উচ্চতার বাধা টপকে ডাক্তার হলেন তিন ফুটের গণেশ!!

 উচ্চতার বাধা টপকে ডাক্তার হলেন তিন ফুটের গণেশ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সমাজ আধুনিক হয়েছে।কিন্তু সমাজের লোকজনের মানসিকতায় কি আদৌ বদল এসেছে?হা বা না’য়ের এর মতো এককথায় এর উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। হাত-পা না থাকলে কিংবা চোখ না দেখতে পেলে, কানে শুনতে না পেলেই সেই মানুষগুলি কেবল বিশেষভাবে সক্ষমের তালিকায় পড়েন না। বামনত্বও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার আর এক রূপ।ঘটা করে দিব্যাঙ্গ দিবস যে দেশে পালিত হয় সেই দেশেই এক বামনকে তার প্রাপ্য শিক্ষার অধিকারের জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দরজাতেও কড়া নাড়তে হয়।২০১৮ সালে সর্বভারতীয় ডাক্তারি এনট্রান্স পরীক্ষা বা ‘নিট’এ প্রথমবারের চেষ্টায় সফল হয়েছিলেন মাত্র তিন ফুট উচ্চতার গণেশ বারাইয়া। কিন্তু যোগ্য হয়োও নিজের যোগ্যতা প্রমাণে গণেশকে যেতে হয়েছিল আদালতে। কারণ তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল কাউন্সিল আসন বরাদ্দ করতে চায় নি।তখন থেকে লড়াই শুরু। প্রথমে গুজরাত হাইকোর্ট।সেখানে হার।তবুও পিছপা না হয়ে দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় পর্যন্ত লড়াই।সেই লড়াইয়ে জিতে ফিরে আসা। কিন্তু কোর্টে আইন-যুদ্ধের ময়দানে নেমেই কেটে গিয়েছিল দেড় বছর প্রায়। ফলে ২০১৮ সালে নিট পাশ করেও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাননি তিনি। অপেক্ষা আরও একটি বছরের।অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের রায় ছিল গণেশের অনুকূলে। সেজন্য দ্বিতীয় বার আর নিট পরীক্ষায় বসতেই হয় নি তাকে।২০১৯ সালে এমবিবিএস পড়ার জন্য গুজরাটের ভাবনগর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলেন।সেই শুরু ছোটবেলায় দেখা স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার পালা।গণেশের শৈশব কটেছে ভাবনগরের একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।সেখানে প্রতি নিয়ত স্কুলের বন্ধুদের কাছ থেকে টিপ্পনির শব্দ শুনেছেন তিন ফুট উচ্চতার গণেশ। সেদিনই স্কুলের এক শিক্ষিকা তাকে বলেছিলেন, ‘নিজে ডাক্তার হয়ে দেখিয়ে দিও এই সমাজে তোমারও অবদান আছে।গুরুমন্ত্রই যেন উদ্বুদ্ধ করেছিল তাকে।একবারে নিট উত্তীর্ণ হওয়ার পিছনেও যে শৈশবের গুরুমন্ত্র কাজ করেছিল তা অকপটে স্বীকার করেছেন তিনি।কেবল নিট-পাশ নয়, আদালতের লড়াইয়েও শক্তি ছিল সেই মন্ত্র।সেই সময় মেডিক্যাল কাউন্সিলের কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছিলেন; ‘গণেশের উচ্চতা কম।জরুরি ভিত্তিতে রোগীর চিকিৎসা করা,তার পক্ষে অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।’কিন্তু গুজরাত হাইকোর্ট কাউন্সিলের বক্তব্যে মান্যতা দিলেও সুপ্রিম কোর্ট গোটা ঘটনাটিকেই খারিজ করে দিয়ে বলেছিল,’যোগ্যতা অর্জনে যখন গণেশ সফল হয়েছে তখন তাকে সুযোগ দিতেই হবে।’২০১৯ থেকে টানা পাঁচ বছরের লড়াই শেষে গত ফেব্রুয়ারীতে ভাবনগর মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি পেয়েছেন তিনি।ভাবনগরের একটি সরকারি হাসপাতালে ইন্ট্রান করার কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি।শারীরিক প্রতিকূলতার সত্বেও গণেশ বারাইয়া এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করায় খুশি ভাবনগর মেডিক্যাল কলেজের ডিন হেমন্ত মেহতা।তিনি বলেছেন, ‘গণেশের এই ইচ্ছাশক্তি, অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।’
সমাজ যে পুরোপুরি দিব্যাঙ্গদের পাশে থাকতে চায় না এমনটা মানতে রাজি নন তিনি। গণেশ বলেছেন, ‘কলেজের পক্ষ থেকে আমার সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছিল।মেডিক্যালের বন্ধু থেকে শুরু করে শিক্ষকরাও আমার দিকে সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে আমি আমার ছোটবেলার স্বপ্ন স্বার্থক করতে পেরেছি।’
একেবারে অতি সাধারণ ঘরের ছেলে গণেশ।পাঁচ দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তার ছোট ভাই এবার বিএড পরীক্ষা দেবে।আর গণেশের পরবর্তী লক্ষ্য চর্মরোগ নিয়ে এমডি করা।তাই হাসপাতালে রোগী দেখার পাশাপাশি আগামী যে মাসে স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য সর্বভারতীয় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।সারাদিন চাষবাসে ব্যস্ত থাকা গণেশের বাবা রামনারায়ণ বারইয়া কোনওদিনই পছন্দ করেননি তাদের ছেলে আইনের লড়াই লড়বেন।শেষে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জিতেও স্বস্তি পাননি তিনি।তার আশঙ্কা ছিল কাউন্সিল ফের কোনও ছুতোয় ছেলের স্বপ্ন আটকে দিতে পারে।বৃহস্পতিবার যখন স্টেথোস্কোপ গলায় ঝুলিয়ে রোগী দেখতে আউটডোরে গিয়েছিলেন ডাক্তার গণেশ বারাইয়া তখন গর্বে রামবাবুর প্রাণ ভরে উঠেছিল।বললেন, ‘এইদিনটার আশায় বেঁচে ছিলাম আমি।’ রামনারায়ণের মেজোভাইয়ের পাঁচ ছেলেও ডাক্তার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.