বিপদ সংকেত!!

 বিপদ সংকেত!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিশ্বের দ্রুত এগিয়ে যাওয়া উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যেভারতের স্থান অনেকটা সামনে।বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমীক্ষা এবং তথ্য পরিসংখ্যান থেকে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করা সম্ভব। গত বেশ কয়েকমাস ধরে কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলে আসছেন যে, আসন্ন ২০২৪ সালের লোকসভার নির্বাচনে জিতে এসে ভারতকে ৫ লক্ষ কোটির অর্থনীতির দেশ হিসাবে পৃথিবীর সামনে সারির দেশে তুলে আনবেন তিনি।কিন্তু অতিসম্প্রতি একটি রিপোর্টে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)বলেছে ভারতের ঋণের বোঝা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। অর্থাৎ রিপোর্ট বলছে, একদিকে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের গতি যেমন বাড়ছে, ঠিক এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের ঘাড়ে ঋণের বোঝাও বেড়ে চলেছে।একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, দেশে এই মুহূর্তে মোট ঋণের পরিমাণ ২.৪৭ লক্ষ কোটি ডলার।যার মানে হল, চলতি অর্থ বছরের তৃতীয় যে ত্রৈমাসিক হিসাব অর্থাৎ জুলাই- সেপ্টেম্বরের যে তথ্য,সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই মুহূর্তে ভারতের ঋণের পরিমাণ ২০৫ লক্ষ
কোটি টাকা।গত বছর অর্থাৎ জানুয়ারী-মার্চ ২০২২ অর্থ বছরে ভারতের ঋণের পরিমাণ ছিল ২.৩৪ লক্ষ কোটি ডলার বা ২০০ লক্ষ
কোটি টাকা।রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরে একটি সংস্থা কেন্দ্র ও রাজ্যগুলোর আর্থিক ঋণের এই পরিমাণ প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ) তাদের
বার্ষিক প্রতিবেদনেও ভারতের ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ে কেন্দ্রকে সতর্কবার্তা দিয়েছে। আইএমএফের রিপোর্ট বলছে,আগামী ৪-৫ বছরের মাথায় ভারতের ঋণের বোঝা দেশের মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির থেকে বেশি হতে পারে। আইএমএফের এই সতর্কবার্তা যদি সত্যি হয় তাহলে ২০২৭-২৮ সালে ভারতের ঋণের পরিমাণ ছাপিয়ে যেতে পারে জিডিপির ১০০ শতাংশ। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক আই এম এফের এই প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দাবি করেছে,দেশের ঘাড়ে যে মোট ঋণের কথা রিপোর্টে বলা হয়েছে তা
একা শুধু কেন্দ্রের ঋণ নয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলোর ধার বা ঋণও রয়েছে।কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক আরও দাবি করেছে, রাজ্য
ও কেন্দ্রীয় সরকারের দেনার বেশিভাগ অংশই টাকায় নেওয়া।এক্ষেত্রে বিদেশি ঋণ সামান্য। এক্ষেত্রে আইএমএফ একথাও বলেছে,২০১৯-২০ সালে ভারতের মাথার উপর ঋণের বোঝা ছিল জিডিপির
৭৫ শতাংশ।আর চলতি অর্থ বছরে সেটা বেড়ে ৮২ শতাংশ স্পর্শ করবে।আর ২০২৭-২৮ সালে এই দেনা সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ ছাপিয়ে যেতে পারে।এটা সত্য যে, কেন্দ্রের ঋণ নেওয়ার পেছনে একাধিক কারণ থাকে।এর মধ্যে অন্যতম হল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বাজেটে ঘাটতি,লগ্নির পরিমাণ হ্রাস পাওয়া কিংবা ক্রমহ্রাসমান আয়ের সংস্থান। আর তখনই আয় ও ব্যয়ের মধ্যে যে ঘাটতি দেখা দেয় সেটা মেটাতে দেশি প্রতিষ্ঠান, বা বিদেশি সংস্থা বা অন্য কোন আর্থিক সংস্থা থেকে ঋণ নেয় সরকার।আর এই ভাবেই দেনা বা ঋণ যত বাড়তে থাকে, সরকারকে তা শোধ করার জন্য বেশি বেশি অর্থ জোগাড় করতে হয়। আর সে কারণে ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে তা মেটানোর জন্য চাপাতে হয় নতুন নতুন কর বা ট্যাক্স।এর ফলেই মূল্যবৃদ্ধি আবার মাথাচাড়া দেয়।এই ভাবেই ঋণ গ্রহণ, আর সেই ঋণ মেটাতে কর চাপাতে গিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জেরে অর্থনীতির ভিত দিন দিন দুর্বল হতে থাকে।আরও উদ্বেগের ঘটনা হল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, জল, পরিবহণ, যোগাযোগ, সড়ক এবং বিভিন্ন পরিষেবা খাতে যখন আয় আসতে থাকে,সেই অর্থের সিংহভাগ অংশই খরচ করতে হয় ঋণের সুদ এবং ঋণের আসল মিটিয়ে দেওয়া বাবদ। আর এই ইস্যুতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিরোধীরা।ইতিমধ্যে দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে গত ২০১৪ সালে মোদি যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন দেশের মাথায় ঋণের বোঝাছিল ৫৫ লক্ষ কোটি টাকা।অথচ ২০১৪ থেকে ২০২৩ এই ১০ বছরে মোদির শাসনে ঋণের বোঝা বেড়ে হয়ে গেছে ২০৫ লক্ষ কোটি টাকা।অর্থাৎ একা মোদির সময়ে দেশে ঋণ নেওয়া হয়েছে ১৫০ লক্ষ কোটি টাকা।এখানেই আশঙ্কা বাড়ছে রাজকোষের আর্থিক ঘাটতির ভবিষ্যৎ পরিণাম নিয়ে।অথচ দুর্ভাগ্যের হল, কেন্দ্রীয় সরকার দেশে ঋণ বৃদ্ধির কারণে ভারতের অর্থনীতিতে মূল্যবৃদ্ধির উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তা স্বীকার করতে চাইছে না। যদিও আইএমএফের সতর্কবার্তা থেকেই স্পষ্ট,৫ লক্ষ কোটির অর্থনীতির দেশ হওয়ার সম্ভাবনার আড়ালে আগামীতে দেশের অর্থনীতির জন্য বিপদ সংকেতও কিন্তু সমানতালে পাল্লা দিচ্ছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.