কুস্তির ডামাডোল

 কুস্তির ডামাডোল
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মাত্র কিছুদিন আগেই এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ ঘিরে আলোড়িত হয়েছিল ভারতীয় কুস্তির জগৎ। ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের ইস্তফার দাবিতে লাগাতর আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন দেশের কুস্তিগীররা।

Brij Bhushan Saran Singh: মেয়ে কুস্তিগীরদের সঙ্গে কী করেন WFI প্রধান-ঠিক  কী অভিযোগ? - Who's Brij Bhushan Sharan Singh, what are the allegations  against him Wrestling Federation of India Vinesh Phogat Sakshi Malik  Bajrang Punia abk - Aaj Tak Bangla
চিত্রঃ ব্রিজভূষণ শরণ সিং


ব্রিজ ভূষণের বিরদ্ধে যৌন হেনস্তার মতো মারাত্মক অভিযোগও এনেছিলেন আন্দোলনরত অ্যাথলিটরা। কুস্তিগীরদের দীর্ঘ আন্দোলন ও লড়াইয়ের তীব্রতার মুখে তাদের দাবি মেনে এশিয়ান গেমসের আগে কুস্তি ফেডারেশন ভেঙে দিয়েছিল ক্রীড়ামন্ত্রক। কিন্তু তাতেও অবস্থার ইতরবিশেষ হেরফের হয়নি। কারণ দেশের কুস্তিগীরদের দাবি ছিল ব্রিজভূষণ শরণ সিং এবং তার পরিবারের কোন সদস্য যেন কমিটির দায়িত্বে আসতে না পারেন। মৌখিকভাবে কুস্তিগীরদের এই দাবি মেনেও নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকার এবং দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী। এতটুকু পর্যন্ত অনেকটাই থিতু হয়ে গিয়েছিল পরিস্থিতি। কিন্তু ফের গোল বাঁধল নতুন এক সিদ্ধান্তকে ঘিরে। সম্প্রতি দেশের কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান হিসাবে সঞ্জয় সিং-এর নাম ঘোষণা করা হয়। সঞ্জয় সিং ব্রিজভূষণের ঘনিষ্ঠ কাছের লোক হিসাবে কুস্তি সার্কিটে পরিচিত। শুধু তাই নয়, গত এক বছর ধরে কুস্তিগীরদের তরফ থেকে অভিযোগের বন্যা বয়েছে যে সঞ্জয় সিংয়ের বিরুদ্ধে তার হাতেই ফের তুলে দেওয়া হল ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের দায়িত্ব। যিনি ব্রিজভূষণের ব্যবসায়িক পার্টনার এবং তার ডান হাত বলে পরিচিত। নামে নির্বাচন হলেও বাইরে থেকে কলকাঠি নেড়েই ব্রিজভূষণের ইশারাতে সঞ্জয় সিংকে বসানো হয় কুস্তি ফেডারেশনের মাথার উপর। এর জের ধরেই ফের উত্তাল হয়ে উঠে ক্রীড়া মহল। তোলপাড় শুরু হয় কুস্তি মহলে। রিও অলিম্পিকে পদকজয়ী সাক্ষী মালিক ঘোষণা দেন, দেশের হয়ে আর কুস্তি লড়ব না। অপর অলিম্পিয়ান বজরং পুনিয়া কর্তব্যপথে তাঁর পদক ফেলে দিয়ে আসেন। এই ঘটনার জের ধরে পরিস্থিতি যখন আবারও উত্তাল, তখন কুস্তিগীরদের ক্ষোভ যাতে দেশের ক্রীড়া মহলে প্রভাব না পড়ে তাই তড়িঘড়ি রবিবার সকালে ভেড়ে দেওয়া হল নবনিযুক্ত কুস্তি ফেডারেশন।

চিত্রঃ বজরং পুনিয়া

যদিও মুখে বলা হল, জাতীয় কুস্তি সংস্থার নিয়ম না মেনে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণেই ফেডারেশনের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। নবনিযুক্ত জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনকে সাসপেণ্ড করা কিংবা কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার পেছনে যে কারণই কাজ করুক না কেন, আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে যে কুস্তিগীররা দেশের জন্য বছরের পর বছর ধরে অজস্র সম্মান ও পদক নিয়ে এসেছেন, তাদের সঙ্গে দেশের কুস্তি সংস্থার প্রধান কিংবা কুস্তি সংস্থার কর্মকর্তাদের এই ধরণের ঘৃণ্য আচরণ যে ঘটে গেছে তাকে কোনভাবেই আড়াল করা সম্ভব নয়। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, আগুন ছাড়া এমনি এমনি কখনো ধোঁয়া নির্গত হয় না। আজ থেকে এক বছর আগে দেশের কুস্তি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দেশের মহিলা কুস্তি খেলোয়াড়দের যৌন হেনস্তা এবং মানসিক নির্যাতনের অজস্র অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, এত নজিরবিহীন বিক্ষোভের পরেও সেই ব্রিজভূষণের ঘনিষ্ঠকে ফেডারেশনের মাথায় বসানো কোনও ভাবেই সরকারের আন্তরিকতার প্রতিফলন হতে পারে না। যে লড়াইটা একবছর আগে যন্তরমন্তরে শুরু হয়েছিল সেই যুদ্ধে দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করায় কুস্তি ফেডারেশনের পূর্বতন সভাপতি তথা বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে শেষপর্যন্ত এফআইআর দাখিল হয়েছে। দায়ের করা এফআইআরগুলো সবই নারী কুস্তিগীরদের সঙ্গে শ্লীলতাহানির এবং নাবালিকা নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে। কিন্তু বিস্ময়কর হল, আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েও পুলিশ এই ঘটনায় এখনও কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। উল্টো দেখা গেল বিদায়ী সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিংহের সভাপতিত্বেই ভারতীয় কুস্তি সংস্থার নতুন কমিটি তৈরি হয়েছে। এই ঘটনার পর কুস্তি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সাক্ষী মালিক। কুস্তিগীর বজরং পদ্মশ্রী ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেন। যন্তর মন্তরে যে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছিল, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সরকারী আশ্বাসের নিরিখে সেই আন্দোলন প্রত্যাহার করে ফিরে এসে ছিলেন রেসলাররা। কিন্তু এতগুলো মাস বাদেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। শুধু তাই নয়, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের ১৯টি অভিযোগ থাকলে সেটা এখন কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৭-এ। অর্থাৎ ১২ জন অভিযোগকারী তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর থেকেই স্পষ্ট ব্রিজভূষণ কতটা প্রভাব শালী। তারপরেও খেলোয়াড়দের অভিযোগ ও বক্তব্য নিয়ে সরকারের ঔদাসীন, কম হওয়া তো দূরের কথা বরং ব্রিজভূষণ ঘনিষ্ঠই পুনরায় স্থান পেয়ে যায় জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের মাথায়। যার অর্থ বকলমে ব্রিজভূষণই কুস্তি সংস্থার শেষ কথা। এই আবহে ২০২৪ লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে নিজেরে ভাবমূর্তি যাতে কালিমালিপ্ত না হয় তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই মুখ রক্ষার প্রশ্নে সাসপেণ্ড করতে হলো নতুন কমিটিকে। কিন্তু কুস্তির লড়াইয়ে এই রাজনীতি দেশের সামনে প্রশ্ন রেখে গেল অনেককিছু।

কুস্তির ডামাডোল
Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.