পাল্টুরাম!
অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারতীয় রাজনীতিতে এখন আর অসম্ভব বলে কিছুই নেই। যেকোনও সময় যা কিছু ঘটে যেতে পারে।২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসের শেষ রবিবারের ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করে দিলো যে রাজনীতিতে সবই সম্ভব। জল্পনা শুরু হয়েছিলো দুদিন আগে থেকেই।সেই জল্পনা রবিবার বাস্তব রূপ পেলো। বিহারে উল্টো গেলো সরকার।
রবিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন নীতীশ কুমার।
এদিন বিকেলেই ফের বিজেপির হাত ধরে মুখ্যমন্ত্রী পদে পুনরায় শপথ নিলেন নীতীশ কুমার।এই চমক পদ পালাবদলের সাথে সাথে নীতীশ কুমারের নামের সাথে এখন আরও একটি শব্দ উপাধি হিসাবে যুক্ত হয়েছে। সেটি হলো ‘নীতীশ ‘পাল্টুরাম’ কুমার’।বিহার এবং জাতীয় রাজনীতিতে ‘পাল্টরাম’ শব্দটি এখন রীতিমতো ভাইরাল।সোশ্যাল মিডিয়ায় তো একেবারে ঝড় উঠেছে। একই সাথে সমালোচনাও তীব্র আকার নিয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি তথা ইন্ডিয়া জোটের চেয়ারপার্সন মল্লিকার্জুন খাড়গে ‘আয়ারাম গয়ারাম’ বলে নীতীশকে কটাক্ষ করেছেন।খাড়গে আরও বলেছেন,আমি জানতাম এটা হবে।নীতীশের জোট ছাড়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন লালু প্রসাদ এবং তেজস্বী যাদব।আজ সেটা সত্যি হয়েছে।এমন আয়ারাম গয়ারাম দেশে অনেক রয়েছে।কংগ্রেস নেতা তারিক আনওয়ার নীতীশ কুমারকে কটাক্ষ করে এক্স হ্যান্ডেলের বলেন,একজনকে বিয়ে করে অন্যজনের সাথে সম্পর্কে জড়ানো- এটা নীতীশ কুমারের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।কংগ্রেসের আরেক নেতা জয়রাম রমেশ গিরগিটির সাথে তুলনা করেছেন নীতীশ কুমারের। তিনি এক্স হ্যান্ডেলেল পোস্ট করে লিখেন, ‘রাজনীতিতে বারবার রঙ বদল করে নীতিশ কুমার গিরগিটিকেও টক্কর দিচ্ছেন।এমন আরও বহু তীক্ষ্ণ শব্দবাক্য ধেয়ে আসছে।নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে।তবে আলোচনায় সবথেকে বেশি স্থান পাচ্ছে ‘পাল্টুরাম’ উপাধি।একই সাথে ভাইরাল নীতীশের একটি পুরনো ভিডিও।২০২২ সালের আগষ্ট মাসে শেষবার এনডিএ ছেড়েছিলেন নীতীশ কুমার।আর এখন ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের। তাতে দেখা গেছে, সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, আরজেডি এবং কংগ্রেসের মহাগঠবন্ধন ছেড়ে আবার কি বিজেপির জোটসঙ্গী হবেন তিনি?এর উত্তরে নীতীশ কুমার স্পষ্টভাবে বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না।মৃত্যুবরণ করবো,তবু বিজেপির সঙ্গে জোট করবো না।’ নীতিশ যখন এই কথা বলেছেন, তখন তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন সেই সময়ের বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব।তখন কি আর তেজস্বী যাদব কল্পনাও করতে পেরেছিলেন,বছর ঘুরতে না ঘুরতেই চাচা নীতীশ কুমার আবার পাল্টি খেয়ে ‘পাল্টুরাম’ উপাধি অর্জন করবেন!অপরদিকে শেষবার যখন বিজেপি ত্যাগ করেন নীতীশ,সেই সময় বিজেপির তরফে বলা হয়েছিল, চিরকালের জন্য নীতীশের ক্ষেত্রে বিজেপির দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।ফিরতে চাইলেও আর নীতীশকে ফেরত নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিলেন খোদ অমিত শাহ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন,তাহলে কেন আবার নীতীশের হাত ধরছে বিজেপি?এর জবাব শুরুতেই রয়েছে। রাজনীতিতে সবই সম্ভব। সকালের কথা বিকেলে পাল্টে যায়।ফলে কে কী বলছে, তার তেমন কোনও গুরুত্ব নেই।অথবা বেদবাক্য বলে মনে করার কোনও কারণ নেই লাভ ক্ষতির অঙ্কেতেই পাল্টে যায় সবকিছু।পাল্টুরাম নীতিশের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে।এতে কোনও দ্বিমত নেই।নীতীশকে ফের ঘরে তুলে বিজেপির কতটা লাভ হলো বা হবে? সেটা আলোচ্য বিষয় নয়। লোকসভা নির্বাচনের মুখে নীতীশ কুমারকে ঘরে তুলে বিজেপি যে বিরোধী জোটকে বড় ধরনের ঝটকা দিয়েছে তা কিন্তু অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। শুধু তাই নয়, ভোটের মুখে নীতীশের এই শিবির বদল অস্বস্তিতে ফেলেছে আইএনডিআইএ শিবিরকেও।প্রশ্ন উঠেছে নেতৃত্বের বিচক্ষণতা নিয়েও। কেননা,বারবার শিবির বদল করে এসেছেন যে নীতীশ, তাঁকে জোটের আহ্বায়ক হতেই বা কোন্ আক্কেলে আহ্বান জানিয়েছিলেন বিরোধী শিবিরের নেতা নেত্রীরা? নীতীশকে ভাঙিয়ে নিয়ে বিজেপি ভোট বাক্সে সুবিধা করতে না পারলেও আইএনডিআই এ জোট যে স্থিতিশীল নয়, বিজেপি কিন্তু তা প্রমাণ করতে সফল হলো বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর এখানেই সফল গেরুয়া শিবির। অপরদিকে, ভারতীয় রাজনীতিতে নীতীশ কুমারকে ‘পাল্টুরাম’ উপাধি নিয়েই হয়ত বাকি জীবন কাটাতে হবে।