জট কাটছে!!

 জট কাটছে!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- ভারতীয়জনতা পার্টিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ২৮টি মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স সংক্ষেপে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠন করেছিল। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা লড়াইয়ে নামার আগে নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে অঙ্গীকার করেছিল ইন্ডিয়া জোটের সদস্য দলগুলো। কিন্তু বৈঠক শেষ হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই নির্ব জোটের মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে বেশ কিছু শঙ্কা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে আচমকা সবাইকে অবাক করে দিয়েই ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক জান নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) জোট ছেড়ে বেরিয়ে বিজেপির এনডিএ জোটে নাম লেখায়। তারপর একে একে ইন্ডিয়া জোটের জন্য অনেকগুলো অস্বস্তিকর ঘটনা ও দুঃসংবাদ ঘটে যেতে থাকে। ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে যৌথ ঘোষণাপত্রে অঙ্গীকার করা হয়েছিল আগামী এপ্রিল- মে মাসে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে যতটা সম্ভব আসন ভাগাভাগি করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালানো হবে। কিন্তু এই আসন ভাগাভাগি বা আসন সমঝোতার বিষয়টি মুখে বলা যতটা সহজ, কাজে রূপায়িত করা ঠিক ততটাই কঠিন বিষয় ছিল। ২০১৯ সালে লোকসভার সর্বশেষ নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে বিজেপি একাই ৩০৩ আসনে জয় পেয়েছিল। এই অবস্থায় বিরোধীদের মধ্যে আসন সমঝোতার বিষয়টি যে অত্যন্ত জটিল ও দুরহ কাজ সেটা জোটের নেতৃত্বও জানতেন। তবে প্রাথমিক অবস্থায় তাদের লক্ষ্য ছিল বিরোধীরা যেন অন্তত: ৪০০ টির মতো আসনে বিজেপির বিরুদ্ধে একজন প্রার্থী দাড় করাতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা। কারণ বিরোধীদের দাবি ছিল, ইন্ডিয়া জোট যেহেতু দেশের ৬০ শতাংশ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে, সেক্ষেত্রে মোটামুটি ৪০০ টি আসনে সম্মিলিত বিরোধীদলের ১ জন প্রতি আসনে প্রার্থী থাকলে লোকসভার নির্বাচনের লড়াই অন্যরকম হতে বাধ্য।অবশেষে দীর্ঘ টানাপোড়েন ও দরকষাকষির পর একটু একটু করে ইন্ডিয় জোটের অবয়ব বা কাঠামো প্রকাশ্যে চেহারা নিতে শুরু করেছে। গত বুধবার উত্তরপ্রদেশে ইন্ডিয়া জোটের আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়। সমাজবাদী নেত অখিলেশ যাদব একটা সময় পর্যন্ত কংগ্রেসকে মাত্র ১১ টি লোকসভা আসন ছাড়তে রাজী ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দরকষাকষি ১৭ টি আসনে এসে শেষ হয়। কংগ্রেসও ২২ টি আসনের দাবি থেকে পিছিয়ে আসে। উত্তরপ্রদেশের ৮০ আসনে বিজেপির মোকাবেলায় এসপি কংগ্রেস কাছাকাছি আসতে পেরেছে আরএলডি জোট ছেড়ে এনডিএতে যুক্ত হওয়ায়। দুই দলই বুঝেছে এর ফলে তাদের লড়াইটা খানিকটা হলেও কঠিন হয়েছে। তারপরই প্রিয়াঙ্ক গান্ধীর ফোনে বরফ গলে। অখিলেশের সঙ্গে সমঝোতার পর আপ-কংগ্রেন সমঝোতা গতি পায়। এ ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসাবে কাজ করছে ২টি ঘটনা আবগারি মামলায় আপ পার্টিকে নাজেহাল করে চলেছে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থ ইডি-সিবিআই। দিল্লী সরকারের ২ মন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে জেলেবন্দি। মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে একের পর এক ইডি সমন করে চলেছে। এই হয়রাণির- বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে দৃঢ়ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস। আপনেতৃত্ব বুঝলে পারছে, এই লড়াই একা লড়া ভীষণ কঠিন। তার উপর সম্প্রতি চণ্ডীগডে মেয়র পদে আপ-কংগ্রেস জোট জয়ী হওয়ার পরও বাঁকা পথে বিজেপি যেভাবে ক্ষমতা দখল করেছে যা পরবর্তী সময়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে কড়া অবস্থানের প্রেক্ষিতে মেয়র পদটি আপের পক্ষে ছিনিয়ে আনা সম্ভ হয়। এই একের পর এক ঘটনাক্রমে আসলে দেরিতে হলেও কঠিন পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলো উপলব্ধি করেছে ২০২৪ সকলের জন্যই লিটমাস টেস্ট। আর তারই ফল ৫ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে আপ-কং জোট শনিবার আসন-সমঝোতা অনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিল। এই সমঝোতা অনুযায়ী দিল্লী, হরিয়ানা, গুজরাট চন্ডীগড় এবং গোয়ায় ইন্ডিয়া জোটের আসন বণ্টন সম্পন্ন। লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে দেশের রাজনৈতিক পারদ দিন দিন ততই চড়বে। ইন্ডিয়া জোটের সামনে এবার লক্ষ্য মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গে জোটের একট চেহারা দেওয়া। যদিও এই লড়াইয়ে বিজেপিও যে বসে নেই সেটা পরিষ্কার। বিরোধীরা যেমন উপলব্ধি করছে যে, বিজেপির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিততে শুধু অঙ্গীকারই যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে চাই ঐক্যের ফলিত প্রয়োগ। ঠিক একইভাবে বিরোধী শক্তিকে ছত্রখান করতে নীতীশ কুমার, জয়ন্ত চৌধুরীদেরকে জোট ভাঙিয়ে নিয়ে আসা কিংবা বিরোধীদের উপর আইনি জটিলতা ও কেন্দ্রী তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে হরয়ানী করার স্ট্র্যাটেজি সমানেই জারি রেখেে শাসক বিজেপি। এই অবস্থায় বিজেপি বনাম ইন্ডিয়া জোটের লড়াই আসে স্নায়ুযুদ্ধের পাশাপাশি এখন ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’ মেঘনাবধ কাব্যের এই কথাটিও সমানভাবে আজ ক্রিয়াশীল। শত্রু নিধনে তাই নীতিহীনতা অ অপকৌশল সবই এখন প্রকাশ্যে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.