ভিন্ন মতের অধিকার!
অনলাইন প্রতিনিধি :-সরকারের সমালোচনা করা,আর দেশের সমালোচনা করা যে এক সজিনিস নয়- এই সহজ সত্যটি সরকার বকলমে শাসক বেমালুম তা ভুলে যায়, কিংবা ভুলে যাওয়ার অভিনয় করে। দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্ট এই বাস্তব সত্যটি ক’দিন বাদে বাদেই ঐ সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিলেও সরকার তা মনে রাখতে চায় না।দেশপ্রেমের নামে বিরোধিতাকে দাবিয়ে দেওয়ার এই ব্যামো ইদানীং লে দেশে ক্রমশই মাথাচাড়া দিচ্ছে।আর তাতেই সিঁদুরের মেঘ দেখছেন কে দেশের সমাজবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং গণতান্ত্রিক চেতনা ও ভাবধারায় বিশ্বাসী মানুষেরা।
ঘটনা হলো, কাশ্মীরের একজন অধ্যাপক জাভেদ আহমেদ হাজাম সে তার হোয়াটসঅ্যাপে একটি পোস্ট লিখেছিলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের জন্য ৫ আগষ্ট একটি কালো দিন’।এই পোস্টের কারণে এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।গত বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। ২০১৯ সালের ৫ আগষ্ট জম্মু-কাশ্মীরের – সাংবিধানিকক বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করেছিলো নরেন্দ্র মোদি সরকার।কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃক কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের এই – সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই পোস্ট করেছিলেন অধ্যাপক জাভেদ হাজাম।শীর্ষ আদালত এই মামলার রায় দিতে গিয়ে জানিয়েছে,সরকারের কোন সিদ্ধান্ত সমালোচনা হতেই পারে।এমনকী আদালতের রায়ও – সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়।তাই বলে এই সমালোচনাকে অপরাধ বলা যায় না।এক্ষেত্রে ৩৭০ ধারা বাতিলের সমালোচনা করাও কোন অপরাধ নয়।দুই বিচারপতি অভয় কুমার ওকা এবং উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দিয়েছে।বিচারপতিরা বলেছেন,ভারতের সংবিধান প্রতিটি নাগরিককে বাস্বাধীনতার অধিকার দিয়েছে।সেই অধিকারের ভিত্তিতে যে কোন নাগরিক ৩৭০ ধারা বাতিলের সমালোচনা করতেই পারেন। এমনকী সরকারের যে কোনও সিদ্ধান্তের সমালোচনা করার অধিকার যে কোনও নাগরিকের রয়েছে,যদি সেটা তার পছন্দ না হয়।সর্বোচ্চ আদালত আরও বলেছেন, এই ভাবে কোন ব্যক্তির মত প্রকাশের অধিকারে যদি বাধা দেওয়া হয়,তবে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বলে কিছু থাকবে না।সরকারের সমালোচনা মানেই দেশদ্রোহ- এই ভাবনাটা সরকারের নতুন নয়।তবে সাম্প্রতিক কিছু বছরে সরকারের ভাবনায় চিন্তায় নি মননে এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ক্যান্সারের মতো বাসা বেঁধে বসেছে।মাত্র গত বছরই ৫এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে ডিভিশন বেঞ্চ এমনই আরেকটি মামলায় সরকারের তুমুল সমালোচনা করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে,সরকারের সমালোচনা অ করলেই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার যুক্তি দেখিয়ে কোন সংবাদমাধ্যমকেও বন্ধ করে দেওয়া যায় না।প্রসঙ্গতঃ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কাজকর্মের সমালোচনা করায় জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।এই অভিযোগে কেরালার মালয়ালম ভাষায় সম্প্রচারিত একটি টিভি চ্যানেলকে কেন্দ্রীয় সরকার লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছিল।যে কি কারণে সেই প্রচারমাধ্যমের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্ট তখনও এই মামলার রায় দিতে গিয়ে সরকারকে এটা স্পষ্ট করে বলেছিল, প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের স্বার্থে বাস্বাধীনতা এবং স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের প্রয়োজনীয় দুটো জরুরি।সমালোচনা অবশ্যই গঠনমূলক হবে।তবে সমালোচনা করলেই তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে খাড়া করে কোন ব্যবস্থা করা ঠিক নয়।মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট একথাও বলেছিলেন, মানুষের অধিকার খর্ব করায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জিগির তোলা যায় না।সংবাদ মাধ্যম সব সময় সরকারকে সমর্থন করবে-সরকারের এই মনোভাব যেমন সমর্থনযোগ্য নয়, তেমনি ব্যক্তি সরকারের কোন কাজ পছন্দ না হলে তা নিয়ে সে তার অবস্থান বা মতামত জানাতেই পারে।কিন্তু মনে রাখতে হবে সরকারের বিরোধিতা করার অর্থ দেশের বিরোধিতা বোঝায় না। বিস্ময়কর ঘটনা হলো, সরকারকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কিছুদিন বাদে বাদেই।বাক্স্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে সংবিধানের ১৯- ১ (এ) ধারার পাঠ দিলেও শাসক তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত যে কোন সমালোচনাকে দেশদ্রোহ বলে দাগিয়ে দিয়ে ভিন্নমতের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে।গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থায় যা বাঞ্ছনীয় নয়।