মথার পরিণতির অপেক্ষায়!!

 মথার পরিণতির অপেক্ষায়!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-অবশেষে ঝোলা থেকে বিড়াল বেরিয়েই গেলো। অনেকদিন ধরেই অএই বিড়াল পুষে রাখা হয়েছিল। এবার সুযোগের অপেক্ষায় থাকা বিড়াল বেরিয়েই গেলো এবং সরাসরি প্রভুর বাড়িতেই ঢুকে গেলো।গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবিদাররা অবশেষে বোতলবন্দি হয়ে মন্ত্রিসভায় ঢুকেই গেলো। ত্রিপাক্ষিক চুক্তির অজুহাত দিয়ে সম্মানজনক পলায়নের একটা পথ দেখিয়ে দেয় কেন্দ্র এবং এতেই গড়গড়ি থেকে তিপ্রা মথা সোজা মন্ত্রিসভায় ঢুকে গেলো।আর এই দৌত্যে একশো শতাংশ সফল কেন্দ্রীয় সরকার ওরফে বিজেপি।বিজেপি পার্টির দরকার ত্রিপুরায় দুটি আসনে জয়।পূর্ব আসনটি ছিল যেহেতু উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত তাই মথার মতিগতি নিয়ে খানিকটা চিন্তার ভাঁজ ছিল বিজেপি নেতৃত্বের।তাই মথাকে বোতলবন্দি করার কৌশল খুঁজছিল বিজেপি। শেষ পর্যন্ত লোকসভা নির্বাচনের আগে একটা গেমপ্ল্যান নেওয়া হয়।যেমনটা নেওয়া হয়েছিল গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও।

এই চিত্রনাট্যের রচয়িতা দিল্লীর বিজেপি নেতৃত্ব।মাঝে রাখা হয় রাজ্য সরকার এবং মথার সুপ্রিমোকে।ত্রিপুরার মুকুটহীন ‘মহারাজা’ প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ ২০১৯ সালে উগ্র উপজাতিভিত্তিক একটি দল ‘তিপ্রা মথা’ গঠন করে।আর একটিই উদ্দেশ্য ছিল,গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড গঠন।প্রথমে উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়। পরবর্তীতে গত বিধানসভা নির্বাচনে তেরোটি আসনে জয়।প্রদ্যোত বিক্রম বারবারই তার প্রজাদের বোঝাতে থাকে যে দল তাকে পৃথক তিপ্রাল্যান্ডের জন্য লিখিত আকারে কিছু বলবে বা এই সমস্যার সাংবিধানিক সমাধানের পথ খোঁজার জন্য তার সাথে লিখিতভাবে কিছু করবে তার সাথে তিনি চলবেন।গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় এই ইস্যুতে তিনি সিপিএম, কংগ্রেসকে তার ল্যাজে নাচিয়েছেন। বিজেপির সাথেও জোট হয়নি। কিন্তু উপজাতি সংরক্ষিত – কুড়িটি আসনের বাইরে আরও বাইশটি আসনে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তিনি মোক্ষম চালটি দিয়েছিলেন। সেই দাবার চাল কংগ্রেস এবং সিপিএম বুঝতে পারেনি বিন্দুমাত্র।পেছন থেকে আড়ালে হেসেছিল রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি দল। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেখা গেলো তিপ্রা মথা সব জায়গাতেই পদ্মের জয়ের রাস্তা সহজ করে দিয়েছিলো। মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়েছিল বিজেপি- মথাকে।রাজ্যে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতাসীন হয়েছিলো বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার।
২০১৮ সালেও আইপিএফটির সাথেও একইভাবে জোট হয়েছিল বিজেপির।সেই জোটের ফলে উপজাতি অঞ্চলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল সিপিএম। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও আইপিএফটি নেতৃত্ব দাবি করেছিল পৃথক তিপ্রাল্যাণ্ড চাই।এরপর কেন্দ্র তাদের সাথে একটি চা লিখিত ঘোষণাপত্রে তাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন সহ উপজাতি এলাকার উপজাতিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়কে দেখভালের জন্য একটি মডালিটি কমিটির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ছয় বছর পর কেউ যদি প্রশ্ন করে এই মডালিটি কমিটির কি হলো?এটা কী খায় না মাথায় দেয়- উত্তর নেই। সবটাই ছিল লোকদেখানো আর টুপি পড়ানো।

একইভাবে ২০২৪ সালের মার্চের ২ তারিখ দিল্লীতে ডেকে নিয়ে গিয়ে কেন্দ্র, রাজ্য এবং তিপ্রা মাথার মধ্যে যে অর্ধেক পাতার একটি লিখিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তাতেও একটি জয়েন্ট কমিটির কথা বলা হয়েছে। মথা একে ‘ঐতিহাসিক জয়’ হিসাবে অভিহিত করেছে। প্রশ্ন উঠেছে আইপিএফটির যে দশা হয়েছে মথার এই দশা হবে না তো?অনেকেই এমন বলতে শুরু করে দিয়েছে মথা অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে। কেন না মন্ত্রিসভায় যোগদান করার পর মথার আর ‘ছড়ি’ ঘোরানোর সুযোগ শেষ হয়ে গেছে।
গত চার বছরের বেশি সময় ধরে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের ফেরি করে বেড়াচ্ছেন প্রদ্যোত বিক্রম। কিন্তু কোনও মতেই কাউকে টলানো যাচ্ছে না। এবার আর কিছু হবার নয় জেনে একটি সম্মানজনক পলায়নের রাস্তা খুঁজলেন মথা সুপ্রিমো। যার অন্তিম পরিণতি হচ্ছে মথার মন্ত্রিসভায় যোগদান।শোনা যাচ্ছে পূর্ব আসনে নাকি বিজেপির প্রতীকে মথার প্রার্থী হচ্ছে রাজপরিবারের সদস্য। ভবিষ্যতে মথার সামনে বিকল্প থাকবে একটিই – মথাকে বিজেপিতে মিশিয়ে দেওয়া। নাহলে মথার অস্তিত্ব অচিরেই বিপন্ন হবে।যদিও সময়ই শেষ কথা বলবে।মথার এই ‘লিখিত’ চুক্তিরও মডালিটি কমিটির মতোই অন্তর্জলি যাত্রা হয় কি না তাই এখন দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.