বিধানসভায় শাসক-বিরোধী জোর বিতর্ক, গৃহীত প্রস্তাব!!

 বিধানসভায় শাসক-বিরোধী জোর বিতর্ক, গৃহীত প্রস্তাব!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- রাজ্যে বেকার সমস্যা নিরসন, কর্মসংস্থান এবং শূন্যপদ পূরণ করা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিরোধী সদস্যরা বর্তমান সরকারকে তাদের ভিশন ডকুমেন্টে উল্লেখিত প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে সমালোচনায় বিদ্ধ করলেন। উল্টোদিকে শাসকদলের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থান, বেকার সমস্যা নিরসনে সরকারের উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরে বিরোধীদের অভিযোগ ও সমালোচনার জবাব দেওয়া হলো। শাসক-বিরোধী দুই পক্ষের বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্যের মাঝে উঠে এসেছে আরও নানা প্রসঙ্গ।যা নিয়ে মাঝে মাঝে সভা উত্তপ্ত হয়েছে।শুধু তাই নয়,বেকার সমস্যা নিরসন ও কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনায় অনেক অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য উঠে এসেছে। যা মূল সমস্যা থেকে বেরিয়ে এসে একে অপরকে নিশানা করা ছাড়া আর কিছুই নয়।এদিন বিধানসভায় এই বিষয়ে আলোচনায় ক্রিকেট খেলা থেকে শুরু করে,শচীন তেন্ডুলকর, রোহিত শর্মা, মহাভারতের দুর্যোধন, দ্রোণাচার্য, কৌরব-পাণ্ডব, রামায়ণের রাবন, স্বাধীনতা যুদ্ধে কমিউনিস্টদের ভূমিকা, সাভারকার-আরও একাধিক প্রসঙ্গ উঠে আসে, যা আলোচনার মূল বিষয়বস্তুর সাথে একেবারেই সম্পর্কহীন। ফলে মূল বিষয়বস্তু আলোচনা থেকে হারিয়ে যায়।বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সিপিএম বিধায়ক শৈলেন্দ্র চন্দ্র নাথ একটি বেসরকারী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তার প্রস্তাবটি ছিল, ‘রাজ্যে তীব্র বেকার সমস্যা নিরসনে রাজ্য সরকার অবিলম্বে সমস্ত দপ্তরের শূন্যপদ পূরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন’।এই প্রস্তাবে শাসকদলের বিধায়ক কিশোর বর্মণ কিছু সংশোধনী আনেন। তবে সংশোধনী আনলেও বিষয়বস্তু একই ছিল। পরে সর্বসম্মতিতেই কিশোরবাবু প্রস্তাবটি সভায় গৃহীত হয়।
প্রথমে বিধায়ক শৈলেন্দ্র চন্দ্র নাথ তার প্রস্তাবের সমর্থনে প্রায় তিন পাতা লিখিত ভাষণ গড়গড় পড়ে যান। যার মধ্যে অনেক কথাই প্রেস গ্যালারি থেকে বোধগম্য হয়নি।তিনি ১০,৩২৩ থেকে শুরু করে রাজ্যে কাজ নেই, খাদ্য নেই, বেকারদের কর্মসংস্থান নেই, মানুষের রোজগারের কোনও ব্যবস্থা নেই, সরকারী দপ্তরে নিয়োগ নেই ইত্যাদি নানা বিষয় ভাষণে উল্লেখ করেন। এরপর সংশোধনী প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে শাসকদলের বিধায়ক কিশোর বর্মণ বিরোধী সিপিএম দলকে সমালোচনা করতে গিয়ে রামায়ণ, মহাভারত, দুর্যোধন, রাবন, ক্রিকেট খেলা, ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তবে তার আলোচনায় অন্য প্রসঙ্গ থাকলেও, বেকার সমস্যা নিরসনে এবং সমস্যা নিয়ে বেশ গভীরে গিয়ে আলোচনা করেছেন।তিনি বলেন, কর্মসংস্থান মানেই সরকারি চাকরি,এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।কর্মসংস্থান মানেই সরকারী চাকরি নয়। সমস্যার মূলে যেতে হবে। তিনি বলেন,এই সমস্যা দুইভাবে সমাধান করা যায়। এক, কর্মসংস্থানের জন্য নানা উদ্যোগ, প্রকল্প গ্রহণ করা।যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করেছেন।দুই,এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে আমাদের দেশে বেকারই জন্ম না হয়। এরজন্য বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার নয়া শিক্ষানীতি গ্রহণ করেছেন।যে শিক্ষা বেকার তৈরি করে,সেই শিক্ষার কী প্রয়োজন?এর জন্যই নয়া শিক্ষানীতি গ্রহণ করা হয়েছে। যার যে ট্যালেন্ট, সেই ট্যালেন্টের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।