ফড়েদের দৌরাত্ম্য।।

 ফড়েদের দৌরাত্ম্য।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কৃষকদের আত্মনির্ভর হওয়ার লড়াইকে মাথায় রেখে রাজ্য সরকার ভারতীয় খাদ্য নিগমের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করার প্রক্রিয়া শুরু করার পর রাজ্যের কৃষকরা এখন অনেকটাই লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার এই উদ্যোগ গ্রহণের ফলে কৃষকরা দীর্ঘদিন বাদে লাভের মুখ দেখতে পারছেন। পাশাপাশি এর ফলে খোলা বাজারে ব্যবসায়ীদের ধানের ক্রয় কমে যাচ্ছে। আর এই অবস্থায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ক্রয় করে নিয়ে আসছে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো, সরকারীভাবে যেন ধানের মজুত কমে আসে। সরকারী মজুত কম হলে, পরবর্তী অবস্থায় সময় সুযোগ মতো অসাধু ব্যবসায়ীরা যে ধান কৃষকদের থেকে কম পয়সায় ক্রয় করে রেখেছিল, সেই ধান মর্জিমাফিক দামে বিক্রি করতে পারবে। এর পেছনে একটা কারণও দায়ী। বিষয়টা হলো রাজ্যের কৃষকদের কাছ থেকে সরকার যে ধান ক্রয় করে থাকে এ বছর এর মূল্য খানিকটা বৃদ্ধি করেছে সরকার। চলতি বছর ১১ ডিসেম্বর থেকে সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ধান কৃষকদের থেকে ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে এখন থেকে সরকারপ্রতিকেজি ধান ২১ টাকা ৮৩ পয়সা দরে ক্রয় করার ঘোষণা দিয়েছে।

সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সচিবালয়ে এই বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি খরিফ সংমরশুমে প্রতি কেজি ২১ টাকা ৮৩ পয়সা দামে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে। সারা রাজ্যে পর্যায়ক্রমে ৮৯ টি ধান ক্রয় কেন্দ্র থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান বিক্রি করবেন। আগামী ৩১ জানুয়ারীর মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান সরকারীভাবে নির্দ্ধারিত কেন্দ্রে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসা বাবদ কোন খরচ পান না। অর্থাৎ কৃষকদের নিজের গাঁটের টাকা সব খরচ করেই বাড়ি থেকে নিকটবর্তী কেন্দ্রে ধান নিয়ে আসতে হচ্ছে। অথচ সরকারীভাবে নির্ধারিত ধান ক্রয় কেন্দ্রে ধান নিয়ে আসার পরএফসিআই কর্তারা কুইন্টাল প্রতি ধান পরিমাপের সময় ৩/৪ কেজিধান ওজন থেকে বাদ দিয়ে সেগুলো ক্রয় করেন। পাশাপাশি মহাসরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে গিয়ে কৃষকরা হাতে হাতে টাকাটা এম পান না। এর জন্য অন্তত কিছুদিন তাদের অপেক্ষা করতে হয়। ফলে একদিকে যেমন ধান বিক্রয় কেন্দ্রে পরিবহণ বাবদ কৃষককে অতিরিক্ত ২০টাকা খরচ করতে হয়, এর উপর কুইন্টাল প্রতি ৩-৪ কেজি ধান বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে হয়। এইসব কারণে কৃষককে ধান বিক্রি করতে গিয়ে যে ঝক্কি ঝামেলা সামলাতে হয় এর চেয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ১৮-১৯ টাকা নগদ কেজি দরে তাদের থেকে সব ধান কিনে নেওয়ার কারণে কৃষকদের একটা অংশ সরকারী কেন্দ্রে ধান বিক্রি করার আগ্রহ হারাচ্ছেন। আর এই সরকারী দূর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর চতুর ব্যবসায়ী ভালো মন্দ বুঝিয়ে সহজ ও সরলমতি কৃষকদের আরেক প্রস্থ ঠকিয়ে চলেছেন। যার জের ধরে এই বছর খরিফ মরশুমের শুরুতেই সরকারী উদ্যেগে কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করার প্রক্রিয়া অনেকটাই ধাক্কা খেতে চলেছে। সবচেয়ে উদ্বেগের এই চতুর ব্যবসায়ী তথা ফড়েদের সঙ্গে শাসকদলের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে। বর্তমান সময়ে চালের দাম কম করেও কিলো প্রতি ৪৫ টাকা। ফলে ফড়েরা কৃষকদের কাছ থেকে আগাম টাকা দিয়ে সমস্ত ধান কিনে ফেলছে। ধান ঝাড়াইমাড়াই করতে কিছু অর্থের প্রয়োজন হয়। সেই টাকাও অনেক সময় কৃষকের হাতে থাকে না। ফড়িয়ারা সেটাও অগ্রিম কৃষকদের হাতে তুলে দিয়ে ধান ক্রয়ের বন্দোবস্ত করে রাখছে। এই মরশুমে দুই দফায় মিধিলি ও নিম্নচাপের কারণে কৃষকরা ফসলে মার খেয়েছেন। ফসল তোলার প্রাক মুহূর্তে বর্ষণের জেরে ধানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। অথচ সরকারীভাবে এখনও সেই অর্থে সাহায্য কৃষকদের হাতে পৌঁছানো যায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃষকদের আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনিক ভূমিকাহীনতার সাথে যদি শাসকদলীয় ঘনিষ্ঠ : চ ফড়েদের এই উৎপাত, দাপাদাপি এবং কৃষকদের ধান বিক্রির ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করা হয় তাহলে কৃষকদের জন্য সরকারের সহায়ক মূল্যের গালভরা প্রতিশ্রুতি কী কাজ দেবে? কী লাভ হবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের। সর্ষের মধ্যেই ভূতেরা চিরকাল বাসা বাধে। অথচ ওরা যদি সব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে, তাহলে অন্নদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আদৌ কতটা ধানচাষে ভবিষ্যতে উৎসাহী হবেন সেই আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.