেদের সাথে কংগ্রেস হাত মেলানোয় এর তীব্র সমালোচনা করেন।পিনাকী বলেন,২০২৩-এর নির্বাচনে মানুষ এই অবৈধ জোটকে মোক্ষম জবাব দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে রাজনীতি কাকে বলে।বিধায়ক বলেন,সমস্ত রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠে শহিদ পরিবারের পাশে বিজেপি জোট সরকার আছে।বিকাশমুখী বলেই শুধু বাজার কলোনী কেন,সারা কল্যাণপুরের চেহারা আজ পাল্টে গেছে।উল্লেখ্য,এদিন মঞ্চে শহিদ পরিবারের সদস্যদের সম্মানিতও করা হয়।প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য বলেন,অদ্ভুত এক সভ্যতার সৃষ্টি করেছিল বিগত সরকার।এ কোন্ সভ্যতা যেখানে মানুষ খুন করে রাজনীতি করা হয়। কমিউনিস্টরাই এমন কুখ্যাত সভ্যতার জন্মদাতা ছিলো। কল্যাণপুরের মানুষ জানতে চায় কিসের জন্য সেদিন বাজারকলোনীর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল।তাদের একমাত্র দোষ ছিলো তারা বিরোধী শিবিরের লোক ছিলেন।তিনি কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন,যারা এই বিরোধীদের নৃশংস হত্যা ও বাড়িঘরে আগুন দিয়ে ছারখার করে দিয়েছিলো তাদের হাতই শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসকে ধরতে হলো।তিনি বলেন,কংগ্রেসের কাঁধে ভর দিয়েই এতোকাল বামেরা রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় ছিলো। আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা ১২ ডিসেম্বরের আগের দিন কল্যাণপুর কংগ্রেস ভবনে এসে লজ্জাহীনভাবে আবোলতাবোল বলছেন। এদিনের সমাবেশে কল্যাণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গা থেকে জাতি জনজাতি অংশের মানুষরা অংশগ্রহণ করেন।প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী সহ সকলে মঞ্চের পাশের অস্থায়ী শহিদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানান ফুল মালা দিয়ে। মঙ্গলবার সকালে বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী সহ নেতারা বাজারকলোনীর শহিদ বেদীতে ধূপ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।ছিলেন সাধারণ মানুষরাও।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.