নির্বাচনি বন্ড!!

 নির্বাচনি বন্ড!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সি এএ নিয়ে সারা দেশে মাতামাতির মধ্যে চাপা পড়ে গেল ‘নির্বাচনি বন্ড’ ইস্যু। অথচ লোকসভা ভোটের মুখে এই ‘নির্বাচনী বন্ড’ইস্যুই বিরোধীদের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারতো।কিন্তু সিএএ নিয়ে দেশজুড়ে মাতামাতিতে ফিকে দেখাচ্ছে নির্বাচনি বন্ড ইস্যু।রাজনৈতিক মহলের একটা অংশের মতে,কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কৌশলী চালেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করছে তারা। কোনও রাজনৈতিক দল, কার কাছ থেকে নির্বাচনি বন্ড হিসেবে কত টাকা নিয়েছে?

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই তথ্য জমা পড়লো নির্বাচন কমিশনের কাছে।

স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া সেই তথ্য জমা দিয়েছে।নির্বাচন কমিশন থেকেও জানানো হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের গত ১৫ ফেব্রুয়ারী এবং ১১ মার্চের নির্দেশ অনুযায়ী নির্বাচনি বন্ড সংক্রান্ত তথ্য স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার তরফে ১২ মার্চ কমিশনের হেফাজতে তুলে দেওয়া হয়েছে।


উল্লেখ্য,সুপ্রিম কোর্ট গত ছয় মার্চের মধ্যে নির্বাচনি বন্ড সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।কিন্তু সেই সময়সীমা পেরোনোর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করে।এতে স্টেট ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি গড়িমসি এবং তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলে সরব হয়।কেননা,এর মধ্যে লোকসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে যেতো।কিন্তু গত সোমবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্টেট ব্যাঙ্ককে ১২ মার্চ বিকেল পাঁচটার মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।এই নির্দেশের পরই দেশজুড়ে রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করে।
কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, এর ঠিক আগের দিন অর্থাৎ ১১ মার্চ সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সারা দেশজুড়ে বহু চর্চিত সিএএ কার্যকরের বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেয়। সাথে সাথে সারা দেশ জুড়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে।দেশ জুড়ে সংবাদমাধ্যমও সিএএ নিয়ে একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিরোধী দলগুলিও তীব্রভাবে সরব হয় ভোটের মুখে সিএএ কার্যকর করার বিরুদ্ধে।

আর এসব চাপানউতোরের মধ্যে একেবারেই চাপা পড়ে,যায় ‘নির্বাচনি বন্ড’ ইস্যু।সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে স্টেট ব্যাঙ্ক ১২ মার্চ নির্বাচন কমিশনে তথ্য জমা দিলেও এ নিয়ে তেমন কোনও আলোচনা বা মাতামাতি লক্ষ্য করা যায়নি।রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে জাতীয় সংবাদমাধ্যম এখনও মেতে আছে সিএএ নিয়ে।তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, আগামী ১৫ মার্চ বিকেল পাঁচটার মধ্যে নির্বাচনি বন্ড সংক্রান্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
২০১৮ সালে নির্বাচনি বন্ড চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার। খবরে প্রকাশ,এরপর থেকে ত্রিশ দফায় এই বন্ডের মাধ্যমে সাড়ে ষোল হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সহায়তা হিসেবে দিয়েছে কর্পোরেট সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা।সবটাই হয়েছে গোপনীয়তার মোড়কে।গত ১৫ ফেব্রুয়ারী সেই গোপনীয়তার মোড়ককে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে নির্বাচনি বন্ডকে বাতিল ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে পাঁচ মার্চের মধ্যে নির্বাচনি বন্ডের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্যদাতাদের পরিচয় প্রকাশ্যে আনার নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।কেন্দ্রের তরফে রাজনৈতিক দলগুলিকে নগদে আর্থিক সহায়তার বিকল্প হিসেবে নির্বাচনি বন্ড ব্যবস্থা চালু করা হয়।এই বন্ডের মাধ্যমে পরিচয় গোপন রেখে পছন্দের রাজনৈতিক দলকে আর্থিক সহায়তা করার কথা বলে কেন্দ্র।এই সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ঊর্ধ্বসীমা না থাকায় এই বন্ড একগুচ্ছ বিতর্কের জন্ম দেয়। অভিযোগ ওঠে, ব্যবসায়িক সুবিধা পাওয়ার জন্য কেন্দ্রের শাসক দলকে বিপুল আর্থিক সহায়তা করেছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি। বিরোধীদের দাবি ছিল, দেশের সাধারণ মানুষের জানা উচিত, রাজনৈতিক দলগুলিকে কারা আর্থিক সহায়তা করছে।কিন্তু এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে, আদৌ কি এদের পরিচয় জানা সম্ভব? যতটুকু খবর, এইজাতীয় বন্ডের কোনও ক্রমিক সংখ্যা কিংবা অন্যান্য কোনও পরিচয়সূচক তথ্য থাকে না। তাই বন্ডের ক্রেতা কোন দলকে কত অর্থ সহায়তা করেছেন সেই তথ্য এসবিআই-এর কাছে কি আছে?এর উত্তর পাওয়া যাবে আগামী ১৫ মার্চ।নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে কী তথ্য আপলোড করে, তার উপর নির্ভর করবে। আপাতত আরও দুদিন অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.