মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, বন্ধ ইন্টারনেট,, কার্ফু জারি!!
ন্যায় যাত্রায় অন্যায়!!
অনলাইন প্রতিনিধি :- কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তার দ্বিতীয় দফায় ভারত ন্যায় যাত্রায় বের হয়েছেন। এবার তার যাত্রাপথ মণিপুর থেকে মুম্বাই। গত ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাহুল গান্ধী যে ভারত জোড়ো যাত্রা করেছিলেন তাতে দক্ষিণ থেকে উত্তরকে জুড়েছিলেন। এবার রাহুল গান্ধী পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রথম দফার রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রায় কোন বাধা দেওয়া হয়েছে বলে শোনা যায়নি। শেষদিকে দিল্লী থেকে রাজস্থান যাবার সময় একবার কোভিডের দোহাই দিয়ে রাহুলকে আটকানোর চেষ্টা হয়েছিলো। কিন্তু পরে এ নিয়ে পাল্টা চিঠি চালাচালি শুরু হওয়ায় পরে এ নিয়ে আর বেশিদূর এগোয়নি কেন্দ্র। ফলে আর হৈচৈ হয়নি। কিন্তু এবার দ্বিতীয় দফার ভারত ন্যায় যাত্রায় শুরু থেকেই বাধা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। এবার রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেস নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত- হিংসাদীর্ণ মণিপুর থেকে ভারত ন্যায় যাত্রা শুরু হবে। এজন্য মণিপুরে বিজেপি সরকারের কাছে আবেদন জানায় কংগ্রেস নেতৃত্ব।। । কিন্তু ইম্ফল থেকে সেই যাত্রার অনুমতি দেয়নি বিজেপি সরকার। ফলে বাধ্য হয়েই থৌবাল জেলা থেকে ভারত ন্যায় যাত্রা সূচনা করা হয়। মণিপুরের বিজেপি সরকারের বক্তব্য ছিল-রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। তাই অনুমতি জীবনে দেওয়া যাবে না ইম্ফল থেকে যাত্রা শুরুর। যদিও পরবর্তীতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভারত ন্যায় যাত্রা থৌবাল জেলা থেকে শুরু হয়। মণিপুরে রাহুল গান্ধীর ভারত ন্যায় যাত্রায় ব্যাপক সাড়া পরিলক্ষিত হয়। স্থানীয় কুকি এবং মেইতেই দুই সম্প্রদায়ের তরফেই কিছু গুলে রাহুল গান্ধীর কাছে রাজ্যে শান্তি স্থাপনের দাবি জানানো হয়। বিশেষ করে কুকিরা দাবি জানায় যে, ইম্ফলে তারা যেতে পারছে না। তাদের পড়াশোনায় মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে। তাই রাহুল গান্ধী যদি কিছু করতে পারেনি। রাহুল তাদের বলেছেন, সংসদে এবার তারা কথা বলার চেষ্টা করবেন। রাহুল আরও বলেছেন, এ কারণেই তারা মণিপুর থেকে ভারত ন্যায় যাত্রার সূচনা করেছেন। কেননা তারা চান মণিপুরের কথা ভারত জানুক। মণিপুরকে ভারতের অংশ হিসাবে মনে করে কংগ্রেস।
এরপর আসাম এসে ফের বাধার সম্মুখীন হয় ভারত ন্যায় যাত্রা। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের গাড়ি ভাঙচুর হয়। মন্দিরে যেতে দেওয়া হয়নি রাহুল গান্ধীকে। গুয়াহাটি শহরে রুট বদলে ফেলা হয়। অর্থাৎ গুয়াহাটি শহরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি রাহুল গান্ধীকে। সব মিলিয়ে বলা যায় শুরুতেই পূর্বোত্তরের ২ বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাধার সম্মুখীন হয়েছে রাহুল গান্ধীর ভারত ন্যায় যাত্রা। মণিপুর এবং আসামে। অথচ নাগাল্যাণ্ড, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়ে কোন রকম বাধা দেওয়া হয়নি রাহুল গান্ধীকে। জয়রাম রমেশ সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, রাহুল গান্ধীর প্রথম দফার ভারত জুড়ো যাত্রায় কোথাও তেমন কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। সেই যাত্রা বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির উপর দিয়ে গেছে। উল্লেখ্য, প্রথম ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু হয়েছিল কেরল থেকে। শেষ হয়েছিল জন্মু কাশ্মীরে গিয়ে। এবারের রাহুল গান্ধীর ভারত ন্যায় যাত্রা শুরু হয়েছে মণিপুর থেকে শেষ হবে মুম্বাইয়ের ১০ মার্চ। তবে রাহুল গান্ধীর এই দফায় ভারত ন্যায় যাত্রায় এখন অবধি সবচেয়ে বেশি সময় কাটানো হচ্ছে আসামে। পূর্বোত্তরের সবচেয়ে বড় রাজ্য আসাম। সুতরাং আসামে ভারত ন্যায় যাত্রা বেশি সময় কাটাবে এটাই স্বাভাবিক এবং রাহুল গান্ধী কবে কোথায় যাবেন তা আগে থেকেই নির্ধারিত। সরকার, প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়েই রাহুল গান্ধী তার ভারত ন্যায় যাত্রায় বের হয়েছেন। এক রাজ্য থেকে অপর রাজ্য। কিন্তু আসামে কেন বারবার বাধা দেওয়া হচ্ছে হামলা করা হচ্ছে? রাহুল এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব টার্গেট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে।হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে নজিরবিহীনভাবে আক্রমণ করেছেন রাহুল গান্ধী। তাকে ভারতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে অভিহিত করে রাহুল বলেছেন, একদিকে আসাম সরকার দেশের দুর্নীতিগ্রস্থ সরকার এবং মুখমন্ত্রীও দুর্নীতিগ্রস্ত। স্বভাবতই হিমন্তর তাতে গোসা হয়েছে। তাই বারবার রাহুলের ভারত ন্যায় যাত্রায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে- কংগ্রেস তাই মনে করছে। বিজেপির বদ্ধমূল ধারণা, প্রথম ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল বেশি সাফল্য কুড়িয়েছেন। এজন্য দক্ষিণের রাজ্য তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস সাফল্য কুড়িয়েছে। হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেস সাফল্য পেয়েছে। এছাড়া সংসদ এবং সংসদের বাইরে রাহুল গান্ধীর ভাবমূর্তিও অনেকটা বেড়েছে। দ্বিতীয়ত প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের দায়ে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ কেড়ে নিলেও তা পরবর্তীতে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। এতে রাহুল গান্ধীর জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা দুটোই বেড়েছে বলে কংগ্রেস নেতৃত মনে করে। তাই এবার বিজেপি মনেপ্রাণে চাইছে রাহুল গান্ধীর দ্বিতীয় দফায় ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা কোন মতেই যাতে সফল না হয় দেখতে হবে। তাই মণিপুর, আসামে যাত্রায় বাধা দেওয়া হচ্ছে আদতে রাহুল গান্ধীকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আদতে রাহুল গান্ধীকে বাধা দেওয়া মানে তো প্রচারের লাইম লাইটে চলে আসা। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি যদি কেন্দ্রের নির্মমতা চালিে যায় তাহলে বুমেরাং হতে পারে। কংগ্রেস নেতৃত্ব মরিয়া ভারত ন্যায় যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে। এবার দেখার, যাত্রা কিভাবে এগোয়কী আর বিজেপি কী স্ট্র্যাটেজি নেয়।