ইন্ডিয়া জোট ও মমতা!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-ইদানীং ইন্ডিয়া জোটে শরিকদের মধ্যে জোট নিয়ে এক অনীহা প্রকাশ পাচ্ছে।বিশেষ করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজবাদী সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব, আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ
কেজরিওয়াল প্রমুখ ইন্ডিয়া জোটে থাকতে প্রায় রাজি নয়।বড় শরিক কংগ্রেস এখনও ইন্ডিয়া জোটের বিষয়ে আশাবাদী।কংগ্রেস বড় শরিক হিসাবে এখনও নমনীয় মনোভাবই পোষণ করছে।কংগ্রেস এখনও বিশ্বাস করে যে ইন্ডিয়া জোট সম্ভব এবং বিজেপিকে হারানো সম্ভব।এই অবস্থায় বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানারকম কথা বলা
হচ্ছে।সবচেয়ে জোট নিয়ে বেনজির আক্রমণ এসেছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোটের
বৈঠকেই নামকরণ হয়েছিলো আর বিরোধী জোটের নামকরণটি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপ্যাধায়ের মাথা থেকেই এসেছিলো।’ইন্ডিয়া’ নামটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই রেখেছিলেন এবং কংগ্রেস সহ অন্যান্য দল তাতে সম্মতি জানায় এবং এতেই সিলমোহর পড়ে।এরপর
মুম্বাই বৈঠকে বিরোধী দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতার বিষয়টিবনিয়ে আলোচনা হয়।এরপর ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোেট চলে আসে।এই ভোটের ফলাফলে কংগ্রেস তিন রাজ্যেই ধাক্কা খায়। আর এরপর থেকেই কংগ্রেসকে নিয়ে শরিকদের অনেকেরই গাত্রদাহ শুরু হয়।জোটের মধ্যে উপজোটের একটা প্রবণতা দেখা দেয়মমতাবন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল জোটের মধ্যে উপজোট তৈরির একটা চেষ্টা করেন।এরও আগে জেডি(ইউ) নেতা এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তেমনি তিনি মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার প্রথম দিল্লীতে এসে বিরোধী জোট গঠনের তদ্বির করেন।এবং তারই
উদ্যোগে বিরোধী জোটের প্রথম বৈঠকটি পাটনায় অনুষ্ঠিত হয়।নীতীশ
কুমার সম্প্রতি বিজেপি জোটে শামিল হয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।ইন্ডিয়া জোটে মূলত প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবার আশা করেছিলেন;নীতীশ। নেহাত তা না হলেও জোটের আহ্বায়ক পদ বা চেয়ারম্যান
পদের বাসনা ছিলো নীতীশের।কিন্তু কোন কিছু পদই জোটেনি নীতীশের। কংগ্রেস থেকে এক প্রকার উপেক্ষা করা হচ্ছিল নীতীশকে।ফলে নীতীশ আর উপায়ান্তর না দেখে বিজেপি জোটে গা ভাসিয়ে দেন।বিজেপি জোটে নীতীশের গা ভাসাতে দেরি, তৃণমূল নেত্রী মমতাববন্দ্যোপাধ্যায়ও জোট নিয়ে পাল্টি মারতে দেরি করেননি।কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বর্তমানে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় বের হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গ রাহুল যখন ন্যায় যাত্রা করছেন সে সময়ই রাহুলকে প্রায় অপদস্থ করে ছেড়েছেন মমতা। ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ
শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের এই ধরনের আচরণে কংগ্রেস হতাশ হলেও হাল এখনও ছাড়েনি কংগ্রেস।তৃণমূল নেত্রী তার রাজ্যে রাহুলের
যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাকে জিজ্ঞাসা না করে রাহুল কেন বাংলায় ঢুকেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন।এছাড়া রাহুলকে বসন্তের কোকিল
বলেনও অভিহিত করেছেন। তৃণমূল নেত্রী এই ধরনের আচরণ করে আসলে কেন্দ্রের শাসক দলকেই প্রকারান্তরে খুশি করতে চেয়েছেন।(এক) নীতীশ জোট ছেড়ে চলে গেছেন,(দুই) ঝাড়খণ্ডে হেমন্তকে গারদে পুরেছে ইডি। কেজরিওয়ালকে গারদে পোরার অপেক্ষায় ইডি।এই অবস্থায় মমতার সামনে বিকল্প হলো-ইন্ডিয়া জোটকে গালমন্দ করা।কংগ্রেসকে গালমন্দ করা।মমতা বারবারই বলছেন যে, জোটের বিষয়ে কথা হবে ভোটের পর।এতে করে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে,বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হলে বিজেপি জোটকে সমর্থনের রাস্তা তিনি খোলা রাখলেন।মমতা বিলক্ষন জানেন, তার দলের আরও কয়েকজন নেতা নেত্রীর ভাগ্য ইডি, সিবিআইর সুতোয় ঝুলছে। তাই ভোটের মুখে আর দিল্লীর সাথে সংঘাত নয় বার্তা দিতেই কংগ্রেসের সাথে দূরত্ব বাড়িয়েছেন মমতা। তৃণমূল নেত্রী হয়তো ভুলে গেছেন যে ২০১১ সালে কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া তার গদিতে আসা সম্ভব ছিলো না। এখন কংগ্রেসকে অস্বীকার করা ছাড়া মমতার সামনে আর ‘অপশন’ খোলা নেই। মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস আঞ্চলিক দল, আপ কিংবা সমাজবাদী পার্টিও আঞ্চলিক দল।সুতরাং তাদের দিল্লী দখল নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। তারা তাদের নিজ রাজ্যে ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং কিছু আসনে জয়লাভ করতে পারলেই হলো।কংগ্রেসের কাছে জোট মুখ্য নয়। কংগ্রেস জাতীয় স্তরে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ। গোটা দেশেই তার অস্তিত্ব রয়েছে।সুতরাং কংগ্রেসকে বৃহত্তর স্বার্থ নিয়ে ভারতে হয়। শেষ পর্যন্ত যদি ইন্ডিয়া জোট কয়েকটি মুষ্টিমেয় দল নিয়েই হয় তাহলেই হোক। ভবিষ্যতের জন্য কংগ্রেসকে হয়তো আজ এই বলিদান দিতে হচ্ছে।কিন্তু কেন্দ্রে বিজেপির বিকল্প কংগ্রেসই- আজ না হয় কাল তা প্রতিষ্ঠিও হবেই।শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।