রূপকথার গল্প!!

 রূপকথার গল্প!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফল সবসময়েই অনিশ্চয়তায় ভরা।এ যেন অনেকটা রূপকর টানাপোড়েনের গল্প।তাই স্বাধীনতার ৭৫ বছর বাদেও ভারতের পড়শি দেশ পাকিস্তানের রাজনৈতিক আকাশে কালো মেঘ কাটেনি। অর্থনৈতিক দিক থেকে কার্যত ধ্বংসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা দেশটিতে লাগামহীন জালিয়াতি, কারচুপি, বিক্ষোভ প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো জাতীয় সংসদের নির্বাচন। নির্বাচনের পর তথাকথিত ভোটের ফলাফলও এবার প্রকাশ্যে এসেছে।পাক নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ভোটের ফলাফল অনুযায়ী ২৬৫ আসনের পাক সংসদের নির্বাচনে ইমরান খানের দলের সমর্থিত প্রার্থীরা ১০১টি আসনে জয়ী হয়েছে।জয়ী ১০১জন প্রার্থীর মধ্যে ৯৬ জনকে সমর্থন করেছে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসায়।নওয়াজ শরিফের দল জয়ী হয়েছে ৭৫ টি আসনে।আর বিলাওয়াল ভুট্টোর দখলে গেছে ৫৪টি আসন।অর্থাৎ পাকিস্তানে সরকার গঠন করতে ১৩৪ টি আসন দরকার।সেই ম্যাজিক ফিগারের ধারে কাছে কেউই পৌঁছতে পারেনি।পাকিস্তানে কোন সরকার ৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।এর পেছনে কারণটা হচ্ছে সেনা।পাকিস্তানের রাজনীতির আসল শক্তির আধার হলো সেনাবাহিনী। একটা কথা পাকিস্তান সেনা সম্পর্কে বিভিন্ন মহলে বেশ চালু আছে যে,তারা যেমন কখনও কোনও যুদ্ধে জেতেনি, তেমনই হারেনি কোনদিন নির্বাচনে।অর্থাৎ পাকিস্তানের নির্বাচন পুরোটাই পরিচালিত ও নির্ধারিত হয় পাক সেনাদের অঙ্গুলি হেলনে।পাকিস্তানের ক্ষমতায় কার রাজ চলবে তা পেছন থেকে ঠিক করে দেয় উর্দিধারী সেনারাই,কিন্তু এবারই প্রথম সেনাদের এই অঙ্ক মেলেনি।সেনারা মনেপ্রাণে চেয়েছিল তিনবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দলই যেন ভোটে জয়ী হয়ে আসে।কিন্তু পেছনে-সামনে বহু কলকাঠি নাড়ার পরও সেনাদের এই অভিলাষ পূরণ হয়নি।বরং সেনাদের এই ইচ্ছায় জল ঢেলে দিয়েছেন পাক ভোটাররা।প্রাক্ নির্বাচনি অনুমান ও বিভিন্ন ধারণা থেকে আভাস মিলেছে জেলবন্দি ইমরান খানের পার্টিই তুলনামূলক ভাল ফল করবে।বাস্তবেও অনেকটা হয়েছে তাই।ইমরানের তেহেরিক ই ইনসাফ পার্টির মনোনীত নির্দলরা এই অবধি শুধু সর্বোচ্চ আসনই পায়নি, পাশাপাশি নওয়াজ ও ভুট্টোর দলকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে।আসলে পাক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এই ফল কার্যত পাক সেনাবাহিনীর পরাজয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ওয়াকিবহাল মহল।ভোটের ফল থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, পাক ভোটারদের বড় অংশ ইমরানকেই ফের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চেয়েছেন। দেশের তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে ইমরান যে সুদিনের প্রত্যাশা জাগিয়েছেন তা নাপসন্দ পাক সেনার।এই প্রেক্ষিতে ইমরানের পার্টিকে ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে রাখতে এবার প্রকাশ্যে মাঠে নেমে পড়েছে পাকিস্তানের উর্দিধারীরা।কথায় আছে, পাক সেনাদের কারণে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। আর সেই মতোই পাক সেনার চাপের মুখে এখন বিলাওয়াল আর নওয়াজের দল জোট বেঁধে সরকার গড়ুক এমনটাই চাইছেন পাক মেজর জেনারেল মুনীর।তবে নওয়াজ ও বিলাওয়ালের মধ্যে জোট গড়ার প্রয়াস শেষপর্যন্ত ভেস্তে গেলে শেষ অবধি পাকিস্তানের ভাগ্যে কী আবারও সেনা শাসনের অভিশপ্ত ইতিহাস তাড়া করবে।সেই প্রশ্নই এখন তাড়া করছে সর্বত্র।মনে রাখতে হবে, পাক সেনার যাদের মাথায় হাত রাখে সে দলই ক্ষমতায় বসে।ব্যালটর ফল যাই হোক পাকিস্তানে শেষ কথা বলবে সেনারাই।তাই পাকিস্তানের ততে যে সরকারই ক্ষমতায় বসুক, তাতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে বেশিদূর না ভাবাই ভালো। ২০২২ সালে ইমরান যখন ইসলামাবাদের মাথায় বসে আছেন তখন থেকেই দেশে অরাজকতা চরম আকার নেই।২০১৮তে সেনার সাহায্যে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসলেও ইমরান চার বছরের মাথায় ক্ষমতা হারানোর সময় সরকারের পতনের জন্য জেনারেলদের ষড়যন্ত্র ছিল বলে দাবি করেছেন।এই প্রেক্ষিতে সেনারা আর ইমরানের দলকে ক্ষমতায় বসতে দেবে না সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। গোটা পরিস্থিতির দিকে তাই নয়াদিল্লীর শ্যেন দৃষ্টি।কিন্তু শেষ অব্দি সেনাবাহিনীর প্রত্যাশামতো কেউই জোট সরকার না গড়তে পারলে পাকিস্তান কি পুনরায় সেনার দখলে যাবে- সেটাই বিভিন্ন
মহলে জোর জল্পনা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.