কর্মচারী ও রেফারি!!

 কর্মচারী ও রেফারি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-যে কোন সরকারে এবং প্রশাসনের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছেন কর্মচারীগণ।কর্মচারীদের মাধ্যমেই যেকোনও সরকার জনগণের কল্যাণে যাবতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।সরকার এবং মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, সেই সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মূল দায়িত্ব হচ্ছে সরকারী কর্মচারীদের। এই ক্ষেত্রে কর্মচারীদের গুরুত্ব অপরিসীম।কর্মচারী ছাড়া সরকার ও প্রশাসন অচল।এক চুলও নড়ার ক্ষমতা নেই। সেই রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের রেফারি এবং আম্পায়ারের ভূমিকা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা।তাঁর কথায়, কর্মচারীদের ভূমিকা হবে নিরপেক্ষ অর্থাৎ ফুটবল খেলার রেফারি এবং ক্রিকেট খেলার আম্পায়ারের মতো। কোনও পক্ষপাতিত্ব না করে জনগণের কল্যাণে কর্মচারীদের কাজ করার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সাহা। শনিবার আগরতলা রবীন্দ্রভবনে আয়োজিত জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ সি পদে নির্বাচিত প্রার্থীদের চাকরির অফার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথাগুলি বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন,জনগণ যাতে সরকারী অফিসে এসে কোনওভাবে হয়রানির শিকার না হন,সেদিকে কর্মচারীদের বিশেষ নজর দিয়ে কাজ করতে হবে।সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে হবে।এমন আরও বেশ কিছু উপদেশ, পরামর্শ দিয়েছেন কর্মচারীদের উদ্দেশ করে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কর্মচারীদের সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উপদেশ না হয় মানা গেল, কিন্তু কর্মচারীদের রেফারি এবং আম্পায়ারের মতো নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে কাজ করা কি আদৌ সম্ভব?নাকি এটি শুধু কথার কথা। মুখ্যমন্ত্রী বলতে হয় বলে বললেন?কেননা,এই কর্মচারীরাই সরকারের যাবতীয় জনকল্যাণমুখী কাজ বাস্তবায়নে যেমন মুখ্য ভূমিকা পালন করেন,তেমনি সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার যাবতীয় কর্ম-অপকর্ম সবই এই কর্মচারীরাই বিশ্বস্ত সৈনিকের মতো পালন করেন।আরও স্পষ্ট করে বললে একেবারে দলের বিশ্বস্ত এবং একনিষ্ঠ ক্যাডার বা কার্যকর্তার মতো ভূমিকা পালন করতে হয় এই কর্মচারীদের।কর্মচারিরাও নিজেদের স্বার্থে সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।দলের একনিষ্ঠ সৈনিকের মতো যাবতীয় কর্ম সম্পাদন করেন।ফলে কর্মচারিদের রেফারি এবং আম্পায়ারের মতো নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করার মুখ্যমন্ত্রীর উপদেশ কতটা যুক্তি সঙ্গত এই প্রশ্নতো উঠবেই।যে রাজ্যে সরকারি কর্মচারিরা রাজনৈতিক দলের ভোট ব্যাঙ্ক এবং কমিটেড ভোটর হিসাবে বিবেচিত হয়,সেই রাজ্যে কর্মচারিরা নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে কাজ করবেন এমন আশা করা যায়?যে রাজ্যে কর্মচারীরা সরাসরি রাজনৈতিক দলের মিছিলে হাঁটেন, ডান-বাম-রাম সব দলের হয়ে প্রকাশ্যে গলা ফাটান রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন,সেই রাজ্যে কর্মচারি রেফারির ভূমিকা নিয়ে কাজ করবেন? যে রাজ্যে সরকারি কর্মচারীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংগঠনের সাথে নানা নামে যুক্ত, তারা কাজ করবে রেফারির মতো?যখন যে রাজনৈতিক দলের সরকার ক্ষমতায় থাকে, তারাই সরকারী কর্মচারিদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করে।দশকের পর দশক
ধরে এই পরম্পরা চলে আসছে।মুখ্যমন্ত্রীর এই উপদেশ সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন করতে হলে তো সবার আগে রাজ্য সরকারকে
সংশোধন হতে হবে। কর্মচারীদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। কর্মচারীদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে।তবে
কিছুটা হলেও মুখ্যমন্ত্রীর উপদেশ কার্যকর হতে পারে। নতুবা এটি কথার কথাই থেকে যাবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.