স্থায়ী ঠিকানায় শ্রীরাম!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-২২ জানুয়ারী,২০২৪।দেশের ইতিহাসে দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে দীর্ঘকাল।এদিনই অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে।অবসান হলো দীর্ঘ ৫০০ বছরেরও বেশি সময়ের।ভগবান রাম পেলেন তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। প্রভু রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল সোমবার।মাহেন্দ্রক্ষণ দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে অযোধ্যায় রামমন্দিরে ভগবান রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠাকে ঘিরে আসমুদ্র হিমাচল ঘিরে রামভক্তদের মধ্যে যে উন্মাদনা ছিল তা ছিল নজিরবিহীন।গোটা দেশের নজর এদিন ছিল অযোধ্যার দিকে। অযোধ্যায় প্রবেশের অনুমতি ছিল না সর্বসাধারণের। তবুও দেশের ১৪০ কোটি মানুষের এদিন চোখ ছিল টিভির পর্দায়- অযোধ্যার দিকে।কখন প্রভু শ্রীরামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে আর সর্বসাধারণের জন্য মন্দিরের দরজা উন্মুক্ত হবে- সেদিকেই দেশবাসীর নজর ছিল সকাল থেকেই।কেন্দ্রীয় সরকার এ জন্য আগেভাগেই বেলা আড়াইটা পর্যন্ত গোটা দেশে সমস্ত অফিস আদালত থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছিলো।রাজ্যে রাজ্যেও ছুটি ছিল ভগবান রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান দেখার জন্য।গত কয়েক মাস ধরে রামমন্দিরের কবে উদ্বোধন হবে সেদিকে সবার নজর ছিল।২২ জানুয়ারী উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হবার পরই এনিয়ে উন্মাদনা তুঙ্গে উঠে।বিশেষ করে সংঘ পরিবার থেকে শুরু করে বিজেপির বিভিন্ন শাখা সংগঠন একে ঘিরে ব্যাপক প্রচারাভিযানের কৌশল নেয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর উদ্বোধন করবেন এটা জেনে বিভিন্ন ধর্মীয় গুরুরা যদিও এতে বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন। চার ধামের চার শঙ্করাচার্য আজকের অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন।তাদের বক্তব্য ছিল -এক,অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মীয়মাণ অবস্থায় কেন উদ্বোধন হবে?দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী কেন ভগবান রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠিত করবেন?এ নিয়ে চার শঙ্করাচার্যই রীতিমতো তোপ দাগেন।যদিও এতে অবশ্য টলেনি বিজেপি,সংঘ পরিবার সহ প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং।অন্যদিকে বিরোধী দলগুলির তরফে এই উদ্বোধনকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়ায় অনুষ্ঠানে না যাবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।এদিন অবশ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পাশে সংঘচালক মোহন ভাগবত, যোগী আদিত্যনাথ এবং রামজন্মভূমি ট্রাস্টের কর্তারাই ছিলেন মূলত।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের মধ্যে কিছু বলিউড তারকা, কতিপয় শিল্পপতি এবং সাধুসন্তদেরই বেশি দেখা গেছে। রামমন্দির উদ্বোধন নিয়ে গত প্রায় মাসাধিককাল ধরে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রচারাভিযান নেওয়া হয়।বিশেষ করে বিজেপি,সংঘ সহ বিজেপির শাখা সংগঠনগুলি এই প্রচারকে একেবারে সপ্তমে নিয়ে যায়। রামমন্দির এবারের নির্বাচনের অন্যতম বড় ইস্যু বিজেপির। বিজেপি চাইছে রামমন্দিরকে নিয়ে হিন্দু আবেগকে উস্কে দিতে। তাই রামমন্দির উদ্বোধন এবং রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠাকে ঘিরে যে নজিরবিহীন উন্মাদনা এবং প্রচারের ধরন বিজেপি নিয়েছে তাও এককথায় নজিরবিহীন।তড়িঘড়ি রামমন্দির উদ্বোধন ঘিরেও অনেকেই আপত্তি তোলেছেন।কিন্তু একে বিশেষ পাত্তা দিতে চায়নি সংঘ এবং বিজেপি।বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।রাম প্রত্যেক ভারতীয় হিন্দুর কাছে হৃদয়সম্রাট।রামকে ঘিরে হিন্দুদের আবেগ রয়েছে।সেই রামকে এবার লোকসভা নির্বাচনের অন্যতম হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি।তাই জানুয়ারী মাসেই রামমন্দির উদ্বোধনের দিন তারিখ বেছে নেওয়া হয়েছে।রামজন্মভূমি ট্রাস্ট প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে এর উদ্বোধন করানোর প্রস্তাব দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীও সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। একেবারে ভোটের বছর সেই লোভনীয় অফার লুফে নেন প্রধানমন্ত্রী।এমনিতেই রামমন্দির নির্মাণ বিজেপির অন্যতম অ্যাজেণ্ডা ছিল।মন্দির নির্মাণ তো হয়ে গেল,এবার অন্য পথচলা শুরু।প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সোমবার প্রাণপ্রতিষ্ঠা শেষে উপস্থিত জনতাকে সম্বোধন করতে গিয়ে বলেছেন, রাম ভারতের চেতনা, ভারতের আত্মা,এবার আমাদের আরও বিনয়ী হতে হবে।এর পরবর্তী লক্ষ্য কী?দেশে কি রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা হবে অযোধ্যায় রামলালা স্থাপনের পর?