তিনি মহাভাররে দ্রোণাচার্যের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, দ্রোণাচার্য কৌরব এবং পাণ্ডব সকলকে শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু সকলকে একই রকম শিক্ষা দেননি।যার যে যোগ্যতা আছে এঁকে সে শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন।কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল রায় বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরায় সব থেকে বেশি বেকার। আপনারা সরকারে এলে প্রথম বছরেই পঞ্চাশ হাজার শূন্যপদ পূরণ করবেন বলেছিলেন।শূন্যপদ কেন পূরণ হচ্ছে না?সিপিএম পরিষদীয় নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন,শাসক দলের বিধায়ক কিশোর বর্মণ আধ ঘন্টা যে ভাষণ দিলেন, তা যুব সমাজের প্রতি তাচ্ছিল্য ছাড়া কিছুই নয়।সমস্যার প্রতি সরকারের উদাসীনতা এবং উপহাস করা।তিনি ভিশন ডকুমেন্টের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন।মিসকলে রোজগার পৌঁছে যাবে, প্রতিশ্রুতি নিয়ে কটাক্ষ করেন। প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকে পঞ্চাশ হাজার শূন্যপদ পূরণের সিদ্ধান্তের কথা বলেছিলেন।আজ প্রতিশ্রুতির কী হলো?এরপর জিতেন্দ্রবাবুও মূল প্রসঙ্গ থেকে বেরিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম,আন্দামান, সাভারকার ইত্যাদি প্রসঙ্গ টেনে তুলে নিজেরাই সমালোচনায় বিদ্ধ হলেন। অধ্যক্ষ বলেন,স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে কোনও বক্তব্য কমিউনিস্টদের মুখে মানায় না। এতো সর্বনাশের কথা। অধ্যক্ষের এই বক্তব্যে সভা উত্তপ্ত হয়।জিতেন্দ্রবাবু বলেন, অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে আপনি এসব বলতে পারেন না।পাল্টা অধ্যক্ষ বলেন,কী করবো বলুন, ইতিহাস বিকৃত করলে বলতে তো হবেই।অধ্যক্ষের এই বক্তব্যের জন্য অধ্যক্ষকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী।পরে বিরোধী নেতা দাঁড়িয়ে বলেন, স্বাধীনতা, সাভারকার ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গের বিতর্কে বেকার ফিনিশ।একটা প্রবাদ আছে ‘পাটা পুতার ঘষাঘষি, মরিচের বংশ শেষ’।এটাই হচ্ছে পরিস্থিতি। তিনি বলেন, সিপিএম বিধায়ক শৈলেন্দ্র চন্দ্র নাথ যে প্রস্তাব এনেছেন, আমি এটাও সমর্থন করি, শাসকদলের বিধায়ক কিশোর বর্মণ প্লাস্টিক সার্জারি করে যে প্রস্তাব এনেছেন সেটাও সমর্থন করি।আমরা চাই মূল সমস্যার সমাধান হোক।পরে শ্রমমন্ত্রী টিস্কু রায় যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করে গত ছয় বছরে সরকার বেকার সমস্যা নিরসনে এবং কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কী কী কাজ করেছে, কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত ছয় বছরে বিভিন্ন দপ্তরে কত লোক নিয়োগ করা হয়েছে,ইত্যাদি তথ্য তুলে ধরেন।তিনি বলেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া।বর্তমান সরকার ঘরে ঘরে রোজগার পৌঁছে দিতে এবং স্বরোজগারি হিসাবে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে চলেছে।তিনি বলেন,কেন্দ্রীয় সরকারের সার্ভে মোতাবেক ২০১৮ সালের আগে ত্রিপুরায় শহরে বেকারের হার ছিল ৮.৭ শতাংশ, গ্রামে ৬.৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে সেটা হয়েছে শহরে ৩ শতাংশ এবং গ্রামে, ১.৪ শতাংশ।২০১৮-তে কেরালায় শহরে বেকারের সংখ্যা ছিল ১৩.২ শতাংশ, গ্রামে ১১.৪ শতাংশ।২০২৩ সালে কেরালায় শহরে বেকারের হার ১২.৯ শতাংশ, গ্রামে ৭.০১ শতাংশ।অথচ তারাই বড় বড় কথা বলছে। মন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ২০১৮ সালে নথিভুক্ত বেকারের সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ৪১ হাজার ৩০৫ জন।২০২৩ সালে নথিভুক্ত বেকারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৯ হাজার ২৫১ জন। এটাই পরিবর্তন। এটাই সুশাসন বলে দাবি করেন তিনি।

May be an image of 15 people and dais
Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.