উত্থান!!

 উত্থান!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজনৈতিক স্থায়িত্ব এবং সুশাসনের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত অর্থনৈতিক উন্নয়ন।ভারতের শেয়ার বাজারের স্বপ্নের দৌড় দেখলে এ কথার মমর্মোদ্ধার সহজ হয়। গত ৩ ডিসেম্বর যেদিন চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হয়,সেদিন ছিল রবিবার। পরদিন, সোমবার থেকেই ডানা মেলতে শুরু করে শেয়ার বাজার।এমন স্বপ্নময় উড়ান স্মরণকালের মধ্যে এই প্রথম।অতীতের সমস্ত রেকর্ড উপর্যুপরি ভেঙে দিয়ে সেনসেক্স ৭১ হাজারের গণ্ডি অতিক্রম করেছে।একই সঙ্গে ২১ হাজারে প্রবেশ করে নিফটি।হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিজেপির চোখ ধাঁধানো সাফল্য যে বাজারের এমন উত্তুঙ্গ উচ্চতায় পৌঁছনোর অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।বাজারের ক্রমাগত উল্লম্ফনের যদি এটি একটি দিক হয়, অন্য দিকটি হল শিল্প, ব্যবসা, বিদেশি লগ্নি, জিএসটি সংগ্রহ- সহ বিবিধ ক্ষেত্রের আগত সুসংবাদ।আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনের আগে যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতারই ইঙ্গিত বলে ধরে নিয়েছে বাজার মহল।বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি দিকনির্দেশ করছে যে, সরকারের ইতিবাচক নীতির ধারাবাহিকতা না থাকলে বাজারের এমন নিরবচ্ছিন্ন ঊর্ধ্বগতি সম্ভব নয়।দীপাবলির সন্ধ্যায় (১২ নভেম্বর)সেনসেক্স ৩৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ছুঁয়েছিল ৬৫,২৫৯।মাত্র দুই মাসে ৬২২৫ এগিয়ে তার উত্থান ৭১ হাজারে পৌঁছেছে।সেনসেক্সের এমন উত্থানে স্পষ্ট,নির্ভরযোগ্য ক্ষেত্র হিসাবে বিশ্বপুঁজি ভারতকে বেছে নিয়েছে।বাজারের দিকে শ্যেন চক্ষে নজর রাখা বহুজাতিক কর্পোরেশন বা বিনিয়োগে সর্বোচ্চ লাভের সুযোগসন্ধানী বিশ্বপুঁজি, কাউকে একদিনের জন্যেও মূর্খ বানানো সম্ভব নয়। অতএব,এটাই নির্ধিত সত্য যে, ভারতকে তারা একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে দেখতে শুরু করেছে। ফলশ্রুতি সূচকের এই উত্থান এবং তার ফলশ্রুতি মিউচুয়াল ফাণ্ডের আম লগ্নিকারী,মানে মধ্য এবং নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষের মুখের আকর্ণ হাসি। দ্রুত বাড়ছে এসআইপি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এবং লগ্নির পরিমাণ।ফাণ্ডের লগ্নিকৃত পুঁজির আকস্মিক বৃদ্ধিও বাজারের সার্বিক উত্থানেরই পরিচায়ক।
নিঃসংশয়ে আর্থিক দিক থেকে ভারত এখন শক্তিশালী
ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে। খামখেয়ালি আবহাওয়ার কারণে কৃষি উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও দেশে শিল্পের অবস্থা এবং পণ্যের চাহিদা উত্তম।নগদের জোগানে ঘাটতি নেই।বাড়ি-গাড়ির চাহিদা এবং তার ফলে বিভিন্ন অনুসারী শিল্পেও চাহিদা তুঙ্গে।জিএসটি সংগ্রহে বৃদ্ধিও ব্যবসায় ইতিবাচক পরিস্থিতির ইঙ্গিত।মূল্যায়ন সংস্থাগুলি চলতি অর্থবর্ষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়াতে শুরু করেছে।বিপরীতে চিনের বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমছে।সব দেখে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতে ফের পুঁজি ঢালতে শুরু করেছে।চলতি মাসের প্রথম এগারো দিনেই ভারতের শেয়ার বাজারে তারা ঢেলেছে ২৬,৫০৫ কোটি টাকা।পাশাপাশি,এই দফাতেও সুদ বৃদ্ধি থেকে বিরত থেকেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, শিল্পের পক্ষে যা অত্যন্ত স্বস্তির কারণ।আবার সৌদি আরব তেলের উৎপাদন ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বাড়েনি, বরং অনেকটা নেমে এসেছে, যা ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশের কাছে সুখবর।নতুন বছরের শুরুতে, খুব বেশি দেরি হলে লোকসভা নির্বাচনের আগেই এই সূত্রে পেট্রোল, ডিজেলের দাম কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে পারে সরকার। জ্বালানির দাম কমলে মূল্যস্ফীতিতে লাগাম লাগাতে বাধ্য। ২০২২ সালেও পেট্রোলে লিটার পিছু ১৮ টাকা এবং ডিজেলে লিটার প্রতি ৩৫টাকা ক্ষতি গুনতে হয়েছে তেল বিপণন সংস্থাগুলিকে। সেখানে সম্প্রতি পেট্রলে প্রতি লিটারে ৮-১০ টাকা এবং ডিজেলে প্রতি লিটার ৩-৪ টাকা লাভ করছে সংস্থাগুলি এই সূত্রে চলতি অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে বিপুল পরিমাণ লাভ করতে পেরেছে -আইওসি,এইচপিসিএল এবং বিপিসিএল।তাদের মিলিত মুনাফার পরিমাণ ২৮ হাজার কোটি টাকা। সাম্প্রতিক অতীতে কখনও এত বিপুল পরিমাণ আর্থিক লাভ করেনি তেল বিপণনকারী তিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা।অর্থনীতির এই শক্ত ভিতের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক স্মৃতিশীলতার ইঙ্গিত।গত শতকের নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখে ভারতের অবস্থান ছিল বিশ্বের সপ্তদশ স্থানে, সেখানে এই নিরিখে দেশ এখন পঞ্চম স্থানে।প্রত্যাশিত যে, পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের দেশ তৃতীয় স্থানে পৌঁছে যাবে।ফলে ভারতের আপেক্ষিক অবস্থানে যে উত্থান ঘটেছে,এর পরেও আর কোনও সন্দেহ থাকে কি ?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.