রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
নয়া অর্থবর্ষে ২৭,৮০৪ কোটির ঘাটতি বাজেট পেশ অর্থমন্ত্রীর!!
অনলাইন প্রতিনিধি:-শুক্রবার বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ২৭,৮০৪.৬৭ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দের দাবি পেশ করলেন।আগামী অর্থ বছরের জন্য পেশ করা বাজেটে ঘাটতি দেখানো হয়েছে ৪১০.৬৯ কোটি টাকা। এর আগে অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য আরও ১৬৩২.৬২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের দাবিতে পেশ করেছেন।২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২৭,৬৫৪.৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছিল। তাতে ঘাটতি দেখানো হয়েছিল ৬১১.৩ কোটি টাকা। ২০২৪- ২৫ অর্থ বছরের বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।প্রতি বছরই বাজেটে কিছু নতুন প্রস্তাব থাকে।নয়া বাজেটেও কিছু প্রস্তাব রয়েছে।প্রস্তাবিত বাজেটকে ভবিষ্যৎমুখী এবং বিকাশমুখী সমাজের প্রতিটি অংশের মানুষ নারী,ছাত্র, যুবা, রূপান্তরকারী, জনজাতি, তপশিলি জাতি, ওবিসি, সংখ্যালঘু, কর্মচারী, পেনশন ভোগী নির্বিশেষে সামগ্রিক জনগণের জন্য এই বাজেট বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন,রাজ্যের অর্থনীতি ভালোভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থ বর্ষে রাজ্যের
জিএসডিপি’র বৃদ্ধি জাতীয় স্তরে ৭.২০ শতাংশের তুলনায় প্রায় ৪.৪৯ শতাংশ ছিল। চলতি বছরে (২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে) রাজ্যের অর্থনীতি প্রায় ৮.৩৭ শতাংশ (জাতীয় পর্যায়ে ৭.৩ শতাংশ বৃদ্ধির বিপরীতে)বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হয়েছে।২০২৩- ২৫ অর্থবর্ষে জিএসডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.৪৭ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।প্রস্তাবিত বাজেটে রাজ্যের নিজস্ব কর ৩,৪৪৮ কোটি টাকা আদায় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজ্যের নিজস্ব নন-ট্যাক্স রাজস্ব আনুমানিক ৪৭৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। মূলধনী ব্যয় ৬,৬৩৩.৮০কোটি টাকা অনুমান করা হয়েছে। যা ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের সংশোধিত মূল্যের তুলনায় ২৪.২৬ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট সেক্টরে ১,৭২১.৯৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।যা আগের বাজেট বরাদ্দ থেকে ১৯.৮৮ শতাংশ বেশি।শিক্ষা খাতে ২০২৩-২৪ অর্থ বর্ষের বাজেট বরাদ্দ থেকে ১১.৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।শিক্ষা খাতে ৫,৫০৮.৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে এই বছর ১,৭২৬.২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।উত্তর ত্রিপুরার যুবরাজনগরে এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার পুরাতন আগরতলায় ২ টি নতুন কৃষি মহকুমা খোলার প্রস্তাব করা হয়েছে।এছাড়াও অরুন্ধতীনগর রাজ্য কৃষি গবেষণাকেন্দ্রে মোট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে১টি ‘শাকসবজির অবশিষ্টাংশ পরীক্ষাগার’ এবং ১ টি ‘জার্ম প্লাজম সংরক্ষণ’কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৮ টি নতুন কৃষি উন্নয়ন গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে,মোট ২৩ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে।তৈদুতে ইন্দো-ডাচ
প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১ টি লেবুজাতীয় ফলে ‘এক্সিলেন্স
সেন্টার’ এবং লেম্বুছড়াতে ইন্দো-ইজরায়েল অ্যাকশন পরিকল্পনার আওতায় ১০
কোটি টাকা ব্যয়ে ১টি ফুলের এক্সিলেন্স সেন্টার গড়ে তুলে রাজ্যের ফল,শাকসবজি ও ফুলের বৈজ্ঞানিক চাষ এবং সর্বোত্তম মানের রোপণ সামগ্রী সরবরাহের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে।মোট ১৭ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪টি মৎস্যচাষ জ্ঞান কেন্দ্র এবং ১ টি রাজ্য মৎস্য সচেতনতা কেন্দ্র স্থাপন করা
