রাজ্যে মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী ওপেন ইউনিভার্সিটি, গৃহীত হলো বিল!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-এবার রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ওপেন ইউনিভার্সিটি।বুধবার রাজ্য বিধানসভায় এই সংক্রান্ত একটি বিল বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও পাস হয়ে গেলো।এই নয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হচ্ছে ‘মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী ওপেন ইউনিভার্সিটি’।হিমালয়ান এডুকেশন সোসাইটি নামে একটি বেসরকারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজ্যে এই মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবে। যদিও বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবিতে সরব হয় তিপ্রা মথা, সিপিএম,কংগ্রেস সব বিরোধী দলই।কিন্তু সরকার পক্ষ তাতে রাজি না থাকায় দুপুর একটা চল্লিশ মিনিটে সিপিএম এবং কংগ্রেস বিধায়করা প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াকআউট করেন।তবে প্রধান বিরোধী দল তিপ্রা মথা ওই পথে হাঁটেনি।এরপরই বিলটি ধ্বনিভোটে
পাস হয়ে যায়।অধ্যক্ষ এরপর প্রথমবেলার সভা মুলতবি করে দেন।বিলটি নিয়ে আলোচনাকালে বিলোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা বলেন,ত্রিপুরায় এডুকেশন হাব হোক,এটা আমরাও চাই। এতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।আমাদের রাজ্যে ইতিমধ্যে অনেকগুলি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে।কিন্তু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই তো হবে না।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে পারে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।তাঁর বক্তব্যের উদ্দেশ্য হলো,এই ওপেন ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিতে ইউজিসির মান্যতা থাকবে তো।পরে দেখা গেলো এই ডিগ্রির কোনও মূল্যই নেই। তিনি বলেন, রাজ্যে একমাত্র হলিক্রস কলেজে ন্যাক-এর এ গ্রেড সার্টিফিকেট রয়েছে। রাজ্যের একাধিক ডিগ্রি কলেজে প্রিন্সিপাল নেই, প্রয়োজনীয় অধ্যাপক নেই। এই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে এটা কীসের একুডেশন হাব? প্রশ্ন তোলেন তিনি।সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও কোনও লাভ হবে না।বরং রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।আমরা চাই না,মাতা ত্রিপুরাসুন্দরীর নাম কলুষিত হোক।ফলে তিনি বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠিয়ে ভালো করে বিচার বিশ্লেষণ করে তবেই উত্থাপনের দাবি জানান। সিপিএম পরিষদীয় দলের নেতা বিধায়ক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, শিক্ষা সংক্রান্ত বিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এর সাথে যুক্ত থাকবে।এ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিতে বোমা ফেলতে হবে না।সঠিক শিক্ষা না হলে এমনিতেই ধ্বংস হয়ে যাবে।তাই সাবধানী পদক্ষেপ জরুরি। সবকিছু বিচার বিবেচনা করে তবেই বিল আনা হোক। আমরা বিলের বিরুদ্ধে নই। হিমালয়ান নামক যে সংস্থা ওপেন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে চাইছে,তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী?এ বিষয়ে তাদের কতটা অভিজ্ঞতা রয়েছে?এসব আমরা কেউই জানি না।এই সংস্থাটির নামও আগে শোনা যায়নি। তাছাড়া এই বিলে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা হস্তক্ষেপের কোনও সুযোগ নেই।বিলে রাজ্যের এবং রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থগুলি আগে যুক্ত করা হোক।তিনিও বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠিয়ে যাচাইয়ের দাবি জানান।কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ একই সুরে কথা বলেন।এই সংস্থার অনুমোদন আছে কি না?ইউজিসির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কি না? ব্যাকগ্রাউন্ড এবং অভিজ্ঞতা কী?দেশের অন্য কোনও রাজ্যে তাদের এই ধরনের ওপেন ইউনিভার্সিটি আছে কিনা?যদি থেকে থাকে,সেগুলির পরিচালনা কীভাবে হচ্ছে?সংস্থাটির পেছনে কারা রয়েছে?ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় জানার প্রয়োজন রয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়গুলি হাউসে জানাবেন কি?তিনিও বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানান।বিলের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী জবাব দিতে গিয়ে বলেন,এই ধরনের ওপেন ইউনিভার্সিটি ত্রিপুরাতে আর হয়নি।এটাই প্রথম হতে যাচ্ছে।এটি একটি স্বীকৃত সংস্থা।ইউজিসি এবং অন্যান্য রেগুলেটরি অথরিটির গাইডলাইন মেনেই যাতে ওপেন ইউনিভার্সিটি পরিচালিত হয়,তার সংস্থান বিলটিতে রয়েছে।ইউজিসির গাইডলাইন মোতাবেক এদের ৫.২ একর জায়গা দেওয়া হবে। সংস্থাটি নিজস্ব অর্থেই এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবে।রাজ্য সরকারের এক টাকাও এতে খরচ হবে না। বরং ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা রাজ্য সরকারের বিশেষ ফান্ডে সংস্থাটির কাছ থেকে রাখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ স্তরে একটি গভর্নিং বডি থাকবে। প্রয়োজনে রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারবে।বিশেষ পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার ইউজিসির সাথে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন বাতিল করতে পারবে। বিলে এমন সংস্থান রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এই ধরনের ওপেন ইউনিভার্সিটি আছে।যেগুলোতে প্রচুর ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে।এমনকী আমাদের রাজ্যের প্রচুর ছাত্রছাত্রীও বহিঃরাজ্যে এই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।আমাদের রাজ্যে এই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে শুধু রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরাই নয়, বহিঃরাজ্যের ছাত্রছাত্রীরাও পড়াশোনার সুযোগ পাবে এবং উপকৃত হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরও বিরোধীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকে। শেষে অধ্যক্ষ বিলটি ভোটে দিলে সিপিএম এবং কংগ্রেস বিধায়করা ওয়াকআউট করেন।বিলটি ধ্বনিভোটে গৃহীত হয়।এছাড়াও এদিন বিধানসভায় ‘দ্য ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস ফোর্থ অ্যামেন্ডমেন্ট)বিল ২০২৩ (দ্য ত্রিপুরা বিল নং ১৩ অব ২০২৩)এবং দ্য ত্রিপুরা স্টেট গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (সেভেন্থ অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২৩ (ত্রিপুরা বিল নং ১৪ অব ২০২৩) গৃহীত হয়েছে।