সিএএ’ ও রাজনীতি!!

 সিএএ’ ও রাজনীতি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অবশেষে লোকসভা নির্বাচনের মুখে দেশজুড়ে কার্যকর হয়ে গেল আলোচিত সিএএ।অর্থাৎ সিটিজেন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট,বাংলায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। সোমবার রাত থেকেই সারা দেশে এই আইন কার্যকর হয়েছে।তবে শুরুতে বলে রাখা দরকার, সারা দেশে এই আইন কার্যকর হলেও আসাম,ত্রিপুরা,মেঘালয় এবং মিজোরাম দেশের এই চারটি রাজ্যে আংশিকভাবে কার্যকর হবে।কারণ,এই চারটি রাজ্যে সংবিধানের ষষ্ঠ তপশিলভুক্ত এলাকা রয়েছে।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে সোমবার সিএএ নিয়ে যে গ্যাজেট নোটিফিকেশন জারি করা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে আসাম,ত্রিপুরা, মেঘালয়এবং মিজোরাম -এই চারটি রাজ্যে ষষ্ঠ তপশিলভুক্ত এলাকায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর হবে না।এমনকী ‘ইনার লাইন’ কার্যকর রয়েছে, ওইসব এলাকাতেও এই আইন কার্যকর হবে না।ফলে ষষ্ঠ তপশিলভুক্ত এলাকায় বসবাসকারী জনগণের ‘সিএএ’ নিয়ে মাথাব্যথার কোনও কারণ নেই। এটা একপ্রকার স্পষ্ট।গত ক’দিন আগে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে সারা দেশে কার্যকর হবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। তার সেই আভাসই শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়ে গেল। স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।বিরোধীদের মূলত আপত্তি হচ্ছে, একেবারে লোকসভা ভোটের মুখে এই আইন কার্যকর করা নিয়ে।তাছাড়া এই আইন দেশে জাতিগত বৈষম্য আরও বাড়বে বলে বিরোধীদের দাবি।শুধু তাই নয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দেশের বিভিন্ন আদালতে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছিল।বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ভুল ব্যাখ্যা করছে। মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে। এই আইন নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে উসকে দেওয়া হচ্ছে। এই সবই করা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন যে, ‘সিএএ’ দেশের একটি আইন। এই আইনে কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কোনও বিধান নেই।নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে।ফলে এই নিয়ে উদ্বেগ বা সংশয়ের কোনও কারণ নেই।এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ,পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় চায়, তাহলে তাদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত।কিন্তু বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন একটি আইন কার্যকর করা নিয়ে রাজনীতি হবে না, এমন ভাবনাটাই একেবারে ভুল। রাজনীতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। গণতন্ত্রের এটাই তো মহিমা। মতবিরোধ হবে, মত পার্থক্য হবে, যে যার রাজনৈতিক অবস্থান ও লাভালাভের বিষয়টি মাথায় রেখে কথা বলবে। কেউ আপত্তি করবে, কেউ সমর্থন করবে। কিন্তু শেষ কথা বলে জনগণ। তবে একেবারে লোকসভা ভোটের মুখে সিএএ কার্যকর করার পেছনে কেন্দ্রের মোদি সরকারের যে ভোট রাজনীতির অঙ্ক রয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে ভোটের মুখে বিজেপি সিএএ কার্যকর করে ‘মাস্টার স্ট্রোক’ দিয়েছে। এতে বিরোধীদের ভোট বাক্সে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।এই ক্ষেত্রে বাংলায় একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রচলিত প্রবাদ আছে। সেটি হলো ‘ওস্তাদের মার শেষ রাতে’।মোদি এবং বিজেপি ভক্তরা অবশ্য এমনটাই মনে করছেন।কিন্তু রাজনৈতিক মহলের অপর অংশের মতে, ভোটের মুখে ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে তোলপাড় হওয়ার আগেই মোদি সরকারের সিএএ কার্যকরের বিজ্ঞপ্তি জারি করাকে অন্যভাবে দেখছে। তাদের মতে ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরাতেই এমন একটি মোক্ষম চাল দেওয়া হয়েছে। তবে ভোটের মুখে ‘সিএএ’ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে কতটা অক্সিজেন জোগাবে,’ কতাটা ফায়দা হবে? সেটাই এখন দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.