দৈনিক সংবাদের সাংবাদিক হেনস্থা
ক্ষমা চাইলেন বিওপি ইনচার্জ
অনলাইন প্রতিনিধি :- ঘটনার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই চুপসে গেল বিলোনীয়া বিএসএফ বিওপির ইনচার্জ এমএল হকিতের দাদাগিরি। একেবারে ল্যাজ গুটিয়ে হাতজোড় করে ক্ষমা ভিক্ষা চাইলেন সাংবাদিকদের কাছে। শুধু তাই নয়, কাতরভাবে আবেদন জানিয়ে বলেন, তার ভুল হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এমন ভুল আর করবেন না বলে বিলোনীয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অভিজিৎ দাস এবং বিলোনীয়া থানার ওসি শিবু রঞ্জন দে’র উপস্থিতিতে ওই বিএসএফ আধিকারিক তাঁর ভুল স্বীকার করেন এবং সাংবাদিকদের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এখানেই শেষ নয়, ওই বিএসএফ আধিকারিকের অনুরোধ বিলোনীয়ার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অভিজিৎ
দাস ফোনে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন। বিএসএফ আধিকারিকের ভুল স্বীকার করা এবং ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে অবহিত করেন। শেষে ভদ্রতা ও সৌজন্যতার খাতিরে বিএসএফ আধিকারিকের আবেদনে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করে দেখবে বলে জানায় উল্লেখ্য, সোমবার বিলোনীয়া মুহুরীঘাট চেকপোস্টে এবং সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের ফেন্সিং নির্মাণের কাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বিএসএফের ডিআইজি। তার এই সফরের সংবাদ পরিদর্শনের সংবাদ সংগ্রহ করতে যান দৈনিক সংবাদের স্থানীয় প্রতিনিধি বরিষ্ঠ সাংবাদিক স্বপন কুমার দাস। ডিআইজি সফর শেষে বিলোনীয়া থেকে রওনা হওয়া পরই আচমকা বিওপির ইনচার্জ এমএল হকিত এবং আরও এক বিএসএফ আধিকারিক সাংবাদিক শ্রীদাসের সাথে অনৈতিক আচরণ করেন। সাংবাদিক শ্রীদাসকে চরমভাবে হেনস্থা করেন। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। জোরজবরদস্তি করে তাকে বিএসএফের গাড়িতে তুলে নিয়ে প্রথমে এসডিপিও অফিসে এবং পরে বিলোনীয়া থানার নিয়ে যাওয়া হয়। কি অপরাধে সাংবাদিকদের সাথে এমন অনৈতিক আচরণ করা হলো? তার কোনও জবাব বিএসএফের কাছে নেই। থানায় আসার পর পুলিশ উল্টো বিএসএফের এই কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করে। থানা থেকে তৎক্ষণাৎ সাংবাদিক স্বপন কুমার দাসকে স্বপন কুমার দাসকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং নিন্দার ঝড় উঠে। স্বপন কুমার দাস এই ঘটনায় রাতে বিএসএফের দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করে। ততক্ষণে স্থানীয় বিএসএফ কর্তৃপক্ষও বুঝে গেছে যে, তারা অনৈতিক কাজ করেছে এবং গলদ জায়গায় হাত দিয়েছে। বিষয়টি অনেক দূর পর্যন্ত গড়াবে। রাতেই অভিযুক্ত বিওপি ইনচার্জ এমএল হকিত সাংবাদিক শ্রীদাসকে বিওপিতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু সাংবাদিক শ্রীদাস সেই আমন্ত্রণ সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। সকাল হতেই অভিযুক্ত বিওপি ইনচার্জ এমএল হকিত বিলোনীয়া থানায় ছুটে যান। খবর পেয়ে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আভিজিৎ দাস ও থানায় পৌছান। পুলিশ আধিকারিকদের অনুরোধ জানান, বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য। পুলিশ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় বিষয়টি তাদের হাতে নেই। যিনি অভিযোগ করেছেন এবং পত্রিকা কর্তৃপক্ষ এই ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিওপি ইনচার্জ তখন সাংবাদিক স্বপন কুমার দাসকে খবর দেওয়ার জন্য বলেন। পরে থানা থেকে সাংবাদিক শ্রীদাসকে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। স্বপন বাবু থানায় যাওয়ার পরই অভিযুক্ত বিওপি ইনচার্জ হাতে ধরে, হাতজোর করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। জবাবে স্বপন দাস বলেন, এই ব্যাপারে তার কিছুই করার নেই। পত্রিকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই হবে। পরে বিওপি ইনচার্জের অনুরোধে এসডিপিও শ্রীদাস পত্রিকার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন।এদিকে মঙ্গলবার, সকালে পত্রিকায় এই খবর প্রকাশ হতেই বিলোনীয়া পুরসভার চেয়ারম্যান নিখিল চন্দ্র গোপ, কাউন্সিলার অনুপম চক্রবর্তী, সমাজসেবী গৌতম সরকার, গৌতম দত্তগুপ্ত সহ আরও অনেকে শ্রীদাসের বিলোনীয়া ১ নং টিলাস্থিত বাড়িতে যান। শাসক এবং বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরাও ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। স্থানীয় বিধায়ক সহ প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকরাও খোঁজ খবর নেন। অন্যদিকে, সাংবাদিকদের উপর এই ধরনের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার বিলোনীয়া সমস্ত সাংবাদিকরা থানার ওসির সাথে সাক্ষাৎ করে ডপুটেশন প্রদান করে। জানা গেছে, সাংবাদিক হেনস্থা এবং আগে আরও এই ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানিয়ে আগামীকাল সাংবাদিকরা বিলোনীয়া থানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার আমজাদনগরে বিএসএফের উদ্যোগে আয়োজিত সিভিক অ্যাকশন প্রোগ্রাম সাংবাদিকরা বয়কট করেন।
দৈনিক সংবাদের সাংবাদিক স্বপন কুমার দাসের সাথে বিএসএফের কতিপয় অফিসারের অনৈতিক আচরণ ও হেনস্তার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে আগরতলা প্রেস ক্লাব। ক্লাবের পক্ষ থেকে পুলিশকে এই ব্যাপারে দ্রুত বস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এদিকে সাংবাদিক স্বপন কুমার দাস রাজ্যের সমস্ত সাংবাদিক সংগঠন, আগরতলা প্রেস ক্লাব, বিলোনীয়ার এসডিপিও অভিজিৎ দাস, ওসি শিবু রঞ্জন দে, দৈনিক সংবাদ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, তার পাশে থাকার জন্য।