হয়েছে।আরআইডিএফ এর প্রদত্ত ঋণে ২১টি মাধ্যমিকস্তরের বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ১২৩ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।বেসরকারী
উদ্যোগে উদয়পুরে মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।পিএম-ডেভাইনের আওতায় মোট ১৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে আগরতলা এজিএমসি এবং জিবিপি হাসপাতাল পরিসরে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট মাল্টিকেয়ার স্বাস্থ্য ইউনিট নির্মাণ করা হবে।তপশিলি জাতির ৪০০ জন শিক্ষার্থীকে ১লক্ষ টাকা করে এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।এর জন্য ব্যয় হবে ৪ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ সালে ‘প্রধানমন্ত্রী জনবিকাশ কার্যক্রমের’ আওতায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত
বিভিন্ন গ্রামে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।ভারত সরকারের মিশন শক্তির আওতায় মহিলাদের জন্য মাতাবাড়ি ও তেলিয়ামুড়ায় ২ টি ‘শক্তি সদন’ স্থাপন করা হবে ১০ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে।যেসব জনবসতি গুলিতে আদিম ও প্রান্তিক জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন সেখানে ৭৭ টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র (এডব্লিউসি) ৯ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে।মোট ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন জনজাতি
অধ্যুষিত এলাকার রাবার শিট প্রক্রিয়াকরণের জন্য ৫০ টি স্মোক হাউস নির্মাণ করা হবে।৭৬ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জনজাতি ছাত্রীদের জন্য ১১টি এবং জনজাতি ছাত্রদের জন্য ১০টি ৫০ আসন বিশিষ্ট হোস্টেল নির্মাণ করা হবে।তীর্থমুখে মেলা প্রাঙ্গণে ১৫ কোটি ১১লক্ষ টাকা ব্যয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।রাজ্য সরকার সর্বমোট ৬৯৮ কোটি ৬৮লক্ষ টাকা টিটিএএডিসি-কে সরাসরি প্রদান করবে।এই পরিমাণ তহবিল টিটিএএডিসি এলাকার গ্রাম পরিষদগুলির জন্য ৫ম রাজ্য অর্থকমিশনের অধীনে করের অংশ থেকে হস্তান্তরিত তহবিলের অতিরিক্ত। এছাড়াও রাজ্য সরকার জনজাতি ভাই বোনদের কল্যাণে মোট উন্নয়ন বরাদ্দের ৩৯.৯৩ শতাংশ ধার্য করেছে। ২০২৪-২৫ সালে রাজ্য সরকার ৭ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সমস্ত বিডিওদের নতুন গাড়ি সরবরাহ করবে। বর্তমানে যেখানে আবাসন নেই সেইসব জায়গায় সমস্ত
বিডিও,অ্যাডিশনাল বিডিও এডিএমদের জন্য আবাসন নির্মাণ করা হবে।একটি ভূমি ব্যাঙ্ক চালু করা হবে,যার অধীনে অব্যবহৃত সরকারী জমির উন্নীতকরণ হবে।তারপর সেই উন্নীত জমি বিভিন্ন উদ্দেশে লিজ দেওয়া হবে।প্রয়োজনে সরকারী জমির আশেপাশে থাকা বেসরকারী জোত জমিও ক্রয় করা হবে এবং সেই জমি সরকারী জমির মতো করেই উন্নীতিকরণ করা হবে।এই যোজনা বাস্তবায়নের জন্য ১০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে ৩০ কিলোমিটার রাস্তার পুনর্বিন্যাসের জন্য ৬০ টি বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে সড়ক পরিকাঠামোগত কাজের জন্য পরবর্তী ৪ বছরের সময়কালে ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। নারী ও শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর পাবলিক টলেট তৈরি করতে বিভিন্ন শহরে ৮৫ টি ‘পিঙ্ক টয়লেট’ নির্মাণ করা হবে, মোট ৭ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে।এমন আরও বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য পেশ করা বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বাজেট ভবিষ্যৎ এর দিশারি।এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ার বাজেট বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা।এর জন্য তিনি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এর আগে প্রায় প্রতিটি বাজেটে এমন বহু প্রস্তাব করা হয়েছিল। তার মধ্যে অনেক প্রস্তাবই আজ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।