মেডিসিন আইসিইউ স্বল্পতা, সংকট বাড়ছে চিকিৎসা সেবায়!!

 মেডিসিন আইসিইউ স্বল্পতা, সংকট বাড়ছে চিকিৎসা সেবায়!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের প্রধান দুই সরকারী রেফারেল হাসপাতাল জিবি এবং আইজিএমে সংকুচিত চিকিৎসা পরিকাঠামোর জন্য রোগীরা বিপাকে পড়ছেন। অন্য চিকিৎসা পরিকাঠামোর হাল কী এখানে তা তুলে ধরা না হলেও গুরুতর – অসুস্থ ও মুমূর্ষু রোগীর আইসিইউর চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে প্রতিদিনই রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজন অভিযোগ আনছেন। বিশেষ করে হাসপাতাল দুটিতে গুরুতর অসুস্থ ও মুমূর্ষু রোগীর জন্য যখন চিকিৎসক আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন ও পরামর্শ দেন তখন আইসিইউর শয্যা সংকটে প্রচণ্ড বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এখানে মেডিসিন বিভাগ পরিচালিত আইসিইউর কথা বলা হচ্ছে।

জিবি হাসপাতালে মোট ২২টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। জিবি হাসপাতালের পুরানো এসএম ব্লক তথা মেডিসিন ভবনে আইসিইউর শয্যা রয়েছে ১২টি আর নিউ টিচিং হাসপাতাল ভবন তথা এটিএইচ-১নং ভবনে রয়েছে আরও ১০টি শয্যা। জিবি হাসপাতালে মোট মেডিসিন বিভাগ পরিচালিত ২২টি শয্যা রয়েছে। শুধু হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগেই সাধারণ শয্যা রয়েছে ২০০-র উপর। শয্যার বাইরেও প্রতিদিন গুরুতর অসুস্থ আরও প্রচুর রোগী হাসপাতালের ফ্লোরে থাকছেন আগরতলা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ও হাসপাতালগুলি থেকে মেডিসিন বিভাগের গুরুতর অসুস্থ রোগীকে রেফার করে জিবিতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে। ফলে মেডিসিন বিভাগে রোগীর চাপ সবসময়ই থাকছে অস্বাভাবিক।

গুরুতর অসুস্থ ও মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা তথা নেওয়ার জন্য পরামর্শ
দেন। কিন্তু রাজ্যের প্রধান সরকারী মেডিকেল কলেজ জিবি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জন্য আইসিইউর মাত্র ২২টি শয্যা থাকায় শয্যা সংকটে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে প্রচণ্ড বিপাকে পড়তে হচ্ছে মেডিসিন বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও রোগীর আত্মীয়দের। রাজ্যের প্রধান সরকারী রেফারেল হাসপাতালে এতো কম সংখ্যায় আইসিইউর শয্যা থাকায় রোগী নিয়ে চিকিৎসকরা যেমন বিপাকে পড়ছেন, তেমনি রোগীর আত্মীয়রা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রোগীকে
আইসিইউতে নিতে গিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়ছেন।

আইসিইউর শয্যা সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম থাকায় মুমূর্ষু রোগীর জন্য আইসিইউর শয্যা পেতে রোগীর আত্মীয়কে উদ্‌ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। আইসিইউর ব্যবস্থা করে দিতে রোগীর আত্মীয়রা প্রচণ্ড উদ্বেগ নিয়ে হাসপাতাল সুপার থেকে শুরু করে মন্ত্রী, বিধায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও পরিচিত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ফোন করে বিনীত অনুরোধ করেন সবসময়ই। কিন্তু তারপরও হাসপাতালের
আইসিইউর শয্যা পেতে সংকুচিত পরিকাঠামোর জন্য প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে।
মুমূর্ষু রোগীকে আইসিইউর শয্যা সংকটের কারণে আইসিইউতে নিতে ওয়েটিং লিস্ট তথা অপেক্ষমাণ তালিকায় নামও লিখে রাখা হয়। কখন শয্যা পাওয়া যাবে তা নিয়ে রোগীর উদ্বিগ্ন আত্মীয়স্বজনকে প্রচণ্ড টেনশনের মধ্যে হাসপাতালে কাটাতে হচ্ছে। রোগীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হতে থাকলে রোগীর আত্মীয়ের টেনশন আরও বেড়ে যায়।

