বেকারত্ব!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-বিরোধীরা অভিযোগ করেন,কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব। তবে পরিসংখ্যানের বিচারে বিরোধীদের সে দাবি টিকছে না।বরং ভোটের মুখে বেকারত্বের পরিসংখ্যানে স্বস্তি বাড়লো কেন্দ্রের মোদি সরকারের।কারণ বিরোধী শিবির,বিশেষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মোদি সরকারের বিরুদ্ধে যে কয়টি অস্ত্রকে সামনে রেখেছেন তার অন্যতম বেকারত্ব।মঙ্গলবার পরিসংখ্যান মন্ত্রক তথ্য পেশ করে দাবি করেছে,ভারতে বেকারত্ব বাড়েনি,উল্টে গত বছরে বেকারত্বের হার নেমে দাঁড়িয়েছে ৩.১ শতাংশে।যা গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের আওতায় ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন কাজের বাজারের হাল বুঝতে ‘পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স'(পিএলএফএস) সমীক্ষা চালায়।মঙ্গলবার প্রকাশিত সমীক্ষা অনুযায়ী,২০২৩-এ ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সিদের মধ্যে বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে ৩.১ শতাংশ।২০২২ সালে যা ছিল ৩.৬ শতাংশ এবং ২০২১-এ (অর্থাৎ অতিমারি পর্বে)ছিল ৪.২ শতাংশ।মহিলাদের মধ্যে বেকারত্ব কমে হয়েছে ৩ শতাংশ,পুরুষদের কমে হয়েছে ৩.২ শতাংশ। শহরাঞ্চলে বেকারত্ব কমেছে ৫.২ শতাংশ, গ্রামাঞ্চলেও কমেছে ২.৪ শতাংশ।এই সরকারী সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে যেমন কোভিডের লকডাউন কাটার পর থেকে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।সব স্তরেই দেশে বেকারত্ব কমেছে।প্রসঙ্গত, দুই মাস আগে এই পিএলএফএস-এর তথ্য আমাদের জানিয়েছিল,
২০২২ সালের জুলাই থেকে গত বছর জুন পর্যন্ত স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩.৪ শতাংশ।যা তার আগের বছরের ওই সময়ের ১৪.৯ শতাংশ থেকে কিছুটা কম।অর্থনীতিবিদদের একাংশ তখনই বলেছিলেন,এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ কারণ বেকারত্ব দশ শতাংশ অতিক্রম করলে সেটি উদ্বেগের।এর পাশাপাশি পরিসংখ্যান মন্ত্রকের প্রকাশিত অন্য একটি (২০২২-২৩ সালের পারিবারিক কেনাকাটার খরচ সমীক্ষা)তথ্যে জানা গেলো, দেশের গ্রামাঞ্চলে গড়ে মাথাপিছু মাসিক খরচের পরিমাণ মাত্র ৩,৭৭৩ টাকা। শহরাঞ্চলে তা ৬,৪৫৯ টাকা। অর্থশাস্ত্র বলে,আয়ের ভিত্তিতে নয়, মাথাপিছু খরচের ভিত্তিতেই দেশবাসীর আর্থিক
অবস্থার পরিমাপ করা যায়।
জিডিপির (দেশের মোট আয়) আয়তনের নিরিখে ভারতের অর্থনীতি এই মুহূর্তে বিশ্বের চতুর্থ।অথচ আমাদের মাথাপিছু খরচের পরিমাণ গ্রাম-শহর মেলালে গড়ে যেখানে ৫,১১৬ টাকা,সেখানে ব্রিটেনের অবস্থান আমাদের অনেক পেছনে হলেও সে দেশে মাথাপিছু খরচের পরিমাণ ১৪,৩৬৫ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১১ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা)।বস্তুত, আর্থিক অসাম্য এ দেশের মৌলিক সমস্যা।অসাম্যের চশমায় অর্থনীতি অথবা বেকারত্বকে না দেখলে সে দেখা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। জিডিপির বৃদ্ধির হার অর্থনৈতিক উন্নয়নের অবশ্যই অন্যতম একটি স্তর,কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, সেই আর্থিক বৃদ্ধি কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবনের মান্নোন্নয়নে কাজে আসছে।আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষেরই রোজগারের প্রায় পুরোটা আসে শ্রম থেকে, পুঁজি বা জমির মালিকানা থেকে নয়। যেমন পারিবারিক কৃষিকাজে বিনা বেতনে কাজ করা অথবা পারিবারিক দোকানে বসা। দেখা দরকার,শ্রমের বাজারে কী ঘটছে।নতুন কাজ কতটা তৈরি হচ্ছে।আগের চেয়ে ভালো কাজ তৈরি হচ্ছে কি না।মজুরির হার বাড়ছে কি না।অর্থ ব্যবস্থার যদি এতই স্ফীতি, তদনুযায়ী যথেষ্ট সংখ্যক ভালো চাকরি তৈরি হচ্ছে কি না।বার্ষিক পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে বা পিএলএফএস -এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে,সত্যিই উন্নতি ঘটছে।বেকারত্ব শব্দটির অর্থ ব্যাপক। মোট যত মানুষ শ্রমের বাজারে যোগ দিয়েছেন, অর্থাৎ কাজ খুঁজছেন বা কর্মরত, তাদের যত শতাংশ কাজ খুঁজছেন কিন্তু পাচ্ছেন না, আদতে সেই হারটি হলো বেকারত্বের হরি। নতুন কাজ তৈরি হচ্ছে কি না, তার সঙ্গে এই হারটির সম্পর্ক না-ও থাকতে পারে। অতএব, শুধু বেকারত্বের হার দেখলেই চলবে না, শ্রম বাজারের অবস্থাটি বুঝতে হবে। ২০১৭-১৮ সালে দেশে সার্বিক বেকারত্বের হার ছিল ৬.২ শতাংশ। প্রশ্ন হলো, কেমন কাজ তৈরি হচ্ছে, মজুরির হারের কী অবস্থা, দৈনিক মজুরির হার কতটা বেড়েছে, এই খোঁজগুলি না রাখলে উপরের পরিসংখ্যান ভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। জিডিপির হার বা বেকারত্ব কমার পরিসংখ্যান দিয়ে দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রকৃত চিত্রটিকে তাই ধরা যাবে না।