দ্বেষ বনাম অন্নদাতা!!

 দ্বেষ বনাম অন্নদাতা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-তিন বছর বিরতির পরে অয়দাতারা আবার পথে নেমেছেন।২০২১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লীর তিন সীমানা সিংঘ, গাজিপুর ও টিকরি সীমান্তে অগণিত কৃষকের এক বছরব্যাপী দুর্নিবার আন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রীকে তিন বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যহারের কথা ঘোষণা করতে হয়েছিল। অন্নদাতাদের সেই সম্মিলিত আন্দোলনে ‘নতুন ভারতের’ বিজ্ঞাপনী মোড়ক ছিল না। সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। জাতপাতের বিভাজন ছিল না।ছিল সব বিভাজনের উর্ধ্বে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে জীবিকার তাগিদে ডাল-রুটির জন্য লড়াই।আন্দোলনে এর পরবর্তী বছরে ছিল উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন।কৃষক আন্দোলন চলার সময় একটি অন্তর্বর্তী সমীক্ষায় উঠে এসেছিল, কৃষক-মন সরকার-বিরূপ হয়ে পড়েছে।তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের সময় কেন্দ্রীয় সরকার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল,ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি- আইনি গ্যারান্টির দাবি খতিয়ে দেখা হবে।কিন্তু দুই বছরেও কেন্দ্র কথা রাখেনি দাবি নিয়ে কৃষক সংগঠনগুলি ফের ‘দিল্লী চলো’র ডাক দিয়েছে।২০১৩
সালে মুজফ্ফরনগরে সাম্প্রদায়িক হিংসায় পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ বলয় বলে চিহ্নিত বৃহত্তর অঞ্চলে হিন্দু-মুসলমান আড়াআড়ি বিভক্ত হয়ে যায়।কিন্তু কৃষক আন্দোলনে দেখা গেছিল জাঠ ও মুসলিমরা ফের এককাট্টা।সেই আবহে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জাঠদের রাষ্ট্রীয় লোক দল হাত মেলায়।তবু বাইশের উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে ভোটবাক্সে কৃষক আন্দোলনের তেমন রেখাপাত করেনি।ফের ক্ষমতায় আসে যোগী আদিত্যনাথের সরকার।এখন,আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মুখে ফের কৃষকদের আন্দোলন করোনা-পরবর্তী সেই আন্দোলনের স্মৃতিকে জাগরুক করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৬-য় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন,২০২২এর ১৫ আগষ্টের মধ্যে তিনি চাষিদের আয় দ্বিগুণ করে দেবেন।সেই প্রতিশ্রুতি যে পূরণ হয়নি, ঘটনাক্রমেই তারই ইঙ্গিত।কৃষক আমাদের অন্নদাতা।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অহিংস পথে আন্দোলনের পূর্ণ অধিকার তাদের রয়েছে। যেকোনও আন্দোলনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের লাভ-লোক লোকসানের পাটিগণিত জড়িত থাকে। কোনও সমাজ বা গোষ্ঠী তাদের জন্য হিতকর কোনও বিষয়ে কখনও আন্দোলনে নামে না।বাইরে থেকে কেউ ‘চাপ’ দিলেও,এতে অহিত সাধনের আশঙ্কা স্কুলের ছাত্রটিও ক্ষমতার বিরুদ্ধাচরণ করে নিজের নাক কর্তন করতে চায় না।কেন্দ্রে মোদি সরকার এখন যুগপৎ অসীম ক্ষমতাধর এবং জনপ্রিয়। তিন মাসের মধ্যে দেশের লোকসভা নির্বাচন।মোদি সরকারই ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে বলে দেশজুড়ে প্রচলিত ধারণা তৈরি হয়েছে।অতএব বিরোধীদের ইন্ধনে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের কৃষকেরা ফের আন্দোলনে নেমেছেন,এমন দাবি ধোপে টেকে না।আগের আন্দোলনে অন্নদাতাদের দাবি ছিল,তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার।এবার দাবির বর্শামুখ, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে সরকারকে লিখিত গ্যারান্টি দিতে হবে।কাশ্মীর বা মণিপুরের মতো উপদ্রুত এলাকা নয়, আন্দোলনে ধাত্রীভূমি হরিয়ানা।আন্দোলনকারীরা কেউ সন্ত্রাসবাদী নয়,কৃষক সংগঠনের সদস্য।কৃষক তুষ্ট না থাকলে এ দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়বে।তবু তাদের আন্দোলন প্রতিহত করতে পাঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু সীমান্ত থেকে দুইশো কিলোমিটার দূরবর্তী দিল্লী-হরিয়ানার সিংঘু সীমানায় সশস্ত্র পুলিশ ও আধাসেনার বিশাল বাহিনী দিয়ে যেভাবে কংক্রিটের ব্যারিকেড করা হয়েছে, পেরেক-গজাল পুঁতে অবরুদ্ধ করা হয়েছে, চিন বা পাক সীমান্তের মতো কাঁটাতার বিছানো হয়েছে,হরিয়ানার দুটি স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী জেলখানায় পরিণত করা হয়েছে,কৃষকদের রবার বুলেটে বিদ্ধ করা হয়েছে, অভিনব পন্থায় আকাশ থেকে ড্রোনের সাহায্যে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফেলে এলাকায় ধোঁয়ায় ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে,লাঠিচার্জ করা হয়েছে।তা নজিরবিহীন।সদ্য মরণোত্তর ভারতরত্নে সম্মানিত,’সবুজ বিপ্লব’-এর জনক এমএস স্বামীনাথনের কন্যা মধুরা স্বামীনাথন পর্যন্ত নৈতিকভাবে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।এক্ষণে জরুরি প্রশ্নটি হলো,কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পান না কেন?শুধুই অত্যাবশ্যক পণ্য আইনের কারণে? শুধুই এপিএমসি লাইসেন্সি ব্যতীত কাউকে পণ্য বিক্রি করা চলবে না,এই ফরমানে?তিন প্রশ্নের একটাই উত্তর, না।কৃষকের মূল সমস্যা,ফসল উৎপাদনের পর সংরক্ষণে অপারগতা। কোনও সরকার এ বিষয়ে অন্নদাতাদের সহমর্মী -না হয়ে, উল্টে তাদের আন্দোলনের প্রতিরোধে মরিয়া হয়ে উঠলে তা কিন্তু বিদ্বেষেরই নামান্তর।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.