তার মধ্যে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তর সরকারী রেফারেল হাসপাতাল আইজিএমেও মাত্র মেডিসিন আইসিইউর ১০টি শয্যা থাকায় সেই হাসপাতাল থেকেও জিবির মেডিসিন আইসিইউতে রোগীকে পাঠানো হচ্ছে।
নতুন বিধায়ক আবাসন সংলগ্ন বেসরকারী একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে
গিয়ে পকেটে টান পড়ায় সেই হাসপাতাল থেকেও জিবির মেডিসিন আইসিইউতে
রোগী আনা হচ্ছে। জিবি এবং আইজিএমের মেডিসিন বিভাগের রোগী ছাড়াও স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের মুমূর্ষু রোগীকেও আইসিইউতে আনা হচ্ছে। অন্যান্য কিছু
রোগ বিভাগের মুমূর্ষু রোগী আইসিইউতে আনা হচ্ছে। ফলে একদিকে আইজিএমের মেডিসিন আইসিইউর ছোট ও সংকুচিত পরিকাঠামো ও স্বল্প শয্যাজনিত কারণে যেমন জিবির আইসিইউর উপর চাপ পড়ছে তেমনি রাজ্যের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালের মুমূর্ষু রোগীকে আইসিইউর জন্য পাঠানোর প্রতিদিনই জিবির মেডিসিনে আইসিইউর শয্যা সংকট তীব্রভাবেই থাকে।

কিন্তু বিস্ময়ের ও পরিতাপের বিষয় হলো রোগীর চাপ অনুযায়ী জিবি এবং আইজিএমে আইসিইউর শয্যা বাড়ানো হচ্ছে না। আর তাতেই প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা জিবি এবং আইজিএমে আইসিইউর শয্যার জন্য মুমূর্ষু রোগী নিয়ে চিকিৎসকরা যেমন সমস্যায় পড়ছেন, তেমনি রোগীর আত্মীয়স্বজনও প্রচণ্ড বিপাকে ও টেনশনে পড়ছেন। রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের তরফে দাবি উঠেছে রাজ্য সরকার ও স্বাস্থ্য দপ্তর যাতে অতিসত্বর জিবি এবং আইজিএমের মেডিসিন আইসিইউর শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করে। জিবি হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়ে ন্যূনতম মেডিসিন আইসিইউর ৪৫-৫০ শয্যা করার দাবি জানিয়েছেন রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজন।

আইজিএম হাসপাতালে মেডিসিন আইসিইউর শয্যা ১০ থেকে বৃদ্ধি করে ন্যূনতম ২৫-৩০টি করার দাবি উঠেছে। ফলে দুই হাসপাতালে বি আইসিইউর রোগীর জন্য পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনমতো আইসিইউর শয্যা দ্রুত করা হলে আইসিইউ নিয়ে ও আইসিইউ পেতে যে উদ্ভূত সমস্যা দেখা দিয়েছে ও তার নিরসন হতে পারে। রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের মেডিসিন আইসিইউ পেতে বিপাকে পড়তে হবে না বলেও হাসপাতালের চিকিৎসকদের অভিমত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য দপ্তর ও রাজ্য সরকারকে দ্রুত এই উদ্যোগ নিয়ে কাজ করার দাবি উঠেছে। এদিকে দুই হাসপাতালের আইসিইউ চিকিৎসা পরিষেবার মান আরও বৃদ্ধি করারও দাবি উঠেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে ২৪ ঘন্টা আইসিইউর চিকিৎসা পরিষেবা চালু রাখারও দাবি উঠেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স দিয়ে সর্বক্ষণ পরিষেবা চালুর উপর জোর দিতে হবে। বয়স্ক ও অসুস্থ নার্স সরিয়ে কম বয়সি বা মাঝবয়সি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স দেওয়ারও দাবি উঠেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.