কোচিং-এ লাগাম!!

 কোচিং-এ লাগাম!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-অনেকটা দেরিতে হলেও লাগামহীনভাবে গজিয়ে উঠা দেশের কোচিং সেন্টারগুলোর কাজকর্ম এবং তাদের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্র সরকার নির্দেশিকা জারি করলেন। গত কয়েক বছরে দেশের আনাচে কানাচে কোচিং সেন্টারের নামে শিক্ষার ব্যাপারীদের দৌরাত্ম্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। একদিকে ব্যাঙের ছাতার মতো দেশজুড়ে গজিয়ে উঠা কোচিং সেন্টার এবং পড়ুয়াদের অভিভাবকদের কাছ থেকে সেন্টারে ভর্তি হওয়া বাবদ অর্থ দোহন এমন এক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল যে শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যত বিপণনের শেষ সীমায় গিয়ে পৌঁছেছিল।একদিকে কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে এই সমস্ত কোচিং সেন্টারে ছেলে মেয়েদের ভর্তি করানোর পর প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ স্তরে গিয়ে প্রত্যাশার পরিপূরক কোনও স্থান না পাওয়ার পর গত কয়েক বছরে এই সকল কোচিং সেন্টারে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।আইআইটি জয়েন্ট এন্ট্রান্স টেস্ট,মেডিকেল জয়েন্ট এন্ট্রান্স বা নিট, ইঞ্জিনীয়ারিং কোর্সের বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই কোচিং সেন্টারগুলো ছাত্রছাত্রীদের ‘ছেলেধরা’ হিসাবে কাজে লাগাত।শুধুই যে উচ্চশিক্ষা কিংবা পেশাদারি কোর্সের জন্য এই কোচিং সেন্টারগুলো কাজ করত তাই নয়।এরা মাধ্যমিক স্তরে নিচুতলার ক্লাসের পঠন পাঠনের সঙ্গে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের যুক্ত করত। দেখা গেছে,উচ্চশিক্ষায় তীব্র প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকতে বাবা-মায়েরা নিজেদের পরিবারের সমস্ত অর্জিত অর্থ এদের পেছনে ঢেলে ছেলেমেয়েদের নামি-দামি কোচিং সেন্টারগুলোতে পড়াশোনার জন্য ভর্তি করিয়ে দিতেন। অথচ শিক্ষার্থীদের উপর একদিকে পরীক্ষার চাপ,সেই সাথে বাবা-মায়ের আর্থিক টানাপোড়েন এই দুইয়ের কষ্টাঘাতে পড়ুয়াদের সব সময়ই অতিরিক্ত মানসিক বিষন্নতায় থেকে পড়াশোনা চালাতে হতো।কিন্তু দেখা গেছে,এই কোচিং সেন্টারগুলিতে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার চাপ, ভালো রেজাল্ট জনিত চাপ কাটিয়ে উঠার জন্য পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোনও সহায়তা কোচিং সেন্টারগুলোর তরফে দেওয়া হয় না।অথচ শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও পরীক্ষার চাপ,প্রতিযোগিতার তীব্র লড়াই এই সবকিছুর থেকে যে বিষন্নতা তৈরি হয় তা দূর করার দায়িত্ব কোচিং সেন্টারের হলেও সেরকম কোনও পদক্ষেপ নেই।দেখা গেছে,রাজস্থানের কোটায় যে কোচিং মার্কেট রয়েছে কিংবা হিমাচল প্রদেশ,দিল্লী সহ দেশের নামি স্থানগুলোর যে বড় কোচিং সেন্টারে ইঞ্জিনীয়ারিং ও মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষার যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়।সেখানে কয়েক বছরে মেধাবী ও শিক্ষার্থী পড়ুয়াদের মধ্যে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে গেছে।প্রতিবছরই রাজস্থানের কোটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় পড়ুয়া প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যথাযথ সাফল্য না পেয়ে আত্মহত্যায় ঝুঁকছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে শুধুমাত্র রাজস্থানে কোটাতেই ২৬টি আত্মহত্যার ঘটনা পুলিশের খাতায় নথিভুক্ত হয়েছে।দেশের জন্য উৎকর্ষ ও গুণমান সমৃদ্ধ শিক্ষা ও শিক্ষার্থী অবশ্যই প্রয়োজন।কিন্তু গুণগত শিক্ষার দৌড়ে প্রতি বছর দেশের বিরাট সংখ্যক প্রতিভাকে যেভাবে অকালেই ঝড়ে যাচ্ছে,তা কোনভাবেই সমাজ ও দেশের জন্য কাম্য নয়।একদিকে কোচিং সেন্টারের নামে বিদ্যা ব্যবসার অপ্রতিরোধ্য দৌরাত্ম্য আর দেশ ও সমাজের সামনে আগামী প্রজন্মের যে করুণ পরিণতি এই দুইয়ের বিরুদ্ধে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং অভিভাবকরা দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টে কড়া নেড়েছিলেন।সর্বোচ্চ আদালতে দায়ের করা আর্জি মূলেই অনেকটা দেরিতে হলেও কেন্দ্রীয় সরকার এই কোচিং সেন্টারগুলোর উপর লাগাম পরাতে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করলেন।যেখানে কোচিং সেন্টারের তরফে পড়ুয়াদের থেকে বেশি অর্থ আদায় এবং কোনও অসদাচরণের অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়।আছে উপযুক্ত সুযোগ সুবিধার অভাব,শিক্ষার পদ্ধতি নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ।কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোচিং সেন্টারের তরফে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের উদ্দেশে বিভ্রান্তিকর কিছু প্রতিশ্রুতি বা গ্যারান্টি দিয়ে প্রলুব্ধ করার বিষয়ও থাকে।কোচিং সেন্টারের ভর্তির পর মাঝপথে সেন্টার ছেড়ে সতে চাইলে ছাত্রছাত্রীদের কোর্সের টাকা না দেওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে।কেন্দ্রীয় সরকার এই সার্বিক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করে কোচিং সেন্টারের মান বৃদ্ধির উপর লাগাম আরোপ করেছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের এই গাইডলাইন দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন গতি দেবে- তা অবশ্যই বলা যায়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.