বাড়ছে জলকষ্ট!!

 বাড়ছে জলকষ্ট!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতে জলসঙ্কট। দিন দিন মাথাচাড়া দিচ্ছে।যদি ও এই সংকট আজকের নয়।দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় আগে থেকে পানীয় জলের সমস্যা শুধু ভারতেই নয়,গোট পৃথিবীর সামনে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে-তা নিয়ে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।কিন্তু এই নিয়ে সচেতনতা,প্রচার এবং কিছু কিছু পদক্ষেপ সত্ত্বেও পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হয়নি।বরং জলসঙ্কটজনিত সমস্যায় ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলেছে মানবসভ্যতা। একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এখনই পানীয় জল পান না। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সংখ্যাটা আরো ভয়াবহ আকার নেবে। রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্টে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতেই সবচেয়ে বেশি পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেবে। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ভারতে বিশুদ্ধ জলের ব্যাপক পরিমাণে অপচয় হচ্ছে। শুধু একা ভারত নয়, গোটা এশিয়া মহাদেশ জুড়েই এই সমস্যা তীব্র হতে চলেছে। রাষ্ট্রসংঘের পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, গোটা পৃথিবীর মানুষ যে পরিমাণ পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগেন, তার মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষই হচ্ছেন এশিয়ায় বসবাসকারী। মূলত ভারত, পাকিস্তান এবং চিনের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিশুদ্ধ পানীয় জলের সমস্যার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেন। কেন পানীয় জলের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির। এর ব্যাখ্যা ও কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি জল ব্যবহার করা হয় ভারত, চিন, পাকিস্তান সহ এশিয়ার একাধিক দেশে। শুধু জল ব্যবহারই নয়, এই দেশগুলোর মানুষ প্রচুর পরিমাণে জলের অপচয়ও করে থাকেন। যে কারণে ধীরে ধীরে পানীয় জলের ভাণ্ডার শেষ হয়ে যাচ্ছে।২০৫০ সালের মধ্যে পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে বিশ্বের যে দেশ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে, সেই দেশের নাম ভারত।তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এখনো হয়তো সময় আছে নিজেদের শুধরে নেওয়ার।যদি এখনই জলের অপচয় বন্ধ না করা হয়, তাহলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারতের নিরিখে ১৯৪৭ সাল থেকে মাথাপিছু একজন মানুষের যে পরিমাণ জলের প্রয়োজন পড়ে,তার পরিমাণ প্রায় ৭৫ শতাংশ এখন হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ মানুষের ব্যবহার্য জলের পরিমাণ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে।সমস্যাটা হল, ভারতে নদী এবং হ্রদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। ভূগর্ভস্থ জলের মোট পরিমাণের ৮৭ শতাংশ সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়।আর এর ফলেই ভূগর্ভস্থ জল দিন দিন যে হারে নেমে যাচ্ছে।সেই সমপরিমাণ জল আর ভূগর্ভে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে সঞ্চিত জলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে।অথচ
ভারতে সেচের জন্য ৬৭ শতাংশ ভূগর্ভস্থ জলের প্রয়োজন, কিন্তু জল উত্তোলন করা হচ্ছে ৮৭ শতাংশ।ফলে প্রচুর পরিমাণে জল বিনা কাজে অপচয় হচ্ছে।তাছাড়া বৃষ্টির ধরন বদলানোর কারণেও ভূগর্ভস্থ জলে টান পড়ছে।ফলে জলের এই লাগামহীন অপচয় ভবিষ্যতে জল সঙ্কট আরও তীব্র করে তুলবে।যার পরিমান ভোগ করতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে।রাষ্ট্রসংঘ বলছে, ২০১৬ সালে বিশ্বের ৯.৩৩ কোটি জনসংখ্যা জলসংকটের সম্মুখীন হয়েছে।তার পর থেকে দ্রুত গতিতে এই সংকট বেড়েছে। রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের ২৬ শতাংশ মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল নেই।তবুও জলের অপচয় এতটুকুও কমছে না। বরং প্রতি বছর জলের ব্যবহার বাড়ছে ১ শতাংশ। ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে বন্যার হার বেড়েছে আড়াই গুণ।বেড়েছে খরার পরিমাণ। মূলত জলবায়ুর অস্বাভাবিক আচরণ ও পরিবর্তনজনিত কারণে এই সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে।এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপরিশ্রুত জলের মাধ্যমে জলের উৎসগুলোতে জলদূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়া। সব মিলিয়ে জীবনের সঙ্কট মেটায় যে জল, তা ক্রমশই আমাদের মানুষের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনছে।২০২৪ সালের মধ্যে ‘জল জীবন মিশন’ ভারতে সব বাড়িতে বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার কথা বললেও এই লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ শতাংশ পূরণ করা হয়েছে বলে সরকারীভাবে দাবি করা হচ্ছে।কিন্তু যতটুকু পৌঁছেছে সেক্ষেত্রেও সব বাড়িতে নিয়মিত যতটা পরিমাণ জলের প্রয়োজন তা আদৌ পৌঁছেছে কিনা সেটা নিশ্চিত করা না গেলে সংকট সেই তিমিরেই থেকে যাবে।তাই জল সংকট মেটানোর পাশাপাশি পানীয় জল বাঁচাতে উদ্যোগ না নিলে সমস্যা গভীরতর হবে।এই অসুখ থেকে নিস্তারের পথ খুঁজতে হবে সবাইকে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.