অধিক প্রত্যাশা নাস্তি!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-দেশের সপ্তদশ লোকসভা এবং দ্বিতীয় মোদি সরকারের অন্তিম যে আর্থিক বাজেট আজ সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, তা থেকে বেশি প্রত্যাশা অর্থহীন।কারণ এটি পূর্ণাঙ্গ নয়, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ‘ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট’ তথা অন্তর্বর্তী বাজেট।সরকারী খরচ ও কাজকর্মে যাতে বাধা না আসে, তার জন্য লোকসভা নির্বাচনের আগে এই অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করা হয়।অর্থমন্ত্রী সীতারামন আজ টানা তার ষষ্ঠ বাজেট পেশ করবেন।মোরারজী দেশাইয়ের পরে এই প্রথম তা করতে চলেছেন দেশের কোনও অর্থমন্ত্রী।জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী, নির্বাচনি বছরে সরকার অন্তর্বর্তী বাজেটে এমন কিছু ঘোষণা করতে পারে না যা ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে।এহ বাহ্য, অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে নীতি-নিয়মেরও কোনও পরিবর্তন ঘটানো যায় না। ঘোষণা করা যায় না অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় কোনও সংস্কারমুখী কর্মসূচি। তবুও, নির্বাচনের কয়েক মাসে নিজের লক্ষ্যের কথা কেন্দ্র জানাতেই পারে এবং তাতে থাকতে পারে ছোটখাটো জনমোহিনী প্রকল্পও।এতদসত্ত্বেও, মোদি সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা প্রচুর। বিশেষ করে, আসন্ন নির্বাচনের অভিমুখ যখন প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিতবাহী, জনতার প্রত্যাশা স্বাভাবিক। বিগত কয়েক মাসে প্রধানমন্ত্রীর মুখনিঃসৃত আশ্বাসে সমাজের মূলত চার শ্রেণীর মধ্যে অবশ্যই বাড়তি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নরেন্দ্র মোদি একাধিকবার বলেছেন, তার কাছে চারটিই জাত – মহিলা, তরুণ, গরিব এবং চাষি।অর্থমন্ত্রী সীতারামনও বলেছেন, অন্তর্বর্তী বাজেটে তার অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবেন এই চার গোষ্ঠীর মানুষ।নিয়মের বাঁধনে সরকার ভোটমুখী জনতার জন্য কোনও বড় নীতিগত ঘোষণা না করলেও ভোট বাক্সের দিকে তাকিয়ে মহিলা, তরুণ, গরিব ও চাষিদের জন্য কিছু উপহার ‘বিতরণ’ করবে সেটাই প্রত্যাশিত।সম্ভবত কৃষকদের জন্য পিএম-কিষান প্রকল্পে প্রাপ্তির অঙ্ক বাড়তে পারে।এখন এই প্রকল্পে কৃষকরা বছরে ছয় হাজার টাকা করে পান।সেটি বৃদ্ধি করে আট হাজার টাকা করা হতে পারে।কৃষকদের স্বস্তি দিতে সারে ভর্তুকি বাড়তে পারে।চলতি অর্থবর্ষে এই খাতে দুই লক্ষ কোটি টাকা অন্তত দশ শতাংশ বাড়াতে পারে সরকার।ভর্তুকি বাড়লে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ে, কৃষকরা উপকৃত হন,তবে রাজকোষে চাপও বাড়ে।সে চাপ শেষ পর্যন্ত জনতাকেই বহন করতে হয়।মোদি সরকার ইতিমধ্যেই অন্ন যোজনার মেয়াদ আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়িয়েছে,যার সুফল ভোগ করবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের আশি কোটি মানুষ। একইভাবে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য বিমা যোজনা আয়ুষ্মান ভারতেও বিমার অঙ্ক পাঁচ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে দশ লক্ষ টাকা করা হতে পারে। পাশাপাশি, গ্রামের গরিবদের জন্য একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো ছাড়াও আরও কিছু ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।সর্বোপরি, মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্যের দাম কমাতে অর্থমন্ত্রী উল্লেখযোগ্য ঘোষণা করবেন সেটাই বিধেয়।অন্তর্বর্তী বাজেটে অধিক প্রত্যাশা নাস্তি হলেও মূলত মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের সুরাহা দিতে এখন পুরনো কর কাঠামোয় যে আড়াই লক্ষ টাকা আয়ের উপর থেকে সর্বনিম্ন হারে আয়কর প্রযোজ্য হয় তা পঞ্চাশ হাজার বাড়িয়ে তিন লক্ষ টাকা করা হতে পারে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে সুরাহা দিতে হয়তো বছরে মোট সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও করই দিতে হবে না। একই সঙ্গে পুরনো ও নতুন, দুই কর কাঠামোতেই ‘স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন’-এর পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে আরও দশ হাজার বাড়িয়ে ষাট হাজার টাকা করা হতে পারে।এমন প্রত্যাশার অন্যতম কারণ, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও অন্তর্বর্তী বাজেটে আয়কর ছাড়ের সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কাউকেই আয়কর দিতে হবে না বলে ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এমনকী প্রধানমন্ত্রী যতই ‘রেউড়ি (খয়রাতি) রাজনীতি’র বিরোধিতা করুন, নির্বাচন এলে গরিবকে ‘রেউড়ি’ (এক ধরনের মিষ্টান্ন) দেওয়ার তাগিদটি এড়ানো রাজনীতিকমাত্রের পক্ষেই কঠিন।মানুষের মুখে অন্ন জোগানোর দায়িত্বটি সরকারকে গ্রহণ করতেই হয়, তবে সেটি কেবল নির্বাচনে জয়লাভের উদ্দেশে না হয়ে সর্বস্তরের নাগরিকের স্বার্থে হওয়া কাম্য।দেশের বর্তমান রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি থেকে এটা বোঝাই যাচ্ছে, আগামী জুলাই মাসে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য যে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হবে,সেটি হবে অষ্টাদশ লোকসভা তথা তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম বাজেট।