ভোট ব্রহ্মাস্ত্র ও রত্ন!!

 ভোট ব্রহ্মাস্ত্র ও রত্ন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারতরত্ন প্রাপকদের তালিকা আরও বড় হল।গত এক মাসে দেশের ৫ জন।’ভারতরত্ন’ প্রাপক এই ৫ জনের মধ্যে ২ জন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী,একজন প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী, একজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং অপরজন দেশের কিংবদন্তি কৃষিবিজ্ঞানী।ভারতরত্ন পাওয়া এই ৫ জনের মধ্যে চারজনই খেতাব পেলেন মরণোত্তর।লোকসভার ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে মাত্র ১ মাসের মধ্যে ৫ জনকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার এই ঘোষণার পেছনে যে রাজনীতিই প্রধান কারণ সেই নিয়ে এখন জোরদার জল্পনা চলছে সর্বত্র।মাত্র গত মাসেই ভারতরত্ন সম্মান দেওয়ার ঘোষণা করা হয় বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অনগ্রসর নেতা প্রয়াত কপুরী ঠাকুরকে। এই ঘোষণার পর পর পরই ইন্ডিয়া জোট ভেঙে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোটে নাম লেখান বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।একমাস না পেরোতেই এবার ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত করা হল দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জাঠ নেতা চরন সিংকে।আর চরন সিংকে ভারতরত্ন ঘোষণার পর ‘ইন্ডিয়া’জোট ছেড়ে এনডিএ জোটে শামিল হলেন চরণ সিং-এর নাতি, জাঠদের তৃতীয় প্রজন্মের নেতা রাষ্ট্রীয় লোকদলের জয়ন্ত চৌধুরী।২০১৯ সালে লোকসভার নির্বাচনে বিজেপি দল যে ১৬টি আসনে পরাজিত হয়েছিল তার ওটিই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ,যা কিনা জয়ন্তর খাসতালুক।জরুরি অবস্থার খেসারত হিসাবে ইন্দিরার যখন পরাজয়ে ঘটে তখন ১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাই মন্ত্রিসভার প্রধান মুখ ছিলেন চরণ সিং।কিন্তু আড়াই বছরের বেশি স্থায়ী হতে পারেনি মোরারজি সরকার।দেশাই সরকারের পতনের পর ১৯৭৯ সালের মাঝামাঝি থেকে মাত্র ৭ মাসের জন্য যে সরকার গঠিত হয়েছিল তারই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চরণ সিং। এই বছর জানুয়ারীতে রামমন্দির উদ্বোধনের পর দেশে রাম রথযাত্রা ও রামমন্দির আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানীকে ভারতরত্ন দেওয়ার ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিনুকেরা বলেন,মন্দির উদ্বোধনে তাঁকে যেতে না দেওয়ার সমালোচনা ঠেকাতে এবং দলের মার্গদর্শক বানিয়ে কার্যত আদবানীকে ‘গৃহবন্দি’ করে রাখার বিরূপ মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতেই এই খেতাব দেওয়ার কৌশলী ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও এবং কৃষিবিজ্ঞানী স্বামীনাথনকে ভারতরত্ন দেওয়ার ঘোষণার পেছনে পুরোপুরিই যে দাক্ষিণাত্যের ভোটের রাজনীতি কাজ করছে সেটা সকলের চোখেই পরিষ্কার।মনে রাখতে হবে আসন্ন লোকসভার নির্বাচনে বিজেপির স্লোগান আব কি বার ৪০০ পার।অর্থাৎ আগামী লোকসভায় বিজেপির লক্ষ্য ৪০০ আসন।আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছুতে গেলে দক্ষিণের ১৩০ টি আসনে ভালো ফল করতে
হবে বিজেপিকে।সেই লক্ষ্য বিজেপির দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে।যে কারণে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের সময়ে তামিলনাড়ুর মন জিততে সোনার রাজদণ্ড বা সেঙ্গল স্থাপন করা হয়েছিল নতুন পার্লামেন্ট ভবনে।আর এবার সরাসরি ভোটকে মাথায় রেখে দক্ষিণের চাণক্য, কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও এবং সবুজ বিপ্লবের জনক স্বামীনানকে ভারতরত্নে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।আসল কথা হল বিজেপির লক্ষ্য লোকসভায় ৪০০ আসন। আর সেই আসন জিততে অন্যতম ব্রহ্মাস্ত্র এখন ‘ভারতরত্ন’।২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩০৩ টি আসন জিতেছিল। এখন বিজেপি আসন জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ৪০০ টি। এর অর্থ হচ্ছে বিজেপি একাধারে ভোটের শতাংশ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি যে এলাকায় বিজেপি আগে কখনো জিততে পারেনি, সেই এলাকায় বিজেপিকে এবার ঝাঁপাতে হবে। নরসিমহা ছিলেন অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা।স্বাভাবিক কারণেই লোকসভা ভালো ফল করতে গেলে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ প্রভাবিত বলয়ে বিজেপিকে যেমন জয়ন্ত চৌধুরীর প্রয়োজন,তেমনি দাক্ষিণাত্যের তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুকেও প্রয়োজন। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই চরণ সিং থেকে শুরু করে পিভি নরসিমহা রাও এবং কৃষিবিজ্ঞানী স্বামীনাথনের ভারতরত্ন সম্মান বিজেপির ফোকাস ৪০০-এর দূরদর্শী কৌশল। সেই একই কারণে বিহারে অনগ্রসর ভোটকে মাথায় রেখে কপুরী ঠাকুরকে মরণোত্তর শ্রেষ্ঠ নাগরিক সম্মানের জন্য বাছাই করা হয়েছিল।সব মিলিয়ে লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকারের একের পর এক চমক,বিজেপির লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম দ্যোতক তা বলাই যায়।এ সবই লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপির একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক পদক্ষেপের অঙ্গ বলেই মনে করা হচ্ছে।এই অবস্থায় ভোটের আগে আর কী কী রাজনৈতিক চমক অপেক্ষা করছে দেশবাসীর সেই জল্পনাই এখন মুখে মুখে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.