এইচআইভি সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ মুখ্যমন্ত্রীর!!

 এইচআইভি সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ মুখ্যমন্ত্রীর!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে এইচআইভি সংক্রম পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা।এদিন রবীন্দ্র ভবনে এইডসের উপর সচেতন সচেতনতামূলক আলোচনা চক্রে।বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, এইচআইভি সংক্রমণের প্রবণতা রাজ্যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এখনই নজর না দিলে পরিস্থিতি লাগামছাড়া হয়ে যেতে পারে।গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এইডস।

এইডস সংক্রমণের প্রবণতা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন যে পরিসংখ্যান মেলে ধরছেন তা রীতিমতো ভয়ংকর।অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাস পর্যন্ত ত্রিপুরায় এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৩৩০ জন।এর মধ্যে মহিলা ১ হাজার ৩৩ জন,পুরুষ ৪ হাজার ২৯৫ জন, তৃতীয় লিঙ্গ ২ জন।এর মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ৫৫৮ জন।প্রতি মাসে রাজ্যে ১৫০ থেকে ২০০ জন নতুন করে এইচআইভি সংক্রমিত হচ্ছেন।প্রেক্ষিতে আমি ভালো আছি এমনটা ভেবে বসে থাকলে চলবে না। প্রতিবেশী ভালো আছে কিনা সেদিকেও দেখতে হবে। প্রতিবেশী ভালো না থাকলে
এর প্রভাব নিজের উপরও পড়তে পারে। তাই এইডসের প্রসার রুখতে সবাইকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।এইডস ঠেকাতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গুরুদায়িত্ব নিতে বলেছেন তিনি।মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষক শিক্ষিকাদের উদ্দেশে বলেন, বিদ্যালয়ের ক্লাসে শুধু পুঁথিগত জ্ঞান প্রদানই নয়, ক্লাসে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন। ছাত্র-ছাত্রীদের সামাজিক পারিপার্শ্বিক বিষয় সম্পর্কে শিক্ষক শিক্ষিকাদের নজরদারি থাকা আবশ্যক। কোনও শিক্ষার্থী যদি বিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে অনুপস্থিত থাকে তাহলে প্রয়োজনে তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর করা দরকার। কেউ যদি স্বাভবিক জীবন থেকে সরে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন বা মাদক দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে শিক্ষকশিক্ষিকাদের উচিত তাদের চিহ্নিত করে নজরদারিতে রাখা।তিনি বলেন, শুধুমাত্র আরক্ষা প্রশাসন, শিক্ষা বা দপ্তর দিয়ে তা প্রতিহত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকা বা সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।এলাকার বা পাড়ায় কি হচ্ছে সেই বিষয়ে নিয়মিত নজরদারি চালানো দরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ক্লাসে প্রবেশ করে ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনশৈলীও অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে।স্কুল জীবনেই ছাত্ররা বিপথে পা বাড়ায়।নৈশাসক্ত হয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে জড়িয়ে যায়।মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,বিপথে যাওয়ার উৎসস্থল শনাক্ত করতে পারলেই অনেক ছাত্রছাত্রীকে ভুল পথে পা বাড়ানো থেকে বিরত করা যাবে।এদিন রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ২ নং প্রেক্ষাগৃহে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের ত্রিপুরা স্টেট এইডস্ কন্ট্রোল সোসাইটির উদ্যোগে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ ও প্রিন্সিপালদের নিয়ে এইচআইভি

/এইডসের উপর আয়োজিত সচেতনতামূলক আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়।সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে সপ্তাহে একদিন এইচআইভি/এইডস ও হেপাটাইটিস রোগ সংক্রান্ত বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজনের উদ্যোগ নিতে বলেছেন।তার কথায়, জনসচেতনতাই হচ্ছে এচআইভি / এইডস রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। তিনি বলেন, যারা এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা থাকা উচিত।কোনভাবেই তাদের তিরস্কার করা ঠিক নয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এইচআইভি/এইডস বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিতভাবে সচেতন করতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। কারণ ছাত্র ছাত্রীরাই দেশ, রাজ্যর সমাজের সম্পদ। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রয়োজনে বিদ্যালয়ের গন্ডির বাইরে গিয়ে সমাজ সচেতনতায় এগিয়ে আসতে হবে। কারণ শিক্ষক শিক্ষিকাদের কথা সমাজে সবচেয়ে বেশি মান্যতা পায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এইচআইভি/এইডস রোগ প্রতিরোধে রাজ্যে ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং এন্ড টেস্টিং সেন্টার, ফ্যাসিলিটি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং এন্ড টেস্টিং সেন্টার,পিপিপি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার এবং মোবাইল ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং অ্যান্ড টেস্টিং ভ্যান কাজ করছে।অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ব্রাহ্মিত কৌড় বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এইচআইভি/এইডস থেকে মুক্ত রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।তাই এ বিষয়ে জনসচেতনতা উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এইচআইভি/এইডস আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবেও ক্ষতি করে।

অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তা এনসি শর্মা বলেন, এইচআইভি/এইডস এই সামাজিক ব্যাধি থেকে ছাত্রছাত্রীদের দূরে রাখতে শিক্ষকশিক্ষিকাদের আরও বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ডা. সমর্পিতা দত্ত।ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা হেলথ সার্ভিসেস অধিকর্তা ডা. সঞ্জীব দেববর্মা।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা স্টেট এনএসএসসেলের স্টেট এনএসএস অফিসার প্রবাল কান্তি দেব